নিজের চারপাশ। চোখে দেখা পৃথিবী। প্রতিদিনের বেঁচে থাকা। পাতায় পাতায় লিখে রাখার অভ্যাস ছিল তার। ভেবেছিল লেখিকা হবে। কিন্তু ১৫ বছরেই থেমে যেতে হয় তাকে। নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের নরকে ঝরে যায় এক সম্ভাবনার কুঁড়ি। তার নাম অ্যান ফ্রাঙ্ক। নিজের ডায়রির পাতায় অ্যান লিখেছিল, “আই ওয়াণ্ট টু গো অন লিভিং ইভেন আফটার মাই ডেথ!”
তার জীবনের গতি থেমে গিয়েছে যুদ্ধ আর নাৎসি আধিপত্যবাদের থাবায়। কিন্তু ১৫ বছরের সেই কিশোরী আজও পৃথিবীর সেরা লেখিকাদের একজন।
১৩ বছরের জন্মদিনে পাওয়া খুব পছন্দের নীল ডায়েরিটার সে নাম দিয়েছিল ‘কিটি’। খুঁটিনাটি সব কথা লিখে রাখত সেখানে।
চিঠি লিখতে ভালবাসত সে। মাঝে মাঝেই চিঠি লিখত তার দিদা অ্যালিস ফ্রাঙ্ক’কে। চিঠিগুলো তার ডায়রিরও আগে লেখা। সময়কাল ১৯৩৬ থেকে ১৯৪১।সেই সময় তারা থাকত হল্যান্ডে।
অ্যান ফ্রাঙ্কের অপ্রকাশিত চিঠি ও ডায়েরি একসঙ্গে ইংরেজিতে প্রকাশিত হল। ‘অ্যান ফ্রাঙ্ক: দ্য কালেকটেড ওয়ার্কস’। আমেরিকার ‘ব্লুমসবেরী’ থেকে প্রকাশিত। নতুন প্রজন্মের কাছে অ্যান ফ্রাঙ্কের লেখাকে আরও বেশি করে তুলে ধরতে সম্প্রতি গ্রাফিক নভেল আকারে প্রকাশিত হয়েছে অ্যান ফ্রাঙ্কের ডায়েরি। অ্যান ফ্রাঙ্ক ফন্ড ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। গ্রাফিক নভেলটিতে কমিক স্ট্রিপের ভঙ্গিতে অ্যানর ডায়েরির গল্প লিখেছেন আরি ফলম্যান। ইলাস্ট্রেশন করেছেন ডেভিড পলনস্কি।
ব্যক্তিগত ডায়রির পাতায় অ্যান লিখে রেখেছিল এক ভয়াবহ জীবনের কথা। তার লেখার ছত্রে ছত্রে উঠে এসেছিল হলোকস্টের ভয়। আতঙ্কে বিপর্যস্ত এক পরিবার প্রাণে বাঁচতে কীভাবে অন্ধকার বেছে নিতে বাধ্য হয় সেই কাহিনী।
তেরো বছর বয়সে ডায়েরি লিখতে শুরু করেছিল সদ্য-কিশোরী অ্যান। পনেরো বছর দু মাস বয়সী কিশোরী শেষ লেখাটা লিখেছিল তার ডায়েরির পাতায়। তার ঠিক সাত মাস পরে তার মৃত্যু হয়।
১৯৩৩ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি পার্টি জার্মানির ক্ষমতায় আসে। শুরু হয় বেছে বেছে ইহুদি নিধন। নাৎসি বাহিনী হল্যান্ড দখল। শুরু হল ইহুদিদের উপর অত্যাচার। বাদ পড়েনা অ্যানের পরিবারও। তারা তখন হল্যান্ডের বাসিন্দা।
১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ ফ্রাঙ্ক পরিবার আত্মগোপন করেছিল তার বাবার অফিসের এক গোপন আস্তানায়। কিন্ত শেষ রক্ষা হয়নি। পঁচিশ মাস পর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় জার্মানির বার্গেন-বেলজান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। সেখানেই অনাহারে মারা যায় অ্যানের মা এডিথ ফ্রাঙ্ক। অন্য এক শিবিরে মারা যায় অ্যান আর এক বোন মার্গো ফ্রাঙ্ক। টাইফাস জ্বরে মৃত্যু হয় অ্যানের।
অ্যানের পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য তার বাবা অটো ফ্রাঙ্ক। ফিরে আসেন অ্যানদের খাঁ-খাঁ বাড়িটাতে। অতীত হাতড়াতে গিয়ে হঠাৎ-ই খুঁজে পান অ্যানের সেই ডায়েরি। তিনিই প্রকাশ করেন অ্যানর সেই নীল ডায়েরি। ‘ দ্যা ডায়েরি অফ অ্যা ইয়াং গার্ল’। ১৯৪৭ সালে প্রথম প্রকাশ। মূল ভাষা ওলন্দাজ । পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালে সর্বপ্রথম ইংরেজিতে অনুদিত হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশে কমপক্ষে ৭০ টি ভাষায় বইটি অনুদিত হয়। সারা পৃথিবী জুড়ে ৩০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয়তম বইগুলির মধ্যে একটি।