১৯৭৩ সালে বাংলা নাটকে অভিনেত্রী নিয়োগ চালু হয়। কলকাতার সবথেকে ধনী ব্যাক্তি আশুতোষ দেব (ছাতু বাবু)দৌহিত্র শরৎ চন্দ্র ঘোষ চালু করেন বেঙ্গল থিয়েটার ১৮৭৩ সালে। তিনি মধুসূদন দত্তের কাছে অনুরোধ করেন তাঁর জন্য একটি নাটক লিখে দেওয়ার জন্য। মধুসূদন রাজি হন কিন্তু তার শর্ত ছিল নাটকের স্ত্রী চরিত্র গুলিতে নারীদের দিয়ে অভিনয় করাতে হবে। শরৎ চন্দ্র চার বীরাঙ্গনা যথা গোপাল সুন্দরী, জগত্তারিণী, এলোকেশী, শ্যামা সুন্দরীকে শর্মিষ্ঠা নাটকে অভিনেত্রী রূপে নিয়োগ করেন। এই সময়ের সাক্ষী ছিলেন অর্ধেন্দুশেখর, অমৃতলাল, গিরিশচন্দ্র, অমরেন্দ্র নাথ দত্ত, বিনোদিনী, তারাসুন্দরী, প্রভা দেবী, শিশির ভাদুড়ী। এছাড়াও মধুসুধন, দীনবন্ধু মিত্র, ক্ষীরপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, বিধায়ক ভট্টাচাৰ্য, প্রভৃতি নাট্যকার বাংলা নাটক কে সমৃদ্ধ করেছিল। ১৯৪৪ সালের প্রাক স্বাধীনতা কালে নাট্য জগৎ এ একটি বাঁক এসেছিল। বিশ শতকের চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি পেশাদারী মঞ্চে ক্ষয় শুরু হয়।
শিশির কুমার ভাদুড়ী তখন পেশাদারী মঞ্চের একমাত্র সম্বল। ১৯৪০ দশক, উত্তাল হচ্ছে দেশ। বিয়াল্লিশে ভারত ছাড়ো আন্দোলন। ১৯৪৩ ভয়ঙ্কর মন্বন্তর কলকতার মানুষ জন একটু ফ্যানের জন্য হাহাকার করছে। পঁয়ত্রিশ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এই মন্বন্তরের কারনে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কার্যকারণে গড়ে উঠেছিল গণনাট্য সঙ্ঘ। এ এক নতুন সাংস্কৃতিক সংগ্রাম আর এই সংগ্রাম থেকে জন্ম নিল এক নতুন নাট্য ধারার। এটি ছিল এক প্রকারের নাট্য আন্দোলন। এই গণনাট্য সঙ্গের প্রধান কর্তা বিজন ভট্টাচার্য। তিনি এলেন তার নবান্ন নাটকের মধ্য দিয়ে। বাংলা থিয়েটারের সে এক স্বর্ণযুগ। ১৯৪৪ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর নাট্য সঙ্ঘের প্রযোজনায় বিজন ভট্টাচার্য ও শম্ভূ মিত্রের যৌথ পরিচালনায় শ্রীরঙ্গম মঞ্চে অভিনীত হয়। নবান্ন বাংলা নাটকের ও মঞ্চের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন। বাংলা থিয়েটারে নবান্ন এনেছিল নতুন নাট্যভাষা। বিজন ভট্টাচার্য বলেন, দুর্ভিক্ষের মরা দেখে যে মানুষ মুখ ফিরিয়ে গেছে, নবান্ন নাটকটি দেখিয়ে তাদের চোখে আমরা জল ঝরাতে পেরেছি। যা আগে কখনো বাংলা থিয়েটারে হয়নি তিনি তাই করলেন। ইতিহাস, পুরাণ, দেব-দেবী নির্ভর কাহিনী থেকে বেরিয়ে এসে তিনি মঞ্চে নিয়ে এলেন শ্রমজীবী মানুষদের। পঞ্চাশ দশকে শম্ভূ মিত্রের বহুরূপী আমাদের রবীন্দ্রনাথ কে চেনালেন। ষাটে উৎপল দত্ত তার লিটল থিয়েটার গ্রূপের অঙ্গার নাটকের মধ্য দিতে আত্মপ্রকাশ করেন। ষাটে আসেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চাশ দশক থেকে তৈরী হল নানা গ্রূপ থিয়েটার। বহু ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলা থিয়েটার।