আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। তারপরেই শুরু হয়ে যাবে আমাদের বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। সাধারণ মানুষ থেকে পুজো উদ্যোক্তা, শপিং মল-বাজার থেকে মৃৎশিল্পী, চারদিকের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। পুজোর আমেজ আমাদের মায়ের আগমনীবার্তা শোনায়। এর মধ্যেই নিরলস পরিশ্রম করে চলেন কিছু মানুষ, যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আমরা পুজোর ক'টা দিন চোখ জুড়োনো সব প্রতিমা দেখতে পারি। এর মধ্যে মৃৎ শিল্পীরা যেমন রয়েছেন, তেমনি মায়ের সাজ সম্পূর্ণ করতে রয়েছেন শোলা শিল্পীরা। শোলার অসাধারণ অলঙ্কার মা দুর্গার সাজ যেন পরিপুর্ণ করে তোলে।
উত্তরদিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে রয়েছেন এমনই এক দম্পতি। যাঁদের হাতের জাদুতে শোলা হয়ে ওঠে প্রতিমার সুসজ্জিত অলঙ্কার। তাই সুনীল মালাকার এবং মায়া মালাকার এখন দিনরাত এক করে গড়ে তুলছেন একটার পর একটা শোলার অলঙ্কার। বহু বছর ধরেই তাঁদের হাতের জাদুতে তৈরী হওয়া শোলার অলঙ্কার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যায়। পুজো উদ্যোক্তারা বার বার তাঁদের কাজের টানে ফিরে ফিরে আসেন অলঙ্কারের অর্ডার দিতে। উত্তরদিনাজপুর জেলায় একমাত্র এই শিল্পী যুগল শোলার অলঙ্কার তৈরী করেন। তাই রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, মালদহ, শিলিগুড়ি, কোচবিহার বিভিন্ন জেলা থেকে বরাত আসে এই শিল্পী দম্পতির কাছে। সুনীলবাবু জানান, তাঁরা ৪০বছর ধরে প্রতিমার জন্য শোলার অলঙ্কার তৈরী করছেন। মায়াদেবী বলেন, স্বামীর সঙ্গে যতটা সম্ভব তিনি কাজ করে থাকেন। এক সময় তাঁদের সন্তানেরাও কাজে সাহায্য করত। কিন্তু বর্তমানে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে এবং ছেলে অন্য পেশায় যুক্