না …না - কোনো ব্র্যান্ডেড ইলেকট্রনিক্স ট্যাবলেট নয় আবার খাওয়ারও নয়। এই ট্যাবলেট মাটির। যারা ইতিহাস চর্চা করেন তাদের কাছে ট্যাবলেট শব্দটি নতুন নয়। ঐতিহাসিক নানা তথ্য অবিকৃত অবস্থায় প্রাপ্ত হয়েছে এই ট্যাবলেট এর মাধ্যমেই। কোনো তথ্যকে অবিকৃত অবস্থায় রাখার জন্য অতীতে বিভিন্ন ধাতব উপাদান, পাথর এবং মাটির ফলক ব্যবহার হতো। ঠিক এমনই ট্যাবলেট আবিষ্কৃত হয়েছে মেসোপটেমিয়া থেকে –যা ‘গিলগামিশের মহাকাব্য’ নামেই খ্যাত এবং সময়ের নিরিখে যা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মহাকাব্য ।
এই মহাকাব্যের মূল চরিত্র ছিল গিলগামেশ, সুমেরিয়ার উরুকের তৃতীয় রাজবংশের রাজা (খ্রিস্টপূর্ব ২১০০) এবং তাকে বর্ণনা করা হয়েছে অর্ধ নরেশ্বর অর্থাৎ অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক ঈশ্বর। বিষয়টিতে সিডার ফরেস্ট (ঈশ্বরের স্বর্গরাজ্য), হাম্বাবা(সিংহরূপী উপদেবতা -যিনি ওই বন পাহারা দিতেন) এবং এংকিডু মূল চরিত্র।
৫টি সুমেরীয় কবিতা নিয়ে এই মহাকাব্য। অনেক পরে আক্কাদীয় মহাকাব্যে এর উল্লেখ পাই। ১২টির মধ্যেই খুব সামান্য ট্যাবলেট প্রাপ্ত হয়েছে যা 'সিন্-লেকি-ওন্নিনি' সম্পাদনা করেন (৭ম খ্রিস্টপূর্বাব্দে) এবং আসিরিয়ান রাজা অসুরবানিপাল উদ্ধার করে তার সংগ্রহশালায় রাখেন। ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের একটা শুটার -এলি-সারিরি সিঙ্গল 'প্রাচীন ব্যাবিলনীয় ট্যাবলেট' পাওয়া গেছে। ১৮৫৩ সালে হেনরি লেয়ার্ড এই মহাকাব্য আবিষ্কার করেন। ১৮৭০ এ জর্জ স্মিথ এই মহাকাব্যের আধুনিক অনুবাদ করেন। ২০০৩ এ অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ২ খন্ডে এর প্রকাশনা করেন। বর্তমানে আসিরিয়ান ও গ্রিক মিউজিয়ামে এই ট্যাবলেট এর কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে।
১২ খন্ডের এই মহাকাব্যের ১ ম খন্ডে আছে রাজা গিলগামেশের পরিচয়, ২ থেকে ৫-এ গিলগামেশ ও এনকিদুর সেডের ফরেস্ট ধ্বংস ও হাম্বাবার গল্প এবং ৬ থেকে ১২ তে আছে রাজার পরিণতি এবং সমুদ্র সমাধি। যদিও এই মহাকাব্যের মূল চরিত্র গিলগামেশ আধুনিক নাটকে ইজডুবা নামে অধিক পরিচিত এবং নতুন প্রকাশনা মেসোপটেমীয় সভ্যতার সাহিত্যগত দিক থেকে এক অন্য চরিত্র উত্থাপন করেছে, যা ইতিহাসবিদ ছাড়াও সাধারণ পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় হয়েছে।