শ্মশান শুনলেই একটা ভূতুড়ে পরিবেশ মনের মধ্যে এমনি তৈরি হয়ে যায়। এখানে এখনো মরদেহ পোড়ানো হয়। অনেকেই মনে করেন, এখানে নাকি তেনারা প্রায়ই ঘুরে বেড়ান। অমাবস্যার রাতে এখনো নাকি নানান রকম অলৌকিক ঘটনা সেখানে ঘটে। তেমনই নিমতলা মহাশ্মশান।
মধ্য কলকাতার সব থেকে পুরনো এই ঘাটে বহু শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এত মানুষের শবদাহ হয়েছে যেখানে সেখানে অশরীরি আত্মার বিচরণ অতি স্বাভাবিক। অমাবস্যা রাত্রে নানাবিধ অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন অনেকেই, এমনটাই জনশ্রুতি। শোনা যায়, অঘোরী তান্ত্রিকেরা নাকি বিশেষ বিশেষ রাতে এই শ্মশানে আসেন। মৃতদেহের উপর বসে রক্তপান করেন।
ধর্মের মিলনস্থল ও নামের ইতিহাস
২৪শে আগস্ট। সেই তারিখ যেদিন আজ থেকে ৩২৮ বছর আগে, ১৬৯০ সালে, শেষবারের মত সুতানুটিতে পা রাখেন জোব চার্নক। দীর্ঘকাল ধরে কলকাতার জন্মদিন বলে প্রচার পাওয়া এই দিনটিকে ২০০৩ য়ে বাতিল করে কলকাতা হাইকোর্ট, সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রায় দেওয়া হয় যে কলকাতার কোনো জন্মদিন নেই এবং চার্নক মোটেও প্রতিষ্ঠাতা নন। তারপরেও বিতর্ক থামেনি, এমনকি এই বছর, ২৪শে আগস্টকে কলকাতার জন্মদিন বলে কোনোরকম প্রচার করলে সেই ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দিয়েছে সাবর্ণ পরিবার। অথচ এই দিনটা আদৌ জন্মদিন কিনা সেই বৃথা তর্কে সময় নষ্ট না করে ২৪শে আগস্টে চার্নকের সুতানুটি পদার্পণের ইতিহাস ঘাঁটলে বরং সামনে আসবে কিছু এমন তথ্য যার সাথে জড়িয়ে রয়েছে একটা মন্দির, একটা মসজিদ আর একটা শ্মশানের গল্প যা চিনতে সাহায্য করে আজকের কলকাতার একটা সুপ্রাচীন জায়গাকে যার নাম নিমতলা!
শেক্সপীয়ার লিখে গেছিলেন 'What's in a name?' কিন্তু ইতিহাসের ক্ষেত্রে কথাটা যে একেবারেই খাটে না সেটা ইতিহাস নিয়ে যারা চর্চা করেন তারা বিলক্ষণ জানেন। যেকোনো জায়গার নামের পিছনে লুকিয়ে থাকে একটা অজানা গল্প আর সেইটা খুঁজে বের করাতেই আনন্দ। অধিকাংশ সময়ে আবার গল্পটা এক নয়, একাধিক। তখন, কোনটা বেশী যুক্তিসঙ্গত সেই নিয়ে তর্কটা চলতেই থাকে।
কিন্তু যদি সবকটা গল্প একে অন্যের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গিয়ে থাকে যে জট ছাড়ানো মুশকিল তখন ইতিহাসের পাতা থেকে সূত্র খুঁজে বের করে মগজাস্ত্র খাটানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। আজকের সাতকাহন তাই সেইরকমই একটা জট ছাড়ানোর চেষ্টা।
শুরু করি প্রশ্নগুলো দিয়ে...
