ফ্রান্সের এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার গুস্তাভ আইফেলের সখ হলো ফরাসী বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ১৮৮৯ একটা সুদীর্ঘ কোনো স্থাপত্য নির্মাণ করবেন এবং তা হবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অর্থাৎ প্যারিসে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ১৮৮৯ সালে শেষ হয় সেই স্থাপত্যের কাজ। গুস্তাভো আইফেল নির্মিত ৩২০ মিটার তথা ১০৬৩ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারটি সেই থেকে আজও কিন্তু বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্যের তালিকায় নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার গুস্তাভ আইফেলের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে, যার সংস্থা টাওয়ারটির ডিজাইন তৈরি করেছিল। গুস্তাভো আইফেল রেলের জন্য সেতুর নকশা প্রণয়ন করতেন এবং টাওয়ারটি নির্মাণে তিনি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন। ১৮,০৩৮ খণ্ড লোহার তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছোট-বড় কাঠামো জোড়া দিয়ে এই টাওয়ার তৈরি করা হয়েছিল। ৩০০ শ্রমিক এই নির্মাণ যজ্ঞে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু প্রধান স্থপতি ছিলেন স্টিভেন সাভেস্টার। টাওয়ারটিতে দর্শকদের জন্য তিনটি স্তর রয়েছে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের রেস্তোঁরা রয়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরে উঠতে টিকিট কেনা যায়। শীর্ষ স্তরের সিঁড়ি থাকলেও ৭টি লিফ্টের মাধ্যমে তা অ্যাক্সেসযোগ্য। এ তো গেলো এর জন্ম বৃত্তান্ত।
ধীরে ধীরে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার সকলের আকর্ষণের ও চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। যার চর্চা সাহিত্য থেকে শুরু করে গানে এমনকি ভ্যান গগ, অস্কার চাইল্ড এদের শিল্পে এই টাওয়ারের মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে নানা ভাবে। জানা যায় তার রোমান্টিক সত্ত্বার কথাও। সে যাই হোক কিন্তু যার মুগ্ধতায় মজে আছে বিশ্ববাসী তার প্রতি বিরাগভাজন ছিলেন এমন ব্যতিক্রমী মানুষ নিয়েই আজকের গল্প।
এর সমালোচনায় বেশ কিছু সমাজের উপরতলার মানুষ বিশিষ্ট স্থপতি চার্লস গার্নিয়ারের নেতৃত্বে নিজেদের বিরুদ্ধবাদী এক সংগঠন গড়ে তুললেন, নাম দিলেন কমিটি অফ থ্রি হান্ড্রেড। তাদের মধ্যেই অনেকের ধারণা ছিল এই আইফেল টাওয়ারের কারণেই ল্যুভ মিউসিয়াম, নত্রে ডাম চার্চ বিখ্যাত জায়গাগুলোর মাহাত্ম কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে, আবার অনেকের মতে এই শিল্পের শহরে এক বিশাল ১০৬৩ ফুট উঁচু লোহার টাওয়ার যে বাড়তি কি শোভা বিস্তার করেছে কে জানে !
কিন্তু বিরক্তিতে কেউ শহর ছেড়েছেন এমন শুনেছেন কখনো? এবার তার কথা বলি - এদের মধ্যে মোপাসাঁর মতো এই কিংবদন্তি লেখকও এই বিস্ময়কর সৃষ্টির প্রতি চরম বিরক্ত ছিলেন। এমনকি এই আয়রন লেডি অফ প্যারিসের সামনেও আসতেন না তিনি। কোনো ভাবেই এই সৌধ যেন তার চোখে না পড়ে তাই এই টাওয়ারের নীচের রেস্তোরাঁয় যেতেন খেতে। এই কারণেই তিনি প্যারিস ছেড়ে চলেও গিয়েছিলেন। তবে যে শহর তিনি ত্যাগ করেছিলেন মৃত্যুর পর তাকে সেই টাওয়ারের স্বল্প দূরত্বেই সমাহিত করা হয় - যেখান থেকে এই সৌধ দেখা যায় না পুরো। তাই মৃত্যুর পর আংশিক শান্তি অনুভব করেন তিনি। যদিও তার এই দেশত্যাগ শুধুমাত্র একটি সৌধের প্রতি বিরূপতার জন্য এ ঘটনাও বিস্ময়ের থেকে কম কি !