বাংলার মেলা কথা: পৌষ মেলা

পৌষ মেলায়  চল না যাই

জিলিপি আর কুলপি খাই

রবিঠাকুরের আখড়ায়

যেতে আজ আমার প্রাণ চায়

চল মেতে উঠি খুশির জোয়ারে

 দলবল মিলে  সব্বাই।।

 

শুনব আমরা বাউল গান

ভরবে খুশিতে মন ও প্রাণ

পৌষের মিঠে ঠান্ডায়

যাব যেদিকে দুচোখ যায়

কীকরে ভুলে থাকবে বলো

বোলপুরের এই মেলার টান?

 

কিনব রঙিন কাঁচের চুড়ি

মাটির পুতুল বেতের ঝুড়ি

 নাগরদোলার ঘূর্ণিতে

উড়ব প্রাণের ফুর্তিতে 

নানা হৈচৈ ভীড় ভাট্টা

সঙ্গী ফুচকা ঝালমুড়ি।।

 

উপরের এই ছোট্ট ছড়াটি কেমন লাগল পাঠক বন্ধুরা?

 আসলে যে মেলার সঙ্গে বাঙালির ‘প্রাণের মানুষে’র নাম--- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের নাম জড়িয়ে আছে সেই মেলা নিয়ে লিখতে গেলে আপনা থেকেই মনে ছন্দ চলে আসে। তা সে যেমনই হোক না কেন। তাই এই লিখিয়েও লিখে ফেলল উপরের ছড়াটি। হ্যাঁ পাঠক, আজ লিখব শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা নিয়ে।

poushmela-1

পৌষ মেলার সূচনা হয়েছিল ১৩০২ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ (১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দ)। তবে ওই দিনটির ইতিহাস আরও ৫০ বছরেরও বেশি পুরনো। ১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ই পৌষ (ইংরেজি ১৮৪৩ এর ২১শে ডিসেম্বর) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর কুড়িজন সহব্রতী রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। সেই দিনটিকে কেন্দ্র করে উৎসব ও মেলার ভাবনা ছিল দেবেন্দ্রনাথের।

তারপর থেকে মূলত প্রতি বছর সাতই পৌষ শান্তিনিকেতনে পৌষ উৎসব পালন করা হয়।  ধীরে ধীরে শান্তিনিকেতনে ট্রাস্ট তৈরি হলো। এবং ভুবনডাঙার প্রান্তে  কুড়ি বিঘা জমি নেওয়া হয়। এই জমিতে গড়ে উঠেছিল শান্তিনিকেতন গৃহ এবং তৈরি হয়  ব্রাহ্ম মন্দির যা উপাসনা গৃহ বা কাঁচ মন্দির নামে বর্তমানে পরিচিত। ১৮৯১ (বাংলা ১২৯৮) এ ৭ই পৌষ এই উপাসনা গৃহের উদ্বোধন হয়। এরপর ১৮৯৫ সালে ডিসেম্বর মাসে (বাংলা ১৩০২ সালের ৭ই পৌষ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইচ্ছা অনুযায়ী ব্রাহ্মমন্দির সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় মেলা। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন সেই মেলাতে। তখন থেকে প্রতিবছরই এই পৌষ মেলা হয়ে আসছে।  শুধু ১৯৪৩ সালে  মন্বন্তরের কারণে এবং ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার কারণে পৌষ মেলা বন্ধ রাখা হয়েছিল।

১৯৬১ সালে এই মেলা উঠে আসে পূর্বপল্লির মাঠে। এখন অবশ্য তাতেও জায়গা সংকুলান হয় না, প্রকৃতপক্ষে পৌষ মেলা চলে গোটা শান্তিনিকেতন জুড়েই।

poushmela-2

প্রত্যেক বছর ৭ পৌষ সকালে উপাসনার পর শুরু হয় পৌষ উৎসব এবং মেলা। চারদিন ধরে চলা এই মেলায় বিকিকিনি চলে নানান জিনিসের।  তার মধ্যে যেমন রয়েছে বিভিন্ন হস্তশিল্প,  ডোকরা বা পোড়ামাটির গয়না ও খাদ্যসামগ্ৰী, তেমনি রয়েছে  বাউলগান, পুতুলনাচ ইত্যাদি গ্ৰামীণ সংস্কৃতির অনুষ্ঠান। ঐতিহ্য ও আধুনিকতা মেশানো প্রতিটি জিনিস বা অনুষ্ঠান বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে।  সন্ধ্যায় চমৎকার আতসবাজির প্রদর্শনীও হয়। আছে নাগরদোলা ও আরো জয়রাইড।

কিন্তু এই একশো ছাব্বিশতম বর্ষে অতিমারীর কারণে এই ঐতিহ্যবাহী মেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু নিয়ম রক্ষার জন্য হয়েছে পৌষ উৎসব। তাতে কী? সামনের বছর নিশ্চয়ই আবার বসবে এই মেলা। তখন আমরা যাবই যাব আমাদের এই প্রাণের পৌষ মেলায়। কয়েকটা "দিবস রজনী" আশায় আশায়-ই থাকি না হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...