সারি সারি দোকানের মিছিল। ট্রাম লাইন। রাস্তার ভিড়, বিরিয়ানির সুবাস কাটিয়ে মির্জা গালিব স্ট্রিট। বড়ো বড়ো ইমারতকে পিছনে ফেলে কিছুটা এগিয়ে গেলে বাম হাতে পড়ে ঐতিহ্যের গন্ধ মাখা একটি বাড়ি। এটি কলকাতার দ্বিতীয় প্রাচীনতম কলেজ। নাম 'আর্মেনিয়ান কলেজ'।
ব্যবসার পাশাপাশি আর্মেনিয়ানরা শিক্ষার প্রসারেও ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। মিস্টার মার্জার নামে এক মিলিটারি অফিসার এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৭৬৩ সালে তিনি তাঁর বাড়িতে আর্মানি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন। এরপর ১৭৯৮ সালে স্থাপিত হয় 'দ্য আরাটুন কালুজ স্কুল'। এছাড়া ছিল সুকিয়াস লেনের আর্মেনিয়ান সেমিনারী।
আস্তভাটসাতুর মোরাদঘানিয়ান ১৭৯৭ সালের ৩০ জুলাই উইল করে আট হাজার টাকা রেখে গিয়েছিলেন। জাতীয় স্তরে যাতে আর্মেনিয়ানদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয় তার কথা মাথায় রেখে। ১৮২১ সালের ২ এপ্রিল মানাতসাকান ভারডানিয়ান নামের এক ব্যক্তি ওই টাকা দিয়ে 'আর্মেনিয়ান ফিলানট্রপিক একাডেমি' খোলেন। ৩৫৮ ওল্ড চিনা বাজার ছিল তার ঠিকানা। তবে বর্তমানে এই ঠিকানার কোন অস্তিত্ব নেই।
আর্মেনিয়ান ফিলানট্রপিক একাডেমি আর আরাটুন কালুজ স্কুল পরবর্তীকালে মিশে যায়। ১৮৪৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হয় ৫৬ বি মির্জা গালিব স্ট্রিট। এই বাড়িটি আরেকটি কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইংরেজি উপন্যাসিক উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকারের জন্ম এই বাড়িতে হয়েছিল।
১৮৬৯ সালে এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে। ১৮৮৮ সালে এই একাডেমি এফ.এ পর্যন্ত উন্নীত হয়। নাম পাল্টে রাখা হয় 'আর্মেনিয়ান কলেজ'। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী না পাওয়ায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে কলেজ বিভাগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে নামটা থেকে যায়।
ডেভিড এভেটিক ডেভিডিয়ান কলকাতায় আর্মেনিয়ান নারী শিক্ষার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। কলকাতার এক দরিদ্র আশ্রমে তাঁর বেড়ে ওঠা। ব্যবসার সুবাদে এলাহাবাদে চলে যান। ১৯১৭ সালে কলকাতায় ফিরে এসে দেখেন আর্মেনিয়ান কলেজে নারীশিক্ষা বন্ধ।
১৯২২ সালে ১৫ রয়েড স্ট্রিটের একটি বাড়িতে তিনি শুরু করলেন ডেভিডিয়ান গার্লস কলেজ। যা ১৯৫৩ সালে আর্মেনিয়ান কলেজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে এই ঠিকানায় স্কুল বাড়ি থাকলেও স্কুলের কাজকর্ম আর্মেনিয়ান কলেজেই হয়।
আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, ইরান ও ইরাক থেকে বহু আর্মেনিয়ান ছাত্র-ছাত্রী এখানে ইংরেজি শিখতে আসেন। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ বহন করে আর্মেনিয়া কলেজ। শুধু কলেজ নয় নিজাম প্যালেস, গ্র্যান্ড হোটেল, ফেয়ারলন হোটেল এবং ঐতিহ্যবাহী কেনিলওয়ার্থ হোটেলও আর্মেনিয়ানদের তৈরি। ( চলবে)