উত্তরবঙ্গের রাগী ঠাকুর ভেলকা বাবা রেগে গেলে নাকি গ্রাম ধ্বংস করে দিতেন!

একবার কোচবিহারের উচলপুকুরীর এক জঙ্গলে স্থানীয় একটি যুবক এক অদ্ভুত দর্শন সন্ন্যাসীর দেখা পেয়েছিলেন, যিনি ওই অঞ্চলের মানুষদের ওপর নাকি ভারী রেগেছিলেন। ওই যুবকের কথায় সেই সন্ন্যাসী ঠাকুরের নামে একটি থান তৈরী করে তাঁর পুজো শুরু করা হয়। তিনি লৌকিক দেবতা ভেলকা বাবা। 

কোচবিহার থেকে বাস রুটে জামালদহ। সেখান থেকে টোটো-রিক্সা করে মিনিট পঁয়ত্রিশ-চল্লিশের রাস্তা। জামালদহ থেকে একটু দূরে ছোট কালির হাট। সেখান থেকে ১৭৪ ধূলিয়া খালসা। ধুলিয়া বাজার থেকে ঠাকুরের বাসা খানিকটা দূরের পথ। সেখানেই রয়েছে ভেলকার পার। জলঢাকা নদীর তীরে এই ভেলকার পার। আগে জলঢাকার একটি শাখা নদীকে কেন্দ্র করে নদীর তীরে ছিল ভেলকা ঠাকুরের বিশেষ থান। আগে বলা হত ভেলকা নালা। এই নালার ধারে ছিল একটি বাঁশবন। যে জঙ্গলে দেখা পাওয়া গিয়েছিল ভেলকা বাবার।

একটি প্রতীকি পাথর খন্ডকে ভেলকা বাবা হিসেবে পুজো করা হয়। পাথর খন্ডে পুজো হলেও ভেলকা বাবার রূপ নাকি অনেকেই স্বচক্ষে দেখেছেন বলে দাবী করেছেন। ভেলকা বাবার রূপ একেবারে সন্ন্যাসীর মত। সাদা ধবধবে রূপ। দাড়ি- গোঁফসমেত সাদা মুখ। 

বংশ পরম্পরায় ভেলকা বাবার পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় শংকর রায়ের পরিবার। তাঁর ঠাকুরদা রামধন রায়ের আমল থেকে পুজো হচ্ছে। 

১৯৭৯ সালের ঘটনা। শঙ্কর রায় তখন ক্লাস এইট নাইনে পড়েন। তিনি তখন বাঁশবন থেকে প্রতীকি পাথরখন্ড জলঢাকার বাঁধের ওপর তুলে এলে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এখানে গড়ে ওঠে ভেলকা বাবার থান। এই পাথরখন্ডে সিঁদুরের টিপ লাগিয়ে পুজো করা হয় এখনও।

কথিত আছে ভেলকা বাবা নাকি খুব জাগ্রত ঠাকুর। কেউ অশুচি অবস্থায় থানে গেলে ভেলকা বাবা খুব ক্ষেপে যায়, তাঁর প্রকোপ খুব মারাত্মক। ভেলকা বাবা যাঁর ওপর রেগে যান তাঁর ভর হয়। তিনি প্রলাপ বকেন। ভেলকা বাবার থানে গিয়ে মানত করলে তবে সেই ব্যক্তি মুক্তি পান। স্থানীয়রা ভেলকা বাবাকে সন্তুষ্ট করার জন্যে মুরগীর বলি দেন। ভেলকা বাবার পাথরখন্ডের মাঝে তখন লাল নিশান পোঁতা হয়।

এই ঠাকুরের পুজোর কোনও নির্দিষ্ট তিথি নেই। কারোর ওপর ভেলকা বাবার প্রকোপ পড়লে কিংবা শুভ অনুষ্ঠানের সময়, দুর্গা পুজো, কালী পুজোর মত পুজোপার্বণের সময় স্থানীয়রা ভেলকা বাবার থানে পুজো দেয়। পুজোর কোনও বাঁধাধরা মন্ত্র নেই। পুজোর পর ভক্তদের দই, চিঁড়ে দেওয়া হয় প্রসাদ হিসেবে।

ভেলকা বাবার পুজো এখনও হয়। তবে আড়ম্বরহীনভাবে। একমাত্র মানত থাকলেই পুজো হয়। সময়ের সঙ্গে জৌলুস কমেছে। ম্লান হয়েছে। এভাবেই নিভু নিভু আলোর মত টিকে রয়েছে এই লৌকিক দেবতার পুজো।



এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...