শহরে উড়ে বেড়ানো কথারা বলে, এই স্টেশনেই নাকি মেট্রোর ৭০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। রাত সাড়ে দশটার শেষ ট্রেনের অনেক চালক ও যাত্রীরা নাকি ওই সময়ে বিভিন্ন ছায়ামূর্তিকে রেললাইন দিয়ে খানিক হেঁটে যাওয়ার পরে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখেছেন। এটি হল রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন।
এটি কলকাতার এক নামকরা মেট্রো স্টেশন। ‘সুইসাইড স্টেশন’ বললেও খুব ভুল হবে না। প্রচুর ভৌতিক গল্প আছে স্টেশন জুড়ে। বহু আত্মহত্যার খবর উঠে এসেছে সরোবর স্টেশন ঘিরে। শোনা যায় রাতের শেষ মেট্রো যা কিনা সাড়ে দশটার রবীন্দ্র স্টেশন মেট্রোয় পৌঁছয়, তাতে নাকি ভূত চড়ে, এবং সে ভূত রেললাইনেও হেঁটে চলে বেড়ায়!
দিনে মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও প্রায়ই ঘটে এখানে। রাত্রে এই স্টেশন থেকে শেষতম মেট্রোতে চড়েছেন যাঁরা তাঁরা অনেকেই দাবি করেন, ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে প্রায়-নির্জন স্টেশনে তাঁরা বিভিন্ন ছায়ামূর্তিকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। তাই গা ছমছমে স্থানগুলির মধ্যে এটিও অন্যতম।
বেশিদিন নয়, রবীন্দ্র সরোবর স্টেশন থেকে একটি বাতানুকূল ট্রেন ছেড়ে যখন এসপ্ল্যানেড স্টেশনের দিকে আসছিল, তখন ট্রেনের চালক লাইন ধরে এক জনকে দৌড়তে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে সুড়ঙ্গেই ট্রেনটি থামিয়ে দেন তিনি। পরে সেই লোকটি সরে গেলে তিনি ফের ট্রেন চালাতে শুরু করেন। এর পরেই কেন সুড়ঙ্গে ট্রেন অতক্ষণ ট্রেন দাঁড়িয়ে রইল, তা নিয়ে হইচই শুরু হয়। মেট্রোর কর্তারা এর ব্যাখ্যা দেন যান্ত্রিক ত্রুটি হিসেবে। কেউ কেউ আবার বলেন, চালক ভূত দেখেছেন।
কর্তা-কর্মীদের একাংশ বলেছিল সুড়ঙ্গে লোক ঢুকেছে। কোনও কর্মী সুড়ঙ্গে কাজ করার সময়ে তাঁর মোবাইল ফেলে এসেছিল। তা খুঁজতেই তিনি ভিতরে গিয়েছিল বলে অনেকে দাবি করে। অবশ্য রেলের নিয়ম অনুযায়ী, মেট্রোর তৃতীয় লাইনে যতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকবে, ততক্ষণে কেউ সুড়ঙ্গে যেতে পারবেন না। প্রশ্ন ওঠে লাইনে বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় কোনও স্বাভাবিক মানুষ কীভাবে ওখানে যেতে পারে! ওইদিন ট্রেনের সামনে এসে পড়ায় চালক বাধ্য হন ট্রেন থামিয়ে দিতে। আর এই খবর বাইরে চলে আসতেই তড়িঘড়ি দায় এড়াতে খবরটিকে যান্ত্রিক ত্রুটির গল্প বানিয়ে দেন মেট্রো-কর্তারা। প্রশ্ন ওঠে তবে কি দিনে দুপুরেই ভূতের দর্শন পেলেন চালক।
মেট্রোর লাইনে কী দেখেছিলেন চালক, তার তদন্ত রিপোর্ট এখনও আসেনি মেট্রো-কর্তৃপক্ষের কাছে।
তাই স্বাভাবিকভাবেই রব ওঠে, মেট্রো স্টেশনে ভূত রয়েছে। আর তা যুক্তিসঙ্গত করতেও বিশেষ বেগ পেতে হচ্ছে না। কারণ, ইন্টারনেটে খুঁজলেই দেখা যাবে কলকাতার ভুতুড়ে জায়গাগুলির মধ্যে একটি হল রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন।
শেষ রাতের ট্রেনের যাত্রীরা প্রায়শই ছায়া মূর্তি দেখেন এবং অস্পষ্ট কাউকে মুহূর্তে অদৃশ্য হওয়ার দাবি করেছেন অনেকে। এমনকি কেউ কেউ কোচের ভিতরে দেখেছেন
চোখের সামনে মানুষকে নিখোঁজ হয়ে যেতে, এবং কখনও কখনও অনেকেই স্টেশন চত্বরে বাচ্চাদের স্পষ্ট বিলাপ শুনেছেন।
স্টেশনের কয়েকজন পরিচারক এবং ট্রেন চালকরাও দাবি করেছেন তারা মাঝে মাঝেই দেখেন কেউ উদ্বেগজনক লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই পা হীন অশরীরীকে ট্র্যাকের উপর দিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। স্থানীয়রা রাতের দিকে এই উদ্ভট স্টেশনটি এড়িয়ে যান এবং শেষ ট্রেনটি রাত ১০:২৪ এ। কেউ ভুল করেও ওঠেন না ওই সময়ের মেট্রোতে।
(বক্তব্য নিবন্ধকারের ব্যক্তিগত)