নিমতলা বললেই আগে মাথায় আসে শ্মশান। খুব স্বাভাবিক। জীবনে অন্তত একবার প্রিয়জনকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে এখানে আসেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখন শ্মশান যেহেতু নদীর ধার ছাড়া হয় না তাই নিমতলা কিন্তু শুধু শ্মশান নয়, বরং শ্মশান ঘাট। কিন্তু কেন নিমতলা? প্রচলিত কিংবদন্তী বা কলকাতার ইতিহাস নিয়ে লেখা বেশ কিছু বই বলছে ঘাটের ধারেই থাকা একটা বিরাট নিমগাছ থেকে এই নাম। কিন্তু কোথায় ছিল সেই নিমগাছ? এখনও আছে কি? পরে আসছি সেই গল্পে।
জোব চার্নক, ব্রিটিশ কলকাতার তথাকথিত রূপকার, ১৬৯০ সালের ২৪শে আগস্ট নামেন সুতানুটির ধারে, রোজনামচা এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাগজ বলছে তিনি লোকজন সমেত আশ্রয় নেন এক নিমগাছের তলায়। এই নিমগাছই কি তবে নিমতলার সেই গাছ?
জোড়াবাগান থেকে নিমতলা ঘাট স্ট্রীট ধরে গঙ্গার দিকে যেতে শ্মশানের ঠিক আগে চক্ররেলের লাইন, রেললাইনেরও অনেকটা আগে ডানদিকে এক লাল রঙের মন্দির, আনন্দময়ী কালী মন্দির। কালী বিগ্রহ কি নামে পরিচিত জানেন? শ্মশানকালী! কিন্তু শ্মশান তো বেশ খানিকটা দূরে। তবে কি শ্মশান আগে ওখানে ছিল?
জট ছাড়ানো শুরু করার আগে শেষ চমকটা বলি। আনন্দময়ী কালী মন্দিরের ঠিক আগেই ডানদিকে নিয়ামৎতুল্লাহ্ মসজিদ। নিমতলা আর নিয়ামৎতুল্লাহ্ প্রায় একই রকম শুনতে নয় কি? তাহলে নিয়ামৎতুল্লাহ্ থেকেই কি নিমতলা?
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আগে পিছোতে হবে ৩০০ বছরেরও বেশী। আজকে আপনি গঙ্গা যেখানে দেখছেন, চার্নকের সময়ে গঙ্গা কিন্তু সেইখানে ছিল না, বইতো আরও প্রায় দুশো মিটার ভিতর দিয়ে, অর্থাৎ আজ যেখানে আনন্দময়ী কালী মন্দির সেইখান দিয়ে। চার্নকের কলকাতায় পদার্পণের ইতিহাস বলছে তিনি নেমেছিলেন সুতানুটি ঘাটে যার পরে নাম হয় হাটখোলা ঘাট। এবার একটু চোখ বোলানো যাক মার্ক উডের তৈরি ১৭৮৫ সালের কলকাতার ম্যাপে। দেখা যাবে যে সুতানুটি আর হাটখোলা কিন্তু আদতে একই ঘাটের নাম এবং এর প্রায় তিনশো মিটার দক্ষিণে একটি ঘাটের নাম নিমতলা ঘাট। অর্থাৎ সুতানুটি ঘাটের কাছে চার্নকের আশ্রয়স্থল নিমগাছ আর নিমতলা ঘাটের ধারের নিমগাছ এক হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আরও একটা সূত্র আছে, এই নিমতলা ঘাট স্ট্রীটের উপরেই কিন্তু হাটখোলা দত্ত বাড়ি। সুতরাং নিমতলা এবং হাটখোলা যে প্রায় পাশাপাশি এলাকা সেই নিয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই।
স্থানীয় কিংবদন্তী অনুযায়ী, বর্তমান আনন্দময়ী কালী মন্দির বয়সে নবীন হলেও বিগ্রহের বয়স প্রায় ৩৫০ বছর। গঙ্গার ধারের শ্মশানে নাকি পূজিত হতেন দেবী, তাই শ্মশানকালী। কিন্তু এই শ্মশানই কি নিমতলা শ্মশান? কলকাতার ইতিহাস অন্তত তাই বলছে। বিগত ৩০০ বছরে নিদেনপক্ষে ৩ বার স্থান পরিবর্তন হয়েছে নিমতলা শ্মশানের। এখন আমরা যা দেখছি তা হল চতুর্থ সংস্করণ। চার্নকের সময় গঙ্গা আজকের থেকে প্রায় ২০০ মিটার ভিতর দিয়ে বইলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়ে আসে নদী। ১৮২৩ নাগাদ লটারি কমিটি তৈরি করে স্ট্র্যান্ড রোড, ফলে প্রথমবারের জন্য স্থান পরিবর্তন করে শ্মশান, তৈরি