এ যেন স্বপ্ন ছোঁয়া। মাত্র সাত বছর বয়সে জলে নেমেছিল সে। জলেই তার স্বপ্ন দেখা। জলকে ঘিরেই উচ্চতা ছোঁয়ার ইচ্ছে। জলের সঙ্গে এই মেয়ের সম্পর্ক জলের মতই গভীর। তাই জল তাকে ফেরায়নি। জলের প্রতি ভালোবাসা গড়ে দিয়েছে ইতিহাস। সাঁতারু মানা প্যাটেলের কেরিয়ার এই বছর অলিম্পিকের ইতিহাসের সাক্ষী।
এই প্রথম কোন মহিলা সাঁতারু হিসেবে অলিম্পিকে যোগ দিচ্ছে মানা প্যাটেল। একুশ বছরের এই সাঁতারু 'এ' বিভাগে অংশগ্রহণ করছে। ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে ভারতবর্ষের হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে মানা।
ছোট থেকেই সাঁতারের সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক। মাত্র সাত বছর বয়সে মানার মা তাকে সাঁতার শেখানোর জন্য ভর্তি করেন। কিন্তু এই মেয়ে জলে নেমেই বুঝেছিল গতানুগতিক শেখার গণ্ডির বাইরে একটা পৃথিবী থাকে। আর তাকেই ছুঁতে চেয়েছে মানা প্যাটেল। ২০২১ সালের অলিম্পিক তার সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার সাক্ষী। যা ভারতের জন্য সম্মানের।
আমেদাবাদের এই কন্যা 'ইউনিভার্সালিটি কোটা' অর্থাৎ লিঙ্গ সমতার ভিত্তিতে এ বছরের টোকিয়ো অলিম্পিকে যোগদান করছে। ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে দুজন পুরুষের পর সে তৃতীয় প্রতিযোগী।
২০১৯ সালে একবার বিপজ্জনকভাবে কাঁধে চোট পায় মানা। দীর্ঘদিন প্র্যাকটিস বন্ধ রাখতে হয় তাকে। তবে স্বপ্ন দেখা ছাড়েনি মানা। অপেক্ষা করছিল চোট থেকে সেরে ওঠার। একটু সুস্থ হতেই আবার জিম জয়েন করেছিল মানা। কিন্তু সেখানেও আবার আঘাতের মুখোমুখি।
পড়ে গিয়ে পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়েছিল সে। অনেকদিন বাড়িতে বিশ্রাম নিতে হয় মানাকে। এরপরই শুরু হয় মহামারী। সুইমিংপুল বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। এটা একদিকে যেমন মানার কাছে তার অনুশীলনের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করেছে, তেমনি সে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম পেয়েছে। তাই এই সময়টা সাঁতারুর কাছে আলো-ছায়া।
ফলে সুস্থ হয়েই আবার জলে ঝাঁপিয়েছে সাঁতারু মানা প্যাটেল। এই বছরের শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল পেয়েছে মানা। এপ্রিলে উজবেকিস্তান ওপেনে সোনা জিতেছিল এই সাঁতারু। সার্বিয়া আর ইতালিতেও সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে মানা। আঘাতের পরও যথেষ্ট ভালো ফল করেছে সে।
প্রথমদিকে রাজ্যস্তরীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করত মানা। ২০১৬ সালে প্রথম জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সে। ২০১৬ সালেই প্রথম সোনা জেতে সে। তারপর ২০১৯ সালেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকটি বিভাগে সোনা জিতেছে প্রতিভাবান এই সাঁতারু।
২০০০ সালে আমেদাবাদে জন্ম এই সাঁতার কন্যার। কমার্স গ্রাজুয়েট মানা পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলন করে গেছে তার স্বপ্নের। যে স্বপ্নের নাম সাঁতার। বর্তমানে সে দ্রোণাচার্য পুরস্কার প্রাপ্ত কোচ নীহার আমীনের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এই বছরের অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা এই সাঁতারুর কাছে এই সময়টা তারই ভাষায় ‘ঘোরের মতো।’ সমগ্র ভারতবাসী তাদের আবেগ, সম্মান, ভালোবাসা নিয়ে বাস্তবের এই জলপরীর সাফল্য কামনা করেছে।
গতকাল এই পরিশ্রমী, যোদ্ধা-সাঁতারু সেমিফাইনালে ওঠার আগেই বিদায় জানিয়েছে অলিম্পিককে। তবে এটা মানা প্যাটেলের ব্যর্থতা নয়। দীর্ঘ চোট, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনুশীলনে অসুবিধার মত সমস্যা পেরিয়ে তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার পথে এই অলিম্পিক যেন এক চিলতে আলো। আগামীদিনে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে এই আলো তাকে আরো এগিয়ে দেবে এমনটাই কাম্য। আপাতত এশিয়ান গেমসের অপেক্ষায় রয়েছে মানা প্যাটেল।