কথিত আছে, প্রাচীন বাংলায় দেবী দুর্গার পুজো শুরু হয়েছিল ১৬-১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে থেকে। সূচনা করেছিলেন রাজা সুরথ। মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী, রাজা সুরথ সর্বপ্রথম মা দুর্গার পুজো করেছিলেন এপার বাংলার গড় জঙ্গলে। রাজা লক্ষণ সেনের আমলে সেই জঙ্গলে মা দুর্গার একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। মা দুর্গা এই মন্দিরে শ্যামরূপা নামে পরিচিত। প্রাচীন ও রহস্যময়ী এই মন্দিরের নীচ থেকে আজও তোপ ধ্বনি শোনা যায়। যার রহস্য উদঘাটন করা এখনও সম্ভব হয়েনি। তাই পর্যটকদের কাছে গড় জঙ্গলের মূল আকর্ষণ হল শতাব্দী প্রাচীন 'শ্যামরূপা মন্দির'।গ্ৰামবাসীদের বিশ্বাস রাজা লক্ষণ সেন আসতেন শ্যামরূপা মন্দিরে পুজো দিতে। যদিও প্রাচীন মন্দিরটি এখন আর নেই। বর্তমানে প্রাচীন ঐ মন্দিরটির উপরেই নির্মাণ করা হয়েছে নতুন মন্দিরটি। আগে এই অঞ্চলে মোট ষোলোটি মন্দির ছিল। এখানেই ত্রিদেবীর মন্দির নির্মাণ করিয়ে ছিলেন রাজা সুরথ। কিন্তু আজ মাত্র দুটি মন্দির রয়েছে। একটি হল শ্যামরূপা মন্দির আর অন্যটি হল শিব মন্দির। শাক্তদের জন্যে এই মন্দির খুব গুরুত্বপূর্ণ 'শ্যামরূপা মন্দির'। গড় জঙ্গলের প্রাচীন দুর্গা মন্দিরটির পিছনেই রয়েছে আদি মেধা মুনির আশ্রম। যেখানে সমাধি বৈশ্যর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন রাজা সুরথ।
তবে শুধু মন্দির নয়, রয়েছে লাল মাটির রাস্তার উপর আর দুপাশে শাল গাছের জঙ্গল। ছোটবেলায় কবিতায় যে অজয় নদের নাম শুনে ছিলাম। সেই নদের অবস্থানও এই গড় জঙ্গলে। শাল, শিরিষ, অর্জুন ছাড়াও রয়েছে আরও রকমারি সব গাছ। জঙ্গলে বন্য পশুর দেখা না মিললেও দেখা মিলতে পারে ফিঙে, বুলবুলি ও টিয়া মতো পাখি। বেশি বন্য জীবজন্তুর না থাকায় জঙ্গলটি খুবই শান্ত। তাও রহস্যময়ী এই জঙ্গলে রয়েছে একটা গা ছমছমে ভাব।
প্রত্যেক বছর দুর্গাপুজোর সময় চার দিন মানুষের সমাগম দেখা যায় গড় জঙ্গলের 'শ্যামরূপা মন্দির'-এ। তবে বছরের অন্যান্য দিন তেমন জৌলুস দেখা যায় না মন্দিরের। গড় জঙ্গলে পৌঁছতে প্রথমে আসতে হবে বর্ধমান জেলায় তারপর দু-নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে দুর্গাপুর মুচিপাড়ায় আসতে হবে। তারপর দুর্গাপুর থেকে গড় জঙ্গল পর্যন্ত বাস রয়েছে। এখানেই শেষ নয় পথ আরও বাকি, তবে বাকি পথ হেটেই যেতে হবে। গ্ৰামবাসীদের থেকে জানতে চাইলেই তারা দেখিয়ে দেবে জঙ্গলে প্রবেশ করার পথ। এই পথ ধরে জঙ্গলে প্রবেশ করলে দেখা মিলবে শাল গাছের জঙ্গলের। মাত্র একদিনে ঘুরে আসা যায় গড় জঙ্গল। কলকাতা থেকে গড় জঙ্গলের দূরত্ব খুব কম। সড়ক পথে প্রায় ২০০ কিলোমিটার। তাই সেখানে যাওয়া আসার খরচও খুবই কম।