দক্ষিণ মুম্বই এর ব্রিটানিয়া অ্যান্ড কং। ঠিকানা ১৬, ব্যালার্ড এস্টেট, মুম্বই মেট্রোপলিটন। দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে এক টুকরো ভিন্টেজ বোম্বাই। মনে হবে বিশের দশকের কোনও এক রেস্তোরায় এসে পড়েছি। গথিক স্থাপ্তত্যের অনুকরণে স্কটিশ স্থাপত্যবিদ জর্জ উইটারের তৈরি এক প্রাচীন ভবনের একতলায় মুম্বই এর সব চেয়ে পুরনো পার্সি রেস্তোরা।
ব্রিটানিয়া ক্যাফের সম্বন্ধে বলতে গেলে বলতেই হবে বোমান কোহিনুরের কথা। বৃদ্ধ বোমানকে বয়সের কথা জানতে চাইলে বলেন তিনি এই ক্যাফের মতই পুরনো। ১৯২৩ তে জন্ম তাঁর, সেই বছরই জন্ম হয় এই ক্যাফেটিরও।
১৯২০ সালে ইরান থেকে ভারতে আসে বোমানের পরিবার। বাবা রশিদ কোহিনুর মুম্বইয়ে এই ইরানি-পার্সি রেস্তোরা শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই ক্ল্যাসিক পার্সি স্বাদের পীঠস্থান হয়ে ওঠে ব্রিটানিয়া।
উঁচু সিলিং, বেন্টউডের চেয়ার, নীল-সবুজ দেওয়ালের রাজকীয় গ্র্যান্ড ক্লক আর ধোপদুরস্ত কর্মী। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, মহাত্মা গান্ধীর পাশাপাশি ছবি। তার ঠিক পাশেই তিনটি পতাকা। প্রথমটি ভারতীয়, দ্বিতীয়টি ব্রিটিশ এবং তৃতীয়টি জরাথ্রুসট্রিয়ান পতাকা। উইলিইয়ম আর কেটের কাট আউট দেখে অনেকেই হয়ত হাসেন, কিন্তু বৃদ্ধ বঅমানের সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল ইংল্যান্ডের রানীর সঙ্গে দেখা করা। উইলিয়ম এবং কেট মিডলটনের ভারত সফরের সময় বোমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তাঁরা।
বোমানের জীবনের মূল মন্ত্র ‘দেয়ার ইজ নো লাভ গ্রেটার দ্যান দ্য লাভ অফ ইটিং’। তাঁর কাজের মধ্যেও বার্নাড শ- এর এই কথাগুলোই প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। ব্রিটানিয়া ক্যাসের লোগোতেও লেখা আছে সেটাই।
১৯৩৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পিতৃবিয়োগ ঘটে। তার পর বোমান এই ক্যাফে চালু করেন। এখনও তিনি সমান কর্মক্ষম, বয়সের ভার কিছুটা পথ রোধ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাতে গতিপথ শিথিল হয়নি। তৃতীয় প্রজন্মকে শরিক করে তিনি এখনও একই ভাবে ক্যাফের দায়িত্ব সামলে চলেছেন।
এখন ক্যাফের মেনুতে পারসি ডিশের সঙ্গে সঙ্গে কিছু মশলাদার মোঘলাই খাবারের নামও যোগ হয়েছে। কিন্তু ক্যাফের ভিতরের সাজসজ্জা ও পরিবেশে কোনও বদল ঘটেনি।
আগে ব্রিটিশ অফিসারদের কথা মনে করে বেশিরভাগ ডিশই ছিল তেলমশলাহীন। কন্টিনেন্টাল খাবারের জন্য বিখ্যাত। ক্যাফের জনপ্রিয়তম ডিশের মধ্যে বেশ কিছু তাঁর স্ত্রীর নিজস্ব উদ্ভাবন। পেশায় আইনজীবি বোমানের স্ত্রী ইরানে থাকতেন। অবসর গ্রহণের পর এদেশে চলে আসেন। ক্ল্যাসিক বেরি পোলাও, সালি বটি, ধানশাক, পাত্রানি মচ্ছি, ক্যারামেল কাস্টার্ডে তাঁর ‘টাচ’ খাদ্যরসিকদের বারবার টেনে আনত এই পার্সি ক্যাফেতে। ক্যাফের সিগনেচার ডিশ বেরি পোলাও।বিদেশেও সমান জনপ্রিয়।
তিনি নেই, কিন্তু তাঁর রেসিপি আজও মেনে চলা হয়। রেসিপির রহস্য অবশ্য রহস্যই থেকে গিয়েছে।
ব্রিটানিয়া ক্যাফে দিনের মাত্র চার ঘন্টা খোলা থাকে। কেবল মাত্র শনিবারই সন্ধেবেলা খোলা থাকে বাকি সপ্তাহের ৬ দিন কেবল মাত্র দুপুরবেলা ‘ লাঞ্চ আওয়ার’ এ দরজা খোলা থাকে ভোজন রসিকদের জন্য। ৯৬ বছর ধরে একইভাবে চলে আসছে ব্রিটানিয়া ক্যাফের ঘড়ি।
সম্প্রতি পথ চলা থামালেন বোমান কোহিনুর। ব্রিটানিয়ার এনস্লাইকোপিডিয়া গত বুধবার পার্সি জেনারেল হাসপাতালে ৯৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।