চারু চোখের এক মেয়ে। এসেছিলেন জয় করতে। শুধু হৃদয় নয়, আসমুদ্র হিমাচল। রেল লাইনের ধারে চিলেকোঠার সংসার। ছাদের ঘরখানা চাঁদের ঘর হয়ে উঠেছিল তার নিবিড় ছোঁয়ায়। জামদানি ঘোমটায় আনত দৃষ্টির স্নিগ্ধতায় ভরা পূর্ণিমার আলো। লাবণ্যের ঢল নেমেছিল ছন্নছাড়া অপূর্বকুমারের বাউন্ডুলে জীবনে।
বাঙালি হৃদয়ও বাদ পড়েনি। হাজার বছর ধরে খুঁজে চলা বনলতাকে সে আবিষ্কার করেছিল রেল কয়লার ধোঁয়ায় ঢাকা এক চিল ছাদে। শ্রাবস্তী নগরের কন্যা পান পাতা মুখের অপর্ণা। তাকেই হৃদয় দিয়ে আসছে বাঙালি। একবার নয়, বারবার। হৃদয়ে একটাই নাম 'শর্মিলা'। দ্য ডিম্পল গার্ল। শর্মিলা_টেগোর "কাশ্মীর কী কলি" হয়ে জিতে নিয়েছিলেন গোটা দেশ। কে বলবে তিনি বাঙালি!
গগনেন্দ্রনাথঠাকুরের পুত্র কণকেন্দ্রনাথের নাতনি। জন্ম হায়দ্রাবাদে। বাবা গীতিন্দ্রনাথঠাকুর। মা ইরাবড়ুয়া। ছোটবেলা আসানসোলে। স্কুল অবশ্য কলকাতায়। ডায়োসেশন আর লরেটো কনভেন্ট। কিন্তু তিনি চিরকাল আর পাঁচটা বাঙালি মেয়ের থেকে আলাদা। তাই ঠাকুর বাড়ির মেয়ে, নবাব বাড়ির বেগম হয়েও হয়ে উঠতে পেরেছিলেন 'ব্র্যান্ড শর্মিলা'। যাঁর চোখের দিকে তাকালে হারিয়ে যায় কথার খেই।
"অ্যান ইভনিং ইন প্যারিস" ছবিতে বিকিনি বিলাসে মোহিত দর্শকরা। দর্শককে অসাড় করতে গালের টোল তাঁর অব্যর্থ অস্ত্র। অভিজাত সৌন্দর্যের সঙ্গে মিশেছিল হিরন্ময় কন্ঠ। উচ্চারণ তাঁর চাবিকাঠি। গ্ল্যামার তাঁর অস্ত্র কিন্তু 'ডি-গ্ল্যাম' চরিত্রেও তিনি মুগ্ধ করেন। "ছায়া সূর্য", "সীমাবদ্ধ", "অরণ্যের দিনরাত্রি", "নায়ক", "দেবী" সবেতেই তিনি অলৌকিক অভিনেত্রী।
আজও তিনি ভারতীয় এলিগেন্স-এর উদাহরণ। পর্দায় এসে দাঁড়ালেই শুষে নেন সব আলো।
৭৬ বসন্ত পার হয়েও একই তাঁর বিচ্ছুরণ।