বাংলার রাঢ় অঞ্চলের এক অতিলৌকিক দেবী হলেন রংকিনী, বর্ধমান থেকে মেদিনীপুর অবধি একটি বিস্তৃত অঞ্চলের মানুষ এই দেবীর আরাধনা করে থাকেন। দেবী মূর্তি ভীষণা, রক্তলোলুপা, কথিত আছে দেবী নরমাংস প্রিয়, বাঁকুড়া জেলার লক্ষ্মীসাগর অঞ্চলে রংকিনী দেবীর প্রস্তর ভাস্কর্যেরও দেখা মেলে। পুরুলিয়ার বিভিন্ন পাড়ায় এমন লোকগাথা ছড়িয়ে রয়েছে যে রংকিনী ঢেঁকিতে মানুষ কুটতেন আর ক্ষুধা নিবৃত্তি করতেন, এক রাখাল বালক বুদ্ধি করে রংকিনী কে তাড়িয়ে দিয়েছিল। পুরুলিয়ায় এখনো দুটি পাথরের থামের দেখা মেলে যাদের নাম রংকিনীর ঢেঁকি। ধলভূম রাজবংশের কুলদেবী রঙ্কিনীর বিরাট পীঠ বর্তমান ঘাটশিলায়, রাজবংশের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত হওয়ার পর রঙ্কিনীর ওপর প্রভাব পরে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির। বাংলা ও তার পার্শ্ববর্তী যে সমস্ত অঞ্চলে রংকিনী পূজিত হন তা সাধারণত আদিবাসীদের বাসভূমি।
গবেষকরা মনে করেন রংকিনী আসলে একজন অনার্য দেবী, রাখাল কর্তৃক রংকিনী কে তাড়িয়ে দেওয়া এবং ভীত রঙ্কিনী দেবীর ধোপার পাটায় আশ্রয় নেওয়া কে অনেকেই জঙ্গল সরিয়ে আস্তে আস্তে বসতি বিস্তার করার প্রতীকী রূপ বলে মনে করেন। রঙ্কিনীর পূজার মধ্যেই মিশে রয়েছে আদিম সমাজের বৃক্ষপূজা বা প্রস্তর পূজার ধারা, ১৮শতকের মঙ্গলকাব্যের শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখিত হয়েছে দেবী রঙ্কিনীর নাম, তবে অনার্য সংস্কৃতিকে কোনোদিনই ভুলে যেতে পারেননি এই দেবীর ভক্তরা। সাধারণত ঘন জঙ্গলের মধ্যে কোনো মহুল গাছের পাদদেশেই দেখা মেলে রংকিনী দেবীর থানের। রঙ্কিনীর পুজোকে কেন্দ্র করে একসময় পালিত হতো বিঁধা পরব, দুটি মোষ কে ঠিক শিকার করার মতো করে হত্যা করাই ছিল সেই পরবের আচার। আদিবাসীরা বিশ্বাস করেন দেবী রংকিনী কে যদি তারা কোনোভাবে তুষ্ট করতে পারেন তাহলে তারা মুক্তি পাবেন যাবতীয় বিপদের হাত থেকে। জিতাষ্টমীর দিন পালিত হয় রংকিনী দেবীর বার্ষিক পার্বন, ওই দিনই আদিবাসীরা শিকার উৎসব পালন করেন।