স্মৃতি মন্ধনা যেন দো ধারি তলোয়ার

তিনি ব্যাট করলেই মনে হয় এতো সৌরভের ছোঁয়া। তিনি কভার ড্রাইভ করলেই মনে হয় ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি। আর তিনি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে হেলমেট খুললেই অনেকর মনে বেজে ওঠে 'ও হাসিনা জুলফোওয়ালি'। তিনি স্মৃতি মন্ধনা। 

আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য এবং ওপেন করেন বলে অনেকে তাঁকে মহিলাদের বীরেন্দ্র শেহবাগ বলে ডাকা হয়। তাঁর বিখ্যাত টুইট আছে এই নিয়ে— 'স্মৃতি প্রথম স্মৃতি। দ্বিতীয় সহবাগ নয়। প্রত্যেক দেশবাসীর গর্ব'।

মন্ধানার ক্রিকেটে আসাটা ভাইয়ের হাত ধরে। ভাই যেতেন ক্রিকেট অনুশীলনে। মন্ধানাযেতেন সঙ্গে। খেলা দেখতে দেখতেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়ে গেলেন। তাঁর কিটব্যাগে এখনও একটা বিশাল ব্যাট পাওয়া যাবে। সেটা দিয়ে তিনি খেলেন না। কিন্তু সব সময় তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ঘোরে। রাহুল দ্রাবিড়ের অটোগ্রাফ করা সেই ব্যাট আসলে উপহার পেয়েছিলেন তাঁর ভাই। মহারাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে ভাই ভাল খেললে সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরোত। মন্ধানা সেগুলি সযত্নে কেটে রাখতেন। তার মধ্যেই এক দিন হঠাৎ ভাবনা এল— 'আমিও এ ভাবেই ক্রিকেট খেলব, রান করব। আমারও নাম সংবাদপত্রে বেরোবে!'

মন্ধানা সব সময়ই সময়ের চেয়ে এগিয়ে। অনূর্ধ্ব ১৫ বিভাগে সুযোগ পান ৯ বছর বয়সে। অনূর্ধ্ব ১৯ খেলেন ১১ বছর বয়সে। মন্ধানার সবচেয়ে আকর্ষণীয় কাহিনি ঘটল ১৫ বছর বয়সে। যখন তিনি চাইলেন বিজ্ঞান নিয়ে পড়বেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তাঁর মা-ই বাধা দেন। বিজ্ঞান যে তাঁর মেয়ের জন্য নয়, সেটা বুঝে গিয়েছিলেন মান্ধানার মা। এখন যে কারণে মাকে ধন্যবাদ দেন ভারতের বাঁ হাতি ওপেনার।

তাঁকে ইতিমধ্যেই ডাকা শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন ‘রানমেশিন’ হিসেবে। মাত্র ১১ বছর বয়সে মহারাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পান। সিনিয়র দলের হয়ে অভিষেকেই সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১৫৫ রান করে ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দেন তিনি। তারপরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। 

ব্যাট তার হয়েই সবসময় কথা বলেছে। ওয়ান ডে-তে রান তাড়া করতে নেমে  টানা দশটিঅর্ধশতরানের বিরল নজির রয়েছে স্মৃতির। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভদোদরার ওয়ান ডে ম্যাচে পরে ব্যাট করে ৭১ বলে ৬৭ রান করেছিলেন মন্ধনা। এই ইনিংসের পর থেকেই পরে ব্যাট করে পরপর দশটি ৫০ বা তারও বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। 

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, নভজ্যোত সিংহ সিধু, বিরাট কোহলিদের পিছনে ফেলে দেওয়া আরও একটি রেকর্ড রয়েছে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের এই স্টাইলিশ ওপেনারের। ভারতীয়দের মধ্যে একদিনের আন্তর্জাতিকে দ্বিতীয় দ্রুততম ২,০০০ রানের নজির গড়েছেন তিনি। একমাত্র ভারতীয় মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে ২০১৬ সালে আইসিসির বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটার হয়েছিলেন। 

আবার ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বাঁ-হাতি ওপেনার স্মৃতি মান্ধানার ব্যাটিং করার ধরন এবং ফুটওয়ার্ক অনেকটা মেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তা মেনে নিয়েছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও। স্মৃতির ড্রাইভ, ব্যাকফুট পাঞ্চ, স্কোয়ার কাট দেখে মনে হয় যেন অবিকল সৌরভ। 

বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেটের জগতে 'ন্যাশনাল ক্রাশ' স্মৃতি মন্ধনা। তিনি কোনও অভিনেত্রীর চেয়ে কম নন। একদিকে ব্যাট হাতে যেমন মাঠের মধ্যে ঝড় তুলতে পারেন, ঠিক তেমনই তরুণ-যুবকদের হৃদয়েও ঝড় তোলেন।

তাঁর জন্ম মুম্বইয়ে। ১৮ জুলাই আজকের দিনে ১৯৯৬ তারিখে মন্ধনা'র জন্ম। স্মিতা ও শ্রীনিবাস মন্ধনা দম্পতির সন্তান তিনি। ছেলে ও মেয়েকে ক্রিকেটার বানাবেন এই ছিল বাবার স্বপ্ন। স্মৃতি বাবার স্বপ্ন পূরণ করে দেখিয়েছেন।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...