চালের ঢঙে স্বাদ বদল বিরিয়ানির

চালের ঢঙে স্বাদ বদল বিরিয়ানির

মোগল রন্ধন শিল্পে নতুন রঙে মিশেছে বাংলার গোবিন্দভোগ।

খাওয়ার কিন্তু দেশ কাল সীমানার বাঁধা পরোয়া করে না। ধর্মের যুযুধানে সে চলে নিজের খেয়ালে। আপন স্বাদের গুনে, গন্ধে।

ফিরোজ শাহ্ কোটলা।দুর্গ। সেই চোদ্দ শতকে দিল্লির সিংহাসন তখন তুঘলকি শাসনের আড়ালে। সেই সময়ের ইট কাঠ পাথরের চেয়ে বর্তমানের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দৌলতেই আজ তার পরিচয় বেশি।

প্রত্যেক বৃহস্পতিবার সেই দুর্গ - করে কীসের সুবাসে! সন্ধের চাঁদ তখন দাঁত কপাটি খুলে হাসছে।

এদেশের ইরানীয়দের জটলা সেখানে।পূর্ব পুরুষদের উদ্যেশ্যে প্রার্থনা নিয়ে তারা হাজির হয়। আর যাদের প্রার্থনা পূরণ হয়েছে তারা এসেছেন হাতে প্যাকেট সমেত।ধন্যবাদ জ্ঞাপন।

bi-2

বিরিয়ানি। সুরভিত।

এই দুর্গের ধ্বংসাবশেসেই নাকি অনেক জীনের বাস। তারা মনের ইচ্ছে মেটায়।

ভারতবর্ষ বিচিত্রতার ক্যানভাস ।বিরিয়ানির মায়ায় সেখানে দেশ বিদেশের পার্থক্য যায় ঘুঁচে।যা কিছু পুরনো ছেড়ে ফেলে নতুনের দিকে পা বাড়ায় সকলে। তাই ইরানীয়রা প্রার্থনা জানায় ভারতীয় বিরিয়ানির স্বাদে আহ্লাদে।

ইরানে বিরিয়ানি  বেরিয়ান নামেই খ্যাত। দেশীয় বিরিয়ানির থেকে সে স্বাদে সম্পূর্ণই আলাদা। নতুনের মিশেল। ভেড়ার মাংস গলিয়ে, কিমা করে সঙ্গক  রুটির ভিতর মাখিয়ে পরিবেশন করা হয়। অনেকটা স্যান্ডউইচ।

bi-1

পারস্য দেশের অনেক ফুড ব্লগাররা আবার মতামত দেন সঙ্গক  রুটির বদলে সারডুয়া  রুটিতে এর স্বাদ না কি দ্বিগুন ছোঁয়।

নুসকা-ই-শাহ্‌জাহানীমোগল রন্ধন শিল্পের এনসাইক্লোপিডিয়া। সেখানেও উল্লেখ আছে এই বেরিয়ান  এর।যদিও ভারতে রুটি নয় চালেই এর পরিচয়। প্রকৃত জন্ম কোথায় না বলা গেলেও যে যার বৈশিষ্ট্যে স্বকীয়।

প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস কাঁধে ঝুলছে আদরের বিরিয়ানির। স্থান বিভেদে হরেক নাম আর হরেক স্বাদ কপালে জুটলেও; ভারতেই তার আঁতুড় ঘর। সে বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশই নেই।

কেরলের মাপ্পিলা না তামিলনাড়ুর আম্বার ? কলকাতা-লখ্‌নউ-হায়দ্রাবাদী? কে, কাকে বাহারে ছাপিয়ে যায়! এই তর্কের ঝড় আজও এখানে সেখানে শোনা যায়।যাবেও।

আসলে এই তর্কের কোনও শেষও নেই যে। এত রাজ্য, তাদের মশলা ও চালের রকমফের। এসবে মিলে মিশেই তো বিরিয়ানির মূল রসদ।

bi-3

তবে আলোচ্য হতে পারে এতে ব্যবহৃত চালের রকমভেদ নিয়ে।লখ্‌নউ এর বিরিয়ানি তার সুবাস পায় বাসমতীর পরশে। জাফরান আর কেওরা-র গন্ধও ছাপিয়ে যায় সেই চাল।

কিন্তু সেই বাসমতীর গুনেও ছ্যাকার মত এসে লেগেছে কালোবাজারির কালো ছায়া। এতে করে মর্যাদাও ক্ষুণ্ণ হয়।

অন্যদিকে, এসবের প্রভাবও ক্রমশ বেড়েছে। এর পিছনে কারণ দেশের অগুনতি সাধারণ মানুষ। বিরিয়ানি তো তাদেরও জিভ টানে না-কি!

biryani

সেলা চালে তুলনামূলক বিরিয়ানি তৈরি হতে সময় লাগে কম। তাড়াতাড়ি গলে যায় চাল। রান্নার পদ্ধতিও সহজ। কাজেই এই চালের জনপ্রিয়তা বর্তমান বাজারে তুঙ্গে।

বলতে হয় আম্বার বিরিয়ানির  কথা। কথিত যে ট্রাক ড্রাইভাররাই নাকি এই বিরিয়ানির বিখ্যাত হওয়ার জন্য দায়ী। প্রথাবিরুদ্ধ বিরিয়ানি প্রক্রিয়া একটি।

মূল রাজকীয় শৈল থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণের হাতে নেওওার মত বিরিয়ানি।মিশেছে বাংলার গোবিন্দভোগ।

কাইমা। কেরলের নিজস্বতা। মশলামুখর দম্‌ বিরিয়ানি। আর্কট চালের তৈরি বিরিয়ানি থেকে সরে এসে একটু অন্যরকম স্বাদের পরিচয়। থালাসারি এর স্থানীয় নাম।

bi-4

ধনী হোক আর দরিদ্র; অফিস ফেরত কেরানী হোক কিংবা ছা-পোষা রোজগেরে; কুলি-মজুর থেকে বড় ব্যবসায়ী – বিরিয়ানী এখন সবার বসার ঘরের এক পোক্ত সদস্য। তাকে সরায় কার সাধ্যি!

অন্তত শনি-রবি-র রাতে

 

                                                                                                                   ছবি- প্রতীকী

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...