সরস্বতী আরাধনার দিনেই বেজে ওঠে বসন্তের আগমনী

সরস্বতী পুজোতেই বেজে ওঠে বসন্তের সানাই

হইচই শোনা যাচ্ছিল গতকাল রাত থেকেই।পাড়ার ক্লাব হোক, স্কুলের ক্লাসরুম কিংবা বাড়ির দালান।বাদ পড়েনি কোনও জায়গাই।

 সকালের আলো ফুটতেই বাড়ি বাড়ি থেকে ভেসে এল শাঁখের আওয়াজ। চেনা মন্ত্রের গুনগুন।কেউ কেউ ফোনে এঙ্গেজ্‌ড পাচ্ছেন পুরোহিত মশায় কে।

সদ্য গোঁফ ওঠা ছেলেটা সাইকেল নিয়ে ছুটল কাছের সেলুনে। মেয়েরা ঠিক করে উঠতে পারছেনা কোন রঙের শাড়িটায় আজ তাদের মানাবে। ছোটরা হলুদ পাঞ্জাবী আর শাড়ির ভারেই কুপোকাত।

বাগদেবীর আরাধনায় এভাবেই মেতে ওঠে সকলের মন।

এক হাতে কিছু পুঁথি। এক হাতে পদ্ম। রাজ হাঁসে বসে শুভ্রবসনা দেবী বাজাচ্ছেন বীণা। তিনি জ্ঞান ও বোধের প্রতীক।

দেবীর রাজ হাঁস জল থেকেও দুধ কে আলাদা করে নিতে পারে। তার সেই ক্ষমতা আমাদের শেখায় কীভাবে খারাপের মধ্যে থেকেও ভালো-কে খুঁজে নিতে হয়। 

দেবীর চার হাতেরও তাৎপর্য ভিন্ন। মন, একাগ্রতা, মেধা ও আত্মা। অন্ধকারের চাদর সরিয়ে চিরন্তন জ্ঞানের আলোয় অন্তর ভরিয়ে তোলাটাই এই দিনের মাহাত্ম্য।

বাতাসে শীতের আবছা রেশ লেগে থাকে। বসন্ত সানাই বাজিয়ে দেয় নিজের আগমনের। বাগদেবী যেন সেই বসন্তের হাওয়া মেখেই মর্ত্যে আসেন পূজিত হতে।

পাতাঝরার দিন শেষ। মাঘ মাসের পঞ্চম দিনে বসন্ত পঞ্চমী উদ্‌যাপিত হয়। এ সময়ে আবহাওয়া গজলের সুরে বইতে থাকে।অনেক দূরে মিশে যেতে মন চায়।  তাই মনের সব কুঠুরিতেই ভরে ভরে থাকে আনন্দ রস।

 সেই আনন্দঘন পরিবেশ মূর্ত হয়ে ওঠে হলুদ রঙের ছোঁয়ায় সে কারণেই বসন্ত পঞ্চমীতে অনেকেই হলুদ রঙের পোশাক পরে থাকেন। হলুদ রঙ মানেই নতুন আশা। নতুন কাজের শক্তি।শিক্ষা, জ্ঞান, পাণ্ডিত্য ও সমৃদ্ধি মিশে থাকে হলুদের ছটায়।

পুরাণ মতে বসন্ত পঞ্চমীতে দেবী সরস্বতীর জন্ম হয়েছিল। তাই এ দিনটিকে শ্রীপঞ্চমী বলেও অনেকে উল্লেখ করেন। দেবী সরস্বতী ছাড়াও এইসময় ভগবান বিষ্ণু, মহাদেব, সূর্য দেব ও সিদ্ধিদাতা গণেশও পূজিত হন ভক্তদের কাছে।

বসন্তে মনে লাগে প্রেমের ফাগুন।বাঙালির প্রেম দিবস হিসাবেও সরস্বতী পূজোর আলাদা আকর্ষণ।তাই ছাত্র ছাত্রীদের মন জুড়ে অনেক আবেগের ফুলঝুড়ি ফাটে এসময়।

বছরের অন্য সময়ে বাঙালি সংস্কৃতিতে পাশ্চাত্যের গাম্ভীর্য লেগে থাকেলও, এই দিনে নিজস্ব আভিজাত্যেই ফিরে আসতে চায় সকলে।

তাই সকাল থেকে শহরের রাস্তায় ধরা পড়ে চেনা ছবি। বাসন্তী রঙের শাড়িতে কিশোরীরা যেমন মেতেছে পূজোতে, তেমনই গেরুয়া বা অন্য রঙের পাঞ্জাবীতে কিশোরকূল। বাদ যাননি তরুণ-তরুণীরাও।

মনের একটু বেশি কাছে থাকা প্রিয় মানুষটার সঙ্গে কিছুটা সময় না কাটালে আর সরস্বতী পূজোর আনন্দ ষোলোকলা পূর্ণ করল কই! অগত্যা কেউ সিনেমা, কেউ বইমেলা, তো কেউ চেনা অচেনা পার্ক বা সরস্বতী পূজোর প্যান্ডেলেই একটু নিভৃত আলাপচারিতায় মগ্ন হয়।

শুধুমাত্র হিন্দুদের কাছেই নয়, মা পূজিত হন শিখ, বৌদ্ধ ও জৈনদের ঘরেও। সাহিত্য ও শিল্প, তা সে যে ভাষারই হোক- জননী তিনিই। বিয়ের জন্যও এই দিনটি বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়। মনে করা হয় ভগবান শ্রী রামচন্দ্র ও সীতাও বসন্ত পঞ্চমীর দিনে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই উৎসব আলাদা আলাদা রঙে সেজে ওঠে। পাঞ্জাবে এই দিনে দেখা যায় আকাশ জুড়ে ডানা মেলে উড়ছে ঘুড়িবিহারে হাওয়ায় লাগে নবান্নের বোল। উত্তর ভারতে পূজিত হন বিদ্যার দেবী। আবার দক্ষিনে এই দিনটি পালিত হয় একটি মন্দির তিথির আলোকে।

সব মিলিয়ে বসন্তেই মেতে থাকতে মন চায় সকলের। তাই বলতে ইচ্ছে করে সময় হলে বসন্তে এসো

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...