রাশিয়ায় তখন ইহুদী বিদ্বেষ। ইনি তার মধ্যে জিউইশ। ভাবলেন সেই আবহাওয়াতেই যদি ধর্মীয় রাজনীতিকে এক হাত নেওয়া যায়। বয়স ৩৪। শো করে রোজগার চলছে প্রায় পনেরো বছর। এই সময় গোটা আমেরিকাই তাঁকে চেনে এক ডাকে। কিন্তু বিগত পাঁচ বছর ধরে ঘুরে বেরিয়েছেন ইওরোপ মহাদেশে। প্রয়োজন ছিল নতুন ভাবে নজর কাড়ার।
১৯০৪। আহ্বানে একজন পুলিশ অফিসার, সোজা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের একজন জাদ্রেল ও চৌকষ অফিসার। বেঁধে দেওয়া হলো শক্ত শেকলে হাত পা। শেকলে পড়লো নিজের ওজনের থেকেও ভারী তালা। তাও মুক্ত হয়ে গেলেন তিনি। তখনও অক্ষত তালা ও শেকল। হ্যাঁ সম্ভব! হ্যারি হুডিনি হলেই সম্ভব। তাঁর জাদু কেরামতিতে ছিল মুক্তির নিঃশ্বাস। আজ ১৪৬ তম জন্মদিনে তাঁর কফিন থেকেও তিনি হয়তো গায়েব।
যে বয়সে একটা বাচ্চা ছেলের মাঠে খেলতে যাওয়ার কথা, বইয়ের পৃষ্ঠায় অক্ষরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার কথা; তাঁর ভাবনার জগতে ঢুকে পড়েছিল ম্যাজিকের পোকা। নিজের অভিনবত্বে অনায়াসে কব্জা করেছিলেন সেসব জাদুর খেলা। উনিশ শতকে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়া আশ্চর্যের জাদুকর তিনি। শরীরী বিভঙ্গেই রয়েছে ম্যাজিকের বাস। সেই মুক্তির তাগিদেই এত জীবন ঝুঁকি।
দারিদ্র্য ছিল নিত্য সঙ্গী। তাই কাজের খোঁজে হ্যারিকে ঘুরতে হয়েছে দ্বারে দ্বারে। প্রথমে কাগজ বিক্রি, তারপর একটা কারখানায় নেক টাই তৈরির কাজ। মাঝে একজন চিত্র গ্রাহকের সহকারী।সেই কারখানাতেই পেয়ে যান ভবিষ্যতের ঠিকানা। জ্যাক হ্যাম্যান, তাঁর কাছেই প্রথম জাদু বিদ্যার পাঠ নেওয়া। কাজের মাঝেই চলতে থাকে অধ্যবসায়। হাতেকলমে চর্চার পাশাপাশি শুরু হয় জাদু নিয়ে পড়াশুনো। মানুষ জন্মের আগেই স্বাধীন। জন্মালেই কিছু অদৃশ্য শেকল তাকে ঘিরে রাখে শুরু থেকেই। সেই শেকল নিজের লোকেদের পিছুটান। আবার সেই শেকলে জড়িয়ে সামাজিক যুক্তি অযুক্তি।
তাই বন্ধন থেকে মুক্তি - এই হয়ে ওঠে তাঁর শিল্পের জীয়ন। ছেলেবেলা থেকেই পালিয়ে যাওয়ার বড় সখ। সময় ও মুহূর্তকে এইভাবেই পলকে বোকা বানাতে পারতেন তিনি। জমাট গাঁথুনির দেয়াল। মুখ বাঁধা ও সিলমোহর করে দেওয়া দড়ি। পেরেক দিয়ে বন্ধ শক্ত কাঠের বাঙ। বন্ধ কফিন, লোহার বয়লার, তালা আটকানো দুধের ভাড় – এসব বন্ধন থেকে মুক্তির কৌশল তাঁর করায়ত্ত।তিনি মুক্ত হয়ে আসতেন কিন্তু সিলমোহর, পেরেক ঠাসা বাঙ, বন্ধ কফিন – এসব যেমন ছিল তেমনই থেকে যেত। তখন হুডিনি বেশ ছোট। রাবিব মেয়ার স্যামুয়েল ওয়েসজ ও সিসিলিয়া ওয়েসজের ছেলে এরিক ওয়েসজ তখন তিনি। মিলওয়েকে থেকে হাঙ্গেরিতে ঠিকানা বদলাচ্ছিল পরিবার। সে সময় প্রথম নিজের উধাও হওয়ার খেলা দেখান হুডিনি।
এক্কেবারে উধাও হয়ে যন ১২ বছর বয়সে। চড়ে বসেন এক মালবাহী গাড়িতে। পাড়ি দেন শত শত মাইল আর হয়ে যান অনেকদিনের জন্য বেপাত্তা। পালিয়ে থাকার এই সময়টা তার কীভাবে কেটেছিল সেটা জানা না গেলেও, এতটুকু জানা যায় যে, ওই সময়টা কানসাসে কাটিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে নিউইয়র্কে নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন হুডিনি। রবার্ট হুডিনি ছিলেন সেসময়ের নামজাদা জাদুকর। তাঁর পথ অনুসরণ করেই নিজের নাম হ্যারি হুডিনি করে ফেলা। আর ঢুকে পড়া জাদুর জগতে। মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের দরুণ চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া জাদু সম্রাটের। ভাবতে ভালো যদি এটাও তাঁর নতুন কোনও জাদুর প্রদর্শন হতো! ঠিক সেই বারো বছরের শিশুটার মত।