অদৃশ্য শিবলিঙ্গ

অতুল্য ভারতে এমন অনেক কিছুই আছে যা হয়তো সারা পৃথিবীতে কোথাও নেই। এই অমূল্য জিনিসগুলিই হল ভারতের আসল সম্পদ। এরকমই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলে আমাদের অজান্তেই, সমুদ্র থেকে জেগে ওঠেন ভগবান শিব। এটি হল গুজরাটের ভদোদরা শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে কভি কাম্বোই নামক স্থানে আরব সাগরের তীরে অবস্থিত একটি শিবের মন্দির, যার আশ্চর্য ও অলৌকিক কাহিনী বোধহয় অনেকেরই অজানা। 

স্থানীয়ভাবে এই মন্দিরটি স্তম্ভেশ্বর মহাদেব মন্দির নামেই পরিচিত। লোকমুখে এই মন্দিরের ইতিহাস যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তার ফলে ধীরে ধীরে পর্যটকদের কাছেও এই মন্দিরের গুরুত্ব বাড়ছে। লোকমুখে কথিত আছে যে এই মন্দিরে শিবের কাছে যা চাওয়া হয় তা নাকি পূরণ হয়ই। স্বাভাবিকভাবেই শরণার্থী ও ভক্তদের ভিড় ক্রমশই বাড়তে থাকে। মন্দিরটি সমুদ্রের তীরে অবস্থিত। এর চারপাশে শুধুই সমুদ্রের জল, সমুদ্রের নীল জলরাশি এসে আছড়ে পড়ে মন্দিরের গায়ে। পুণ্যার্থীরা ইচ্ছামতো এই মন্দিরে যেতে পারেন না। প্রভুর দর্শন পেতে গেলে ভাঁটার সময় আসতে হয়। কারণ এই সময় ছাড়া অন্য সময় এই মন্দির থাকে সমুদ্রের জলের নীচে। জোয়ারের সময় মন্দিরটি জলের তলায় চলে যায়, শুধুমাত্র মন্দিরের উপরের অংশ এবং মন্দিরের ধ্বজাটি দেখা যায়। দুপুর হলে আস্তে আস্তে নামতে থাকে সমুদ্রের জল এবং ক্রমশ প্রকাশিত হতে থেকে শিবের মন্দির। দর্শনার্থীরা একে একে আসতে শুরু করেন এবং মহেশ্বরকে পূজা নিবেদন করতে থাকেন। 

এই মন্দিরের লোকমুখে শোনা অনেক ইতিহাস রয়েছে। কেউ বলেন যে বাবা ভোলানাথ নাকি কোনো ভক্তকেই এখান থেকে খালি হাতে ফেরান না। আরো বলা হয় যে সবাই নাকি এখানে এলেই প্রভুর দেখা পায় এমনটাও হয় না, বাবার দেখা পাওয়া এক সৌভাগ্যের ব্যাপার।

তাছাড়া এই মন্দিরের সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনীও, বলা হয় যে তাড়কাসুর কঠোর তপস্যা করে শিবকে তুষ্ট করেন এবং তিনি খুশী হয়ে তাঁকে তাঁর ইচ্ছামতো অমরত্বের বর দেন, একমাত্র মহাদেবের পুত্র যার বয়স ছয় দিন সেই বধ করতে পারবে। এই বর পেয়ে সেই অসুর সর্বত্র ভয় ছড়াতে শুরু করে, সমস্ত দেবদেবী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। এর পর, শিবের পুত্র কার্তিক ছয় বছর বয়সে তাড়কাসুরকে হত্যা করেন এবং সকল দেবদেবীকে ভয়মুক্ত করেন। যেহেতু তাড়কাসুর তাঁর পিতা পালনকর্তা শিবের ভক্ত ছিলেন, তাই ওই জায়গাতেই শিবের মন্দির নির্মিত হয়েছিল। যা বর্তমানে স্তম্ভেশ্বর মহাদেব মন্দির বলা হয়। আর এই মন্দিরের বিশেষত্ব এটাই যে এখানে শিবলিঙ্গের জলাভিষেক নিজে থেকেই হয় সমুদ্রের জলে, দিনে দুবার।

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...