বাংলার মেলা

বাংলায় একটা কথা আছে — প্রবাদ বা প্রবচন কিনা সেটা ঠিক জানা নেই, তা হলো "সাত ঘাটের জল খাওয়া"। গত তিনমাস ধরে এই নিবন্ধ লিখিয়ে সাত ঘাট নয়, এগারো ঘাটের জল খেয়েছে এবং পাঠকবন্ধুদেরও জোর করে সেই এগারো ঘাটের জল খাইয়েছে।

আরে না, না, তা কি করতে পারে এই নিরীহ নিবন্ধকার? তবে সে আপনাদের নিয়ে ভাগিরথী গঙ্গার কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘাটে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল। অবশ্যই মনে মনে। সেই ঘাট সিরিজ শেষ করে এবার আসব সবাইকে মিলিয়ে দিতে। অর্থাৎ এবার আসছি "মেলা" নিয়ে... মানে এই বাংলার কিছু মেলায় মেলায় ঘুরতে যাবো এবার আমরা।

মেলা কথাটার আক্ষরিক অর্থ "মিলন"... এই কথাটাতেই মিশে আছে খুশি, আনন্দ, মজা, হৈচৈ। কবে, কোথায়, কখন প্রথম মেলার প্রচলন হয়েছিল তা জানা না গেলেও এটি যে বাংলার আবহমানকাল থেকে চলে আসা এক প্রাচীন ঐতিহ্য এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। সারাবছরই কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো উপলক্ষ্যে মেলা বসে। সেটা কোনো ধর্মীয় উপলক্ষেও হতে পারে আবার এই শীতকালটাকে আরো উপভোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যেও বেশ কয়েকটি মেলার আয়োজন করা হয়। মেলা নিয়ে যখন কথা হবে তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার কয়েকটা লাইন লিখব না তা কি হয়? কারণ এখন শীতকাল। আর এই পৌষ মাসেই পৌষমেলা হয় কবিগুরুর প্রাণের শান্তিনিকেতনে।

পৌষ-মেলা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শীতের দিনে নামল বাদল,
বসল তবু মেলা।
বিকেল বেলায় ভিড় জমেছে,
ভাঙল সকাল বেলা।

পথে দেখি দু-তিন-টুকরো
কাচের চুড়ি রাঙা,
তারি সঙ্গে চিত্র-করা
মাটির পাত্র ভাঙা।

সন্ধ্যা বেলার খুশিটুকু
সকাল বেলার কাঁদা
রইল হোথায় নীরব হয়ে ,
কাদায় হল কাদা ।

পয়সা দিয়ে কিনেছিল
মাটির যে ধনগুলা
সেইটুকু সুখ বিনি পয়সায়
ফিরিয়ে নিল ধুলা ।


মনে করা যেতেই পারে যে গ্রামীণ হাট থেকেই মেলার ধারণা এসেছে। অতীতে রাজা বা জমিদারেরা নানান মেলার আয়োজন বা পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কোনো বিশেষ উপলক্ষে নানা রকম নিত্যপ্রয়োজনীয় বা শখের জিনিসপত্র সাজিয়ে দোকানীরা যেখানে বসেন, নারী পুরুষ, বালক বালিকা মোটকথা আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই যেখানে গিয়ে বিনোদনমূলক কেনাকাটা ও খাওয়া-দাওয়া করে, ঘুরে বেড়ায়, তাই মেলা। মেলা বহু ধরনের হতে পারে। আমাদের এই বঙ্গদেশে মেলার অভাব নেই। মেলা একটি উপলক্ষ্য মাত্র৷ মেলাকে ঘিরে যে আনন্দউৎসব, আয়োজন তা বহুধা বিস্তৃত এবং বর্ণাঢ্যতায় ভরা৷ যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন এই মেলাগুলি আমাদের সাংস্কৃতিক ধারাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছে৷

এমনই কয়েকটি মেলায় এবার আমরা বেড়াতে যাব, নাগরদোলা চড়ব, কাঁচের চুড়ি এবং কাজের জিনিসপত্র কিনব, সেই মেলার ইতিহাস জানব এবং গরম গরম জিলিপি খাব। অবশ্যই মনে মনে... বিশ্বকবি তো বলেই গেছেন.. "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে"... তাহলে, পাঠক বন্ধুগন, মেলায় ডানা মেলার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হয়ে নিন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...