হয়, আজ যেখানে চক্ররেলের লাইন, আন্দাজ তার পাশেই পূর্বদিকে, ১৮২৮-এর মার্চ নাগাদ। ১৮৭৫-এ পোর্ট কমিশনের আপত্তিতে, রেল চলাচলকে বাধামুক্ত করার জন্য, আরও পশ্চিমে সরে শ্মশান। প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে, ম্যাকিনটশ বার্ন কোম্পানি নির্মাণ করে তৃতীয় নিমতলা শ্মশান, যার ভগ্নাবশেষ আপনি আজও দেখতে পাবেন গঙ্গার ধারে। আটের দশকে যোগ হয় বৈদ্যুতিক চুল্লি এবং শেষ অবধি ২০১৫ সালে সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় সামান্য দক্ষিণে তৈরি নতুন বৈদ্যুতিক চুল্লিযুক্ত নিমতলা মহাশ্মশান।
তাহলে নিমতলা ঘাট বা নিমতলা শ্মশানের নামকরণের উৎস যে নিমগাছ সেটা কোথায়? 'Chuttanuttee Diary and Consultations' অনুযায়ী ১৬৯০ সালের ২৪শে আগস্ট চার্নকের জাহাজের ক্যাপ্টেন ব্রুক সুতানুটির কাছে একটি প্রকাণ্ড গাছের কাছে নোঙর করেন। এই নিমগাছটি ছিল বর্তমান আনন্দময়ী কালীবাড়ির সামান্য উত্তরে যেটি ১৮৮০ নাগাদ আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
কিন্তু শুধুই কি নিমগাছ থেকেই জায়গার নাম নিমতলা নাকি আছে অন্য ব্যাখ্যাও?
জোড়াবাগান চৌমাথা থেকে নিমতলা ঘাট স্ট্রিট ধরে গঙ্গার দিকে যেতে আনন্দময়ী কালী মন্দিরের ঠিক আগেই ডানদিকে পড়বে একটি মসজিদ, রাস্তা থেকে প্রায় দোতলা উচ্চতায়, নয় গম্বুজবিশিষ্ট। নাম নিয়ামৎতুল্লাহ্ মসজিদ। ১৭৮৪ সালে, স্থানীয় জমিদার মহম্মদ রমজান আলি এই মসজিদ নির্মাণ করিয়েছিলেন তার পূর্বপুরুষ নিয়ামৎতুল্লাহ্র নামে। একটু কাছে গিয়ে ফুটপাথে উঠে মসজিদের ভিতের ধারের দোকানগুলো খেয়াল করলে দেখবেন যে দোকানের ছাদগুলো সমান নয়, বরং অর্ধবৃত্তাকার, ঠিক যেন মসজিদের তলায় কোনো গোপন কক্ষের প্রবেশপথ! লোকজনদের জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারবেন যে তারাও শুনেছেন, আগে নাকি মসজিদের তলা দিয়ে গঙ্গায় যাওয়ার সুড়ঙ্গ ছিল। মিথ্যে নয়, রমজান আলির পূর্বপুরুষ নিয়ামৎতুল্লাহ্ নির্মাণ করিয়েছিলেন একটি ঘাট, পরবর্তীকালে ঠিক তার ধারেই তৈরি হয় মসজিদ। এই সুড়ঙ্গটি ছিল আসলে ঘাটে যাওয়ার পথ, যা বর্তমানে বন্ধ। মসজিদ অত উঁচুতে তৈরি করার কারণও হল সেই গঙ্গাই, যাতে জোয়ারের জলে প্লাবিত না হয় ধর্মস্থান।
এখন কয়েক শতক পরে নিমগাছ থেকে নাম নিমতলা নাকি নিয়ামৎতুল্লাহ্ ঘাট বা মসজিদ থেকে অপভ্রংশ হয়ে নাম নিমতলা সেই প্রশ্নের উত্তরও হারিয়ে গেছে কালের গর্ভেই।
তবে নিয়ামৎতুল্লাহ্ ঘাট নিয়ে প্রচলিত আছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বিস্ময়কর কিংবদন্তী। এই ঘাট নাকি ব্যবহার করতেন হিন্দু ও মুসলিম, দুই সম্প্রদায়েরই মানুষ। একদিন কিছু ব্রাহ্মণ ঘাটে পুজো করার সময় কয়েকজন মুসলিম বাচ্ছা ছেলের স্নানের জল ছিটকে এসে লাগে তাদের গায়ে। নিজেরা 'অপবিত্র' হয়ে গিয়েছেন এই কুসংস্কার থেকে ব্রাহ্মণরা বলাবলি করতে থাকেন যে তারা আর এই ঘাট ব্যবহার করবেন না। এই কথা রমজান আলির কানে গেলে তিনি রীতিমত সেপাই বসিয়ে এই ঘাট শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্যই নির্দিষ্ট করে দেন। নিজের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে এই নির্দেশ সত্যিই অভূতপূর্ব!
