১৭৮৫ সালে রুশ যুবক লেবেডফ পর্যটক হিসাবে কোলকাতাতে এসেছিলেন। তিনি ভায়োলিন বাদনে পারদর্শী ছিলেন। কলকাতা তাকে আকর্ষণ করে বাংলা ভাষার জন্য। ১০ বছর কলকাতায় থেকে তিনি গোলকনাথ দাসের কাছে বাংলা ভাষা অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি 'প্রহসন দি ডিসগাইস' কে বাংলাতে অনুবাদ করেন 'কাল্পনিক সঙ বদল' নামে। নাটকটি অভিনীত হয় ২৫ নম্বর ডোমোতলায়, এখন যা এজরা স্ট্রিট। প্রথম বেঙ্গলী থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা থিয়েটারে নারীর অভিনয় জগৎ এ আবির্ভাব এই দিনেই। গোলকনাথের সহায়তায় তিন বীরাঙ্গনা কন্যা কে দিয়ে অভিনয় করান লেবেডফ। কিন্তু প্রথম বাংলা ভাষার নাটক অভিনয় সম্পর্কে পরবর্তীকালে কিছু জানা যায় না। কেমন অভিনেতা অভিনেত্রীরা অভিনয় করেন বা প্রধান সহায়ক গোলোকনাথ সম্পর্কে কিচ্ছু জানা যায় না। টিকিট কেটে পুরুষ-মহিলা একত্রে মঞ্চে অভিনয় করলেন, বাংলা ভাষার প্রথম নাট্যভিনয় বাংলার ইতিহাসে স্থান পেল বটে কিন্তু এই প্রথম বাংলা ভাষার নাট্যভিনয় পরবর্তী নাট্যধারায় ছাপ ফেললো না। কারণ এই বাংলা ভাষার প্রথম অভিনয় সম্পর্কে কোনো লেখা পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র লেবেডফ কলকাতা থেকে ফিরে গিয়ে তার বন্ধু সম্বরাস্কিকে একটি চিঠিতে কিছু বিবরণ লিখে পাঠিয়েছিলেন। এর থেকে ৩৬ বছর পর আবার অভিনয়যোগ্য মৌলিক নাটক লেখা হয়। রামনারায়ণ তর্করত্ন প্রথম অভিনয়যোগ্য বাংলা নাটক লেখেন। নাটকটির নাম ‘কুলীন কুলসবর্স্ব’ নাটকটি অভিনীত হয় ১৮৫৮ তে। অভিজাত জমিদাররা তাদের গৃহপ্রাঙ্গণে নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে সাধারণ মানুষদের প্রবেশের অধিকার থাকত না। বাংলা নাটক তখন বন্দী হল জমিদারদের গৃহপ্রাঙ্গণে। সেই বন্দী অবস্থা থেকে বাংলা নাটক রেহাই পেল ১৮৭২ সালের ৬ ই ডিসেম্বর। এই দিনই বাঙালীর প্রথম রঙ্গালয় ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয় নীলদর্পণ নাটকের মঞ্চায়ন এর মধ্য দিয়ে। লেবেডফের বেঙ্গলী থিয়েটারের পর বাঙ্গালীর প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রসেনিয়াম থিয়েটার হল প্রসন্ন কুমার ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত হিন্দু থিয়েটার। বাঙালির সেই প্রথম লেবেডফের বাংলা নাটকে সংলাপে গদ্য ভাষার খুব একটা প্রয়োগ ছিল না আর না থাকারই কথা,.কারন লিখিত বাংলা গদ্যের আবির্ভাব হয় তার বেশ কিছু বছর পরে। সেই সময়ে নাটক ছিল ইংরেজদের নিষিদ্ধ বস্তু। তাই তারা লেবেডফের প্রথম বাংলা ভাষার নাটকটিকে মেনে নিতে পারেননি। শেষমেশ ইংরেজরা লেবেডফ কে তাদের প্রতিদ্বন্ধি ভেবে তার থিয়েটারে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দেয়। শেষে দেনায় জর্জরিত লেবেডফ কে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়। কিন্তু ইতিহাস কে কি অস্বীকার করা যায়? তাই তিনি হলেন বাংলা সংস্কৃতির পিতৃপুরুষ। ১৮৭২ সালের ৭ ই ডিসেম্বর বাংলা নাট্যজগৎ এর উল্লেখ্যযোগ্য দিন কারন এই দিনটিতেই সাধারণ মানুষের জন্য রঙ্গমঞ্চের দ্বার উদ্ঘাটিত হয়েছিল।