শিবরাত্রি ব্রত শুরুর প্রথম গল্প

'শিব পুরাণ'-এ মর্তে প্রথম শিবরাত্রি পালন ও ফাল্গুনের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে বিশেষ শিবপূজার প্রচলন কীভাবে হল, সেই নিয়ে একটি গল্প আছে। এখন সেই গল্পটিই বলছি, শুনুন :

ভুজবল নামে এক মহা ধুরন্ধর চোর ছিল। সে গেরস্তের চোখের সামনেই কখন যে কী চুরি করে নিত, কেউ টেরটিও পেত না। আজ এর ঘরে সে চুরি করে, কাল তার ঘরে। চোখের সামনে বাটি-ঘটি-টাকাকড়ি এই আছে, এই নেই! এ তো মহা জ্বালা! রোজ রোজ লোকে আর কাঁহাতক সহ্য করে।

একদিন কোনরকমে হাতেনাতে ধরে আচ্ছা করে ঘাকতক দিয়ে কয়েকজন  গেরস্ত প্রজা তাকে নিয়ে গেল রাজার কাছে। রাজাকে বলল, হয় একে রাজ্যছাড়া করুন মহারাজ, নয় আমাদের অন্য কোথাও যাওয়ার আজ্ঞা দিন! এমন চোরকে নিয়ে তো আর পারা যায় না!

বামাল ধরা পড়েছে যখন, তখন বিচার পেতে দেরি হল না। রাজা ভুজবলকে রাজ্য থেকে দূর করে দিলেন। তাকে হুঁশিয়ারি দিলেন, রাজ্যের ধারেকাছে দেখতে পেলেই কিন্তু মুণ্ডুটি নামিয়ে দেওয়া হবে, মনে থাকে যেন!

মনে থাকবে না মানে! মুণ্ডু সামলে ভুজবল সেই যে রাজ্য ছেড়ে পালাল, আর ফিরেও তাকাল না। অনেক পথ পেরিয়ে নতুন এক রাজ্যের সীমানায় এসে প্রহরীদের চোখ এড়িয়ে সে কোনরকমে ঢুকে পড়ল সে-দেশে। ঢুকে তো পড়ল, কিন্তু খাবে কী! খেটে খাওয়া তো তার ধাতে নেই।

সে দেখল সে-দেশের মানুষের আছে বেশ বড় বড় সব ফলের বাগান। ফল তো চুরি করাই যায়। কিন্তু, শুধু ফল খেয়ে তো আর বাঁচা যায় না। তাই সে রাতের বেলায় ফল চুরি করে দিনের বেলায় বাজারে বেচে, আর সে টাকায় চাল-ডাল-তেল-নুন কিনে আনে। নিজের হাতে রাঁধে। তারপর খায়। এমনি করে তার দিন যায়। 

shivratri1

এক রাতে ফল চুরি করতে সে উঠেছে গাছে। বেলের বাগানে বেল গাছ। ফাল্গুন মাস, গাছের পাতায় অল্প অল্প শিশির। রাতের অন্ধকারে সে বুঝতেই পারেনি যে, বেলগাছের নীচে পাতা আছে শিবের ছোট্ট একটি লিঙ্গমূর্তি। আর কপালগুণে সেদিন ছিল কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথি! কিন্তু, সে তিথি বা শিবের সঙ্গে তার তো কোন লেনদেন নেই।

তাই, সে বেশ নিশ্চিন্তে গাছ থেকে ইচ্ছেমতন ফল পেড়ে নেমে চলে গেল। সে জানলই না, তার ফল পাড়ার সময় তার হাতের চাপে এবং ঝাঁকুনিতে একটি একটি করে বেলপত্র আর ফোঁটা ফোঁটা শিশিরের জল পড়েছে শিবলিঙ্গে। তাতেই পরম তুষ্ট হয়েছেন শিব আর তার অজান্তেই হরণ করেছেন ভুজবলের এতদিনের চুরির সমস্ত রকম পাপ। শিব ছাড়া ভুজবল কেন আর কেউই জানল না তার সেই অঢেল পূণ্য অর্জনের কথা!  

কালের নিয়মে তারপর একদিন যখন সে মারা গেল, তখন তাকে যেতে হল শেষ বিচারের আশায় যম রাজার দরবারে। কিন্তু, বিচারের সময় তার জীবনের হিসেব মেলাতে গিয়ে যম তো অবাক, চিত্রগুপ্তও অবাক! ভুজবলের মতো দাগি একটা চোর কিনা একরাত্রির শিবপূজার ফলে অর্জন করে ফেলেছে অক্ষয় স্বর্গবাসের অধিকার! 

অমনি শুরু হয়ে গেল একেবারে হৈ হৈ রৈ রৈ কাণ্ড। ত্রিলোকে রটে গেল চোর ভুজবলের অশেষ পুণ্যলাভের কথা। অক্ষয় স্বর্গবাসের কথা। প্রচারিত হল ফাল্গুনের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে শিব পুজোর বিশেষ মাহাত্ম্যের কথা। চারিদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। বলা বাহুল্য, এরপরই মর্ত্যধামে শুরু হল যথানিয়মে শিবরাত্রিতে অক্ষয় পূণ্যকামনায় শিবের বিশেষ পুজো।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...