ভূত মানেই অদ্ভুত। ভূত শব্দটার মধ্যে রয়েছে অজানা রহস্য। গা ছম ছম করা ভাব। অদৃশ্য, অলৌকিক, কাল্পনিক অবয়বটি কি আসলেই আছে! অনেকেই মনে করেন ভগবান আছে মানে ভূতের অস্তিত্বও সম্ভব। তবে একটু গভীরভাবে ভাবলে হয়তো মনে হবে এর কোনো অস্তিত্বই নেই। এটা গুরুত্বপূর্ণও নয়। কিন্তু এসব প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটিজ খুলে দিচ্ছে অজানা রহস্যের দরজা। ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন বহু পুরনো বাড়িতে রাত নামলে সত্যিই নেমে আসে অদ্ভুত নীরবতা। তেমনই কলকাতার পৌরাণিক ইতিহাসে বহু প্যারানরমাল ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়।
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী একাধিক বড় বড় বাড়িতে এখনো যাঁরা রাতে পাহারায় থাকেন, তাঁরা ওই সব চিহ্নিত জায়গার নাম শুনলেই রীতিমতো ওপরওয়ালার নাম জপতে শুরু করেন। তাদেরই অন্যতম পুতুল বাড়ি। কলকাতা শহরের আহিরিটোলার বাড়ি নিয়ে রহস্য আজও সবার মুখে মুখে। বাংলা সাহিত্যে পুতুলের বাড়িটি নিয়ে সত্যজিৎ রায় ও লীলা মজুমদারের কিছু ভয়ঙ্কর গল্প রয়েছে। এটা কলকাতা শহরের সবচেয়ে রহস্যজনক স্থান। অনেকে এখনও এই বাড়িতে থাকলেও সন্ধ্যার পর নাকি দোতলা বা তিনতলায় ওঠার সাহস পান না। পুতুলরূপী মহিলা অতৃপ্ত আত্মা নাকি ঘুরে বেড়ায় এ বাড়ির আনাচে-কানাচে। গভীর রাতে তো বটেই এমনকি ভরদুপুরেও কিছু অশরীরীর উপদ্রব রয়েছে এখানে। এর নেপথ্যে আসলে কি!
গল্প ১- এক সময় বাড়িটিতে এক বড়লোক মনিব বাস করতেন। বাড়ি দেখাশোনায় কয়েকজন দাসীও কাজ করত। মনিব দাসীদের সঙ্গে জোরপূর্বক যৌনসম্পর্ক করতেন। কিছু দাসী মনিবের এ অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় তাদের হত্যা করা হয়। হত্যার পর বাড়ির পেছনে তাদের লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল। এরপর কতকাল পার হলো কিন্তু আজ অবধি মাঝে মাঝে রাতে মেয়েলি কণ্ঠের অশরীরীদের কান্নার শব্দ শোনা যায়। স্থানীয়দের ধারণা মনিবের এ পাপের কারণে এখনো পুতুলবাড়ীতে অশরীরী আত্মার আনাগোনা।
রহস্যময় পুরোনো ও ভৌতিক বাড়ী সম্বন্ধে অনেকেরই ভীষন আগ্রহ আছে। কোলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের ভৌতিক জায়গাগুলো সম্পর্কে গুগল বা ইউটিউবে সার্চ করতে বসলে প্রথমেই নাম আসে "পুতুলবাড়ী"র। এই রহস্যময় বাড়ীটি নিয়ে প্রচুর লেখালেখি ও ভিডিও রয়েছে যদিও এই বাড়ীটিতে ভুতের অস্তিত্ব আছে কি নেই সে ব্যাপারে কেউ প্রমান দিতে পারেনি। অনেক বলেন তারা রাতের দিকে এই বাড়ির আশেপাশে ছায়ামূর্তি দেখেছেন বা বিভিন্ন সময়ে নানারকম শব্দ শুনতে পেয়েছেন।
এই বাড়ীটি সম্ভবত ১৮ শতকের দিকে রোমান স্থাপত্যের অনুকরনে বানানো। বাড়ীর দেওয়ালে পুতুলের ন্যায় মুখ খোদাই করা আছে, সম্ভবত এই কারনেই বাড়ির নাম পুতুলবাড়ি। এই বাড়িটি নিয়ে মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই, এবং মুখে মুখে অনেক ভৌতিক গল্প প্রচলিত রয়েছে।
গল্প ২- শোনা যায় এই বাড়িতে আগে নাচগানের আসর বসত ও বড়বাবুরা মহিলাদের নিয়ে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতেন তারপর তাদের মেরে ফেলা হত, তাঁদের অতৃপ্ত আত্মা নাকি ঘুরে বেড়ায় এখনও। প্রথম ও দ্বিতীয় গল্পের মিল রয়েছে। একটু এদিক ওদিক।
গল্প ৩- কেউ কেউ বলেন বাড়ির মালিকের মেয়ের নাকি প্রচুর পুতুল ছিল, যেগুলি এখনও ৩ তলার একটি ঘরে নাকি রাখা আছে। ওই পুতুলের মধ্যেই অতৃপ্ত আত্মার বসবাসের কথা শুনে বাড়ীর মালিক পুতুলগুলো ফেলে দিতে যান, পরেরদিন মেয়ে ও মেয়ের মাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
বাড়ির নামকরনের এটাও একটা কারন বলে শোনা যায়।। সূর্যাস্তের পর এই বাড়ীতে ঢোকা বারণ, আর ৩ তলা সারাদিনই বন্ধ থাকে কারন প্রবলেমটা নাকি ওই ফ্লোরেই..নিচের তলায় কিছু ভাড়াটিয়া থাকেন, ওপরের তলায় কেউ থাকে না। যদিও ভুতের অস্তিত্বের প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি, কলকাতা কর্পোরেশন থেকে বাড়িটিতে ভুতের অস্তিত্ব গুজব বলে একটি বোর্ডও লাগানো আছে। এই বাড়ীতে ঢোকা অত সহজ নয়, বাড়ীর ভাড়াটিয়াদের পছন্দ নয় অনধিকার প্রবেশ, তাই গেলেই ঢুকতে পারবেন সেটা বলা ঠিক হবে না..তবে যদি ঢুকতে পারেন তাহলে অবশ্যই একটা পুরনো বাড়িতে আলো আঁধারি পরিবেশে একটা গা ছমছমে ব্যাপার অনুভব করতে পারবেন।