এম এস ধোনি তো বারবার বলে এসেছেন, রবীন্দ্র জাদেজা সব পারেন। চেন্নাই শিবিরে তো সেই কবে থেকে তিনি খ্যাত ‘স্যার জাদেজা’ নামে। কেন তাঁকে ‘স্যার’ উপাধি দেওয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যাও বহুবার ধোনি দিয়েছেন। কখনও তিনি বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে হাত উঁচিয়ে অবধারিত ছক্কা বাঁচিয়ে দেন। কখনও হাফ ক্রিজ থেকে ডাইভ মেরে রান-আউটের হাত থেকে বাঁচেন।সতীর্থ রবীন্দ্র জাদেজাকে শুধু ধোনি নন, পুরো ভারতই ‘স্যার’ ডাকে। এমনকি কয়েক বছর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছিলেন, সেখানেও তিনি জাদেজাকে ‘স্যার’ ডেকে বসেছিলেন ।
রবীন্দ্রসিং অনিরূদ্ধসিং জাদেজা। জন্ম ৬ ডিসেম্বর। ১৯৮৮ সালে। গুজরাট থেকে উঠে আসা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। বামহাতি মাঝারি সারির ব্যাটসম্যান এবং ধীরগতির বামহাতি বোলার হিসেবে ভারতীয় দলে খেলে থাকেন। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় সৌরাষ্ট্র দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট এবং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে চেন্নাই সুপার কিংসের পক্ষে অংশ নেন।
২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ বিজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন জাদেজা। বিরাট কোহালির দলের ‘থ্রি ডি’ ক্রিকেটার তিনি। বল করতে এসে বিপক্ষকে আটকে রাখতে পারেন। পার্টনারশিপ ভাঙতে পারেন। ব্যাট হাতে প্রয়োজনের সময়ে জ্বলে উঠতে পারেন দেশের বাঁ হাতি অলরাউন্ডার।
ভারতীয় দলের অন্যতম প্রধান ক্রিকেট তারকা রবীন্দ্র জাদেজা। টেস্ট, ওডিআই ও টি২০, তিন ফর্ম্যাটেই দলের গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার তিনি। জাদেজার ব্যক্তিগত জীবনেও কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়। হর্স রাইডিং, তলোয়ারের খেলা এছাড়া একাধিক অ্যাডভেঞ্চার খুবই প্রিয় জাদেজার।
এখনও অবধি ৪৯ টেস্টে তাঁর সংগ্রহ ১৮৬৯ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০০। উইকেট পেয়েছেন ২১৩ টি। ১৬৮ টি ওয়ানডেতে জাডেজার মোট রান ২৪১১। সর্বোচ্চ ৮৭। উইকেট শিকার ১৮৮ টি। টি২০ ক্রিকেটে ৪৯ ম্যাচে ৩৯টি উইকেট পেয়েছেন জাড্ডু। তিনি এক অদম্য বেপরোয়া যোদ্ধা। পরিবারে লড়াই, শুধু লড়াই। বাবার একার রোজগারে চলছিল না সংসার। গোঁড়া গুজরাটি রাজপুত পরিবারের বউ সরকারী চাকরি করতে শুরু করেন।
২০০৫ সালে আসে অন্ধকার। এক দুর্ঘটনায় মারা যান জাদেজার মা লতা জাদেজা। মা ছিলেন ১৭ বছরের রভির একমাত্র অবলম্বন, তার খেলার সাথী, তার বন্ধু, তার পরিবারের অবলম্বন! কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজার পিছনে ফিরে তাকানোর ফুরসত ছিল না আর! লড়াইয়ের এর জন্যে নিজেকে তৈরী করলেন রভি। মায়ের জায়গা নেয় দিদি। ভাই রভির সামনে খুলে দিয়েছিল মুক্ত ক্রিকেটের মঞ্চ।
১০ বছর বয়স থেকে পাড়া ক্রিকেট, ক্যাম্প কোথাও রবীন্দ্রকে ব্যাট করার সুযোগ দিত না কেউ! মায়ের কাছে এসে রাতে কেঁদে ফেলত যে ছেলেটা, সৌরাষ্ট্র দলের হয়ে রঞ্জিতে সুযোগ পেতে, তাকে হতে হয়েছিল পেস বোলার! প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনটে ট্রিপল সেঞ্চুরি পকেটস্থ করল সেই ছেলেটাই।অনেকে বলেন তিনি ধোনির কোটার প্লেয়ার! কোটা ফ্যাক্টরি যদি এমন প্লেয়ার দেয় তাহলে কোটার প্লেয়ারই সই। ক্রিকেট ছাড়া ঘোড়সওয়ারি আর লাঠিখেলাই নেশা রবীন্দ্রর। তার নিজস্ব পৃথিবীতে এখনো তার আইকন তার বাবা৷ সামান্য ওয়াচম্যানের চাকরি করা বাবা অনিরুদ্ধ, যে জন্মের পরেই রবীন্দ্রর কানে গেঁথে দিয়েছিলেন লড়াইয়ের প্রাণমন্ত্র। তার প্রতিটা সাফল্যের উদযাপন প্রমাণ করে তিনি যুদ্ধের নায়ক হতেই পছন্দ করেন।