নাটকের উৎপত্তি হয়েছে অনুকরণ করার সহজ প্রবৃত্তি থেকে। সাধারণত মানুষ অপর মানুষের কথা, ভাব ভঙ্গি নকল করিতে ভালোবাসে। মানুষের এই ভালোলাগাটা আদিম, অসভ্য যুগ থেকেই সূচনা হয়েছে। আদিম যুগে পূর্ণাঙ্গ নাটকের জন্ম হয়নি কিন্তু তাদের অনুকরণের প্রচেষ্টা সংগীত ও নৃত্যের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেত। ইতিহাসের প্রাচীনতম কলাটি হল নৃত্য কলা। আদিম কালে নৃত্যের মধ্য দিয়েই ধর্মভাব, হৃদয়ভাব প্রকাশ পেত। ক্রিয়া কর্ম অনুষ্ঠান উদযাপন করা হত। তাল, লয়, সংগীত প্রভৃতি এই নৃত্য সৃষ্টিতে সাহায্য করতো। এই নৃত্যই ধীরে ধীরে অভিনয় পরিণত হয়েছে। নৃ ধাতু থেকে নাটক শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। তাই নাটকের উৎপত্তি যে নৃত্য থেকেই এসেছে তা আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। প্রাচীন কালে ধর্মসাধনা ও কলাচর্চার মধ্য দিয়েই নানা কলার সৃষ্টি হয়েছে। একই ভাবে নাটকের সূচনা এই ধর্মসাধনার মধ্যে দিয়েই হয়েছে। গ্রিসদেশের দেবতা নাম তার Dionysus, পুজোতে যে সংগীত প্রচলন ছিল তার থেকেই ট্রাজেডির উৎপত্তি হয়েছে। এবং দেবতার উৎসবের হাস্যরসে পরিপূর্ণ যে শোভাযাত্রায় গান হতো তার থেকেই কমেডির সৃষ্টি হয়েছে। প্রাচীন ধর্মের মধ্যেই ভারতের নাটকের মূল গচ্ছিত আছে। পৌরাণিক তত্ত্ব থেকে জানা যায় ব্রহ্ম, নাট্যবেদ নামে পঞ্চম বেদ সৃষ্টি করেন। ব্রহ্ম এই পঞ্চম বেদের শিক্ষা তার শিষ্য ভরত মুনি কে দেন। ভরত মুনিই নাট্যবেদ কে জগৎ এ পরিচয় লাভ করান। ভারতীয় নাটকের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে বৈদিক সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেদের অনেক স্তোত্র নাটকের কথোপকথনের আকারে রচিত হয়েছে। এই সমস্ত স্তোত্রগুলি নৃত্য ও গীতের সমন্বয়ে নাটকের আকার ধারণ করেছে বলে অনেকের অনুমান। বৈদিক যুগের অন্তের পর রামায়ন ও মহাভারতে অনেক স্থানে নাটকের উল্ল্যেখ আছে। তার থেকে বোঝা যায় সেই সময়েও নাটকের প্রচলন ছিল। রামায়নে রামের দুই পুত্র কুশ ও লব এই দুই নাম থেকেই নাটকের ভূমিকা বোঝাতে কুশীলব কথাটি প্রচলিত হয়েছে।