রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটবেলায় প্রথাগত স্কুল শিক্ষা নেননি। স্কুলের ধরা-বাঁধা গতের শিক্ষা তাঁর একেবারেই পছন্দের ছিলনা। বাড়িতেই দেশীয় তথা বিদেশী যাবতীয় রকমের শিক্ষা পেয়েছিলেন তিনি গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে। সেই শিক্ষাকে নিজের আহুত জ্ঞানের মাধ্যমে জড়িত করে সৃষ্টির চুড়োয় পৌঁছেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, তৎকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। যার ফলে তিনি পরবর্তীতে উপলব্ধি করেছিলেন, শিক্ষার সঠিক পথ খুঁজতে হবে। এই খোঁজ-এর ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিদ্যালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরে ১৯২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল বিশ্বভারতীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বিশ্বভারতী আজকে আন্তর্জাতিক জগতে স্বীকৃত এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে এর সূচনা হয়েছিল, আশ্রমের ছোট বিদ্যালয় ব্রহ্মবিদ্যালয় হিসেবে। এখানকার পাঠ্যসূচি, পাঠদান প্রকল্প, পাঠপ্রক্রিয়া সবকিছুই ছিল আলাদা। ভারতবর্ষের প্রাচীনকালের আশ্রমিক শিক্ষা, তপোবনের আদর্শ, গুরুগৃহে থেকে বিদ্যা অর্জনের পদ্ধতি এগুলি নিয়ে বিশ্বভারতী সেই সময় আপন খেয়ালে একটু একটু করে আজকের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। যে বিদ্যালয় ছিল নিজের মত করে নিজস্ব ভঙ্গিতে পঠন পাঠন তথা সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থান। কবির আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সম্মতি ও আশীর্বাদ ছিল। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় প্রবল আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছিল। সেই সময় তিনি নিজস্ব সঞ্চয় এবং স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর গয়না বিক্রি করে সেই সংকট থেকে পরিত্রান পেয়েছিলেন। সেখানে প্রথম থেকেই লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগীত, চিত্রকলা, নাট্যাভিনয়, শরীরচর্চা, খেলাধুলো, হাতের কাজ, পল্লীসেবা এবং স্বাক্ষরতার অভিযান যুক্ত করেন। প্রকৃতি ও মানুষের মেলবন্ধন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞান সাধনা, শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের মেলবন্ধন, পুঁথিগত ও পরিবেশগত শিক্ষার তুল্যমূল্য বিচার প্রভৃতি নিয়ে দৃষ্টিপাত করা হত। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল, তার একমাস পরই শান্তির বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে কবিগুরু বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২৩ ডিসেম্বর। এ বছর তারই শতবর্ষ পূরণ হবে।