সুর, তাল, লয় এসবের মিশ্রণে যদি কোন মানুষ গড়া যায়, যাঁর শরীরে রক্তধারার সঙ্গে বইবে সুন্দরের ঝংকার, যাঁর আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে চারিদিক, এমন মানুষের কথা বললে যাঁর মুখ আমার অন্তরে ভেসে ওঠে তিনি উত্তম কুমার। এক সিনে দেবদূত। মহানায়ক। আমার কাছে তিনি প্রেমের মূর্ত প্রতীক। দৃঢ়তা, বলিষ্ঠতার ধারক। তিনি তাঁর স্নেহচ্ছায়া দিয়ে আগলে রাখতেন সকলকে। জুনিয়র আর্টিস্টরাও তাঁর মেকআপ ভ্যানে নির্দ্বিধায় জায়গা পেতেন। পর্দার বাইরেও এই স্নেহশীল মানুষটির উপস্থিতি নায়কসুলভই ছিল। আর পর্দায় তাঁর আগমনে সুগন্ধিত হয়ে উঠত সিনেমার স্ক্রিন। যে কোনো ধরনের চরিত্রেই সাবলীল ছিলেন তিনি। আজও 'সপ্তপদী'র কৃষ্ণেন্দুর মত একটা প্রেমিক খুঁজে বেড়াই। 'হারানো সুর'এ অলক ও রমার বিরহানলে কাতর হয়েছে সকল দর্শক। 'সন্ন্যাসী রাজা'য় এক দোষে গুণে গড়া মানুষের সর্ব মোহমুক্ত হয়ে অসাধারণত্বে উত্তরিত হবার কাহিনী জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ চাহিদাগুলোর সঙ্গ ছাড়তে অনুপ্রেরণা যোগায়। 'অগ্নিশ্বর'এর সেই বলিষ্ঠ, আত্মম্ভরিতাহীন চিকিৎসকের প্রয়োজন বোধহয় আজ সবচেয়ে বেশি। তাঁর প্রত্যেকটি চরিত্রে যা সবচেয়ে বেশি খুঁজে পেয়েছি আমি তা হল জীবন। তাঁর সেই ভুবন ভুলানো হাসিতে আস্ত একখানা রূপকথার খোঁজ মেলে। সারা জীবন অভিনয়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থেকেছেন তিনি । তাই হয়তো 'ওগো বধূ সুন্দরী'র সেটে অভিনয়এর মধ্যেই কাল ঘুমে তলিয়ে গেছেন। যেন কোন স্বপ্নলোকে যাত্রা করেছেন। ১৯৮০র ২৪শে জুলাই এ তাঁর শবযাত্রা পরিণত হয়েছিল শোভাযাত্রায়। তাঁর জন্য শব্দকে সুরে বাঁধতে ইচ্ছে করলে বৈষ্ণব সাহিত্যের কথাই মনে পড়ে "তুমি মধু, তুমি মধু, তুমি মধুর নিঝর"। আজ তাঁর জন্মদিনে আমার অন্তরের শ্রদ্ধার্ঘ্য।