কীভাবে তৈরি হল শ্মশান ?
রানী রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাস নিমতলা শ্মশানে গঙ্গাযাত্রীদের থাকার জন্য তৈরি করে দিয়েছিলেন একটি পাকা ঘর, ১৮৯৫ সালে কাঠের ব্যবসায়ী গিরিশচন্দ্র বসু শবযাত্রী ও মুমূর্ষ গঙ্গাযাত্রীদের বর্তমান নিমতলা শ্মশানের দক্ষিণে তৈরি করে দিয়েছিলেন দোতলা পাকা ঘর৷ কিন্তু এই গঙ্গাযাত্রী কারা ছিলেন আসুন সেই ইতিহাসের দিকে একটু আলোকপাতের চেষ্টা করা যাক৷
বলতে এতটুকু দ্বিধা না রেখে বলা সমীচীন, সেদিনের গঙ্গাযাত্রীদের জীবনের শেষের কয়েকটি দিন ছিল অত্যন্ত বেদনাময়, বিরহের, নিশ্চিতভাবে ব্যথিত করবে সংবেদনশীল মানুষের হৃদয় কে৷ সেযুগে মুমূর্ষেদের কার্যত নিজের বাড়িতে মরতে দেওয়া হত না৷
ভাবা যায় আজকের দিনে!
বাড়িতে কেউ মারা গেলে তখন মনে করা হত দুর্ভাগ্যের ও অধর্মের কাজ৷ যদি কেউ বাড়িতে মারা যেতেন মনে করা হত সে পাপী, তার আত্মার সদগতি হবে না, অতএব মৃতপ্রায় মানুষকে একপ্রকার ঘটা করে গঙ্গাযাত্রা করানো হত, এবং ওই মৃতপ্রায় মানুষকে বলা হত গঙ্গাযাত্রী৷ এইরকম মুমূষুর্কে প্রতিদিন জোয়ারের সময় আত্মীয় স্বজনরা ঘর থেকে বের করে গঙ্গার জলের ভেতরে দেহের বেশ অনেকটা অংশ ডুবিয়ে দিতেন, আর সেই প্রথার নাম ছিল অন্তর্জলী করা৷
মুমূর্ষু যদি ওই অবস্থায় মারা যেতেন তবে মনে করা হত সে বড়ই ভাগ্যবান সোজা স্বর্গে যাবে৷যদিও দিনের পর দিন অন্তর্জলী করার ফলে একদিন সত্যিই সেই মুমূর্ষু মানুষটি পৃথিবী থেকে বিদায় নিতেন৷তারপর মুখাগ্নি করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হত মৃতদেহ, বহুক্ষেত্রে মুখাগ্নির সুযোগ মিলত না, জোয়ারের জলে ভেসে যেত মৃত সেই মানুষের শরীর। পুণ্য লাভের আশায় অনেক বড়লোক গঙ্গার ধারে মুমূর্ষু গঙ্গাযাত্রীদের জন্য ঘর তৈরি করে দিতেন। আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সঙ্গে নিমতলা ঘাটের সম্পর্ক বেশ অনেকদিনের পুরনো প্রায় দু'শো বছরের ইতিহাস৷ 'কলিকাতা দর্পণ'-এর লেখক রাধারমণ মিত্রের তথ্য অনুযায়ী নিমতলা শ্মশান তৈরি হয়েছিল ১৮২৮ সালে, এবং ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে এই শ্মশানে মৃতদেহ পোড়ানো শুরু হয়৷ এরপরে অবশ্য
১৮৫৭ সালে মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনাররা ৬১৮০ টাকা খরচ করে নিমতলা শ্মশানঘাটের বেশ অনেকটা উন্নতি করেছিলেন যদিও ওই ৬১৮০ টাকার মধ্যে বাবু রাজনারায়ণ দত্ত নিজে দিয়েছিলেন আড়াই হাজার টাকা৷ এখন যেখানে দেবী আনন্দময়ীর মন্দির আছে আগে সেখানেই ছিল নিমতলা শ্মশানঘাট৷ মন্দির সেইসময় তৈরি হয়নি, শ্মশানের পাশে ছিল গঙ্গা, স্ট্র্যাণ্ড রোড তখন তৈরি হয়নি, স্ট্র্যাণ্ড রোডের ওপর দিয়ে বয়ে যেত গঙ্গা৷
দেবী আনন্দময়ীর মূর্তি অনেক প্রাচীন,'কলিকাতা সেকালের ও একালের' লেখক হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একজন মোহন্ত গঙ্গাতীরে সর্বপ্রথম এই মূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেন,দেবী তখন এক পর্ণকুটীরের মধ্যে থাকতেন৷
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অবতারণা করা প্রয়োজন, বাংলার ছোটলাট সিসিল বীডন নিমতলা ও কাশী মিত্রের শ্মশান দুটি টালির নালার দিকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন,কিন্তু বাগ্মী রামগোপাল ঘোষ সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এমন যুক্তিপূর্ণ এবং ওজস্বী বক্তৃতা করেছিলেন প্রস্তাব নাকচ হয়ে গিয়েছিল,সেইজন্য বর্তমান ঘাটের দেওয়ালে রামগোপাল ঘোষের নাম লেখা আছে বলা আছে তাঁর চেষ্টাতে নিমতলা শ্মশানঘাট স্বস্থান থেকে বিচ্যুত হয়নি৷
১৮৭৫ সালে রেল চলাচলের সমস্যার জন্য বর্তমান জায়গায় নতুন নিমতলা শ্মশান তৈরি হয় খরচ হয় তিরিশ হাজার টাকা, এর মধ্যে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিল পোর্ট-কমিশনাররা বাকি ৫ হাজার জাস্টিসরা৷
উল্লেখ্য ১৮৬৭ সালে কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটির রেললাইন খোলবার জন্য ঘাটের কাজকর্ম বন্ধ করা হয় এবং ঘাট পোর্ট কমিশনারদের বিক্রি করা হয় ১৮৭৪ সালে৷
অবশ্য তার আগে ১৮৬৫ সালে নদীর ধারে শবদাহ যথাসম্ভব কম আপত্তিজনক করা যায় কীভাবে উদ্ভাবন করার জন্য তৈরি কমিটির সদস্য রামগোপাল ঘোষের চেষ্টায় সাধারণ মানুষের থেকে ৩৫ হাজার টাকা তুলে জাস্টিসদের চেয়ারম্যানের হাতে দেওয়া হয়৷ ওই টাকায় নিমতলা শ্মশান আরও বড় হয়, নদীর দিক দেওয়াল দিয়ে ঘেরা হয়েছিল ডোমদের ঘর তৈরি হয়েছিল৷ বাংলার অনেক প্রখ্যাত মানুষের পবিত্র চিতাভস্মে নিমতলা ঘাট আজ মানুষের কাছে এক মহাতীর্থ, নিমতলা সেইজন্য কেবল শ্মশান নয় মহাশ্মশান, আমাদের সংস্কৃতির এক ঐতিহ্য৷
(নিবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব)