তিনি ধী, স্থি, মেধাএবং প্রজ্ঞার দেবী। তিনি আলোকবর্ণা। তিমিরবিনাশী। শ্বেতবসনে ভূষিতা। কমলাসনা।
ঋকবেদেই প্রথম সরস্বতী শব্দের উল্লেখ মেলে৷ গায়ত্রী ছন্দে সূক্তটি ছিল-
পাবকা নঃ সরস্বতী বাজেভির্বাজিনীবতী। যজ্ঞং বষ্টু-ধিয়াবসুঃ।।
চোদয়িত্রী সূনৃতানাম্ চেতন্তী সুমতীনাম্। যজ্ঞং দধে সরস্বতী।।
মহো অর্ণঃ সরস্বতী প্রচেতয়তি কেতুনা ধিয়ো বিশ্বা বিরাজতি।।
সরস্বতী শব্দের দুটি অর্থ একটি ত্রিলোক্য ব্যাপিনী সূর্যাগ্নি, অন্যটি নদী। সরস্ + বতী = সরস্বতী, অর্থ জ্যোতির্ময়ী। আবার সৃ ধাতু নিস্পন্ন করে সর শব্দের অর্থ জল। অর্থাৎ যাতে জল আছে তাই সরস্বতী। ঋকবেদে আছে ‘অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী', সম্ভবত সরস্বতী নদীর তীরেই বৈদিক এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির উদ্ভব।
বেদ অনুসারে সরস্বতী নদীর দেবী। সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ জলবতী।
ঋকবেদের যুগে সরস্বতী ছিল অন্যতম প্রধান নদী। ভারতীয় সভ্যতায় সরস্বতী নদীর ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। চার হাজার বছর আগে সরস্বতী নদী তৎকালীন কুরুক্ষেত্র, বর্তমানে হরিয়ানার যমুনানগর জেলার ৪১টি গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হত।
সরস্বতী নদীর আদি উৎস হিমালয় পর্বতমালা। সেখান থেকে পাঞ্জাবের আম্বালা জেলার আদবদ্রী নামক স্থানে সমভূমিতে অবতরণ করেছিল। যে প্রস্রবণ থেকে এই নদীর উৎপত্তি তা ছিল প্লক্ষ্ণাবৃক্ষের কাছে, তাই একে বলা হত প্লক্ষ্ণাবতরণ।
সরস্বতী নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠে বৈদিক তীর্থ। যাগ-যজ্ঞ এবং নানা আচার অনুষ্ঠান পালিত হত। পূর্ব-পুরুষকে তর্পণ করা হত সরস্বতীর ধারায়।
কালক্রমে দেবী সরস্বতী এবং নদী সরস্বতী মিলেমিশে গেলেন। তিনি বিদ্যা, মেধা এবং কলাচর্চার দেবী হিসেবে পূজ্যা হয়ে ওঠেন।
বাগদেবীর শুভ্র বসন, কমলাসন এবং হংসবাহনা মূর্তি সরস্বতী নদীর সঙ্গে দেবীর সংযোগকে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তোলে।
ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সরস্বতী নদীর গভীর যোগ ছিল। কিন্তু এক সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণেই মৃত্যু হয় এই নদীর।