এই বাড়িতে মায়ের গায়ের রং কালো কিংবা নীল হয়না। মায়ের রং এখানে সবুজ। ‘সবুজ কালী’ রুপে মা পূজিত হন। এছাড়া পুজো পদ্ধতি এবং ভোগেও রয়েছে এক অন্য ধরণের ছোঁয়া।
হুগলির হরিপাল থানার শ্রীপতিপুর পশ্চিম গ্রামের ৭০ বছরের এই প্রাচীন ‘সবুজ কালী’র পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। এই গ্রামের অধিকারী পরিবারেই ‘সবুজ কালী’ মায়ের পুজো হয়।
জানা গিয়েছে যে ভূত চতুর্দশীর রাতে ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে মানত করা হয় এবং সবার বিশ্বাস এই ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে মানত করলে সকল ইচ্ছা পূরণ হবেই। এদিন দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে মায়ের দর্শনের জন্যে বহু পুণ্যার্থীদের ভীড় হয়।
বিশেষ ষোড়শ উপাচারে পুজো হয়। সঙ্গে হোমযজ্ঞ করা হয়। এখানে পুজোর রাতে টানা তিন ঘণ্টা বাঁশি বাজিয়ে মাকে শোনানো হয়। রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একটানা বাঁশি বাজে এবং ওই দিন ভোগে থাকবে ইলিশ মাছ।
কিন্তু কিভাবে শুরু হয় ‘সবুজ কালী’ মায়ের পুজো? হরিপালের দরিদ্র গোড়া বৈষ্ণব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাশের পর চাকরি সূত্রে চলে যান ভিনরাজ্যে। কিন্তু ফিরে আসেন গ্রামে। তারপর শুরু করেন চাষাবাদ। পরিবারের চাপে পড়ে আঙুরবালা দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় বটকৃষ্ণের। তবে, সংসারে তাঁর মন ঠাঁই হয়েনি, মাঠে-ঘাটে- শ্মশানেই ঘুরে বেড়াতেন তিনি।
স্থানীয়দের মুখ থেকে শোনা যায় যে একবার বটকৃষ্ণ মাঠে গরু বাঁধার সময় এক সাদা বস্ত্র পরণে সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। তারপর তাঁর কাছে দীক্ষার দিনক্ষণ জানতে যান এবং সমস্ত তথ্য বলে দেন সন্ন্যাসী। তারপর শ্মশানে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন তিনি। এরপর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
এরপরেই আসে বাধা। বৈষ্ণব বাড়িতে কালীপুজো? কখনও হতে পারে না, এটাই ছিল পরিবারের মত। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তিনি বাড়িতে কালীর ঘট স্থাপন করলেন। এর পর স্বপ্নাদেশ পেয়ে কালী মূর্তি স্থাপন হল। রটন্তী কালীপুজোর দিনেই ‘সবুজ কালী’ মায়ের প্রতিষ্ঠা হয়।
জানা গিয়েছে, এই কালীপুজোয় কোন বলি প্রথা নেই। এছাড়া ‘সবুজ কালী’র প্রিয় জুঁই ফুল তাই সেই ফুল ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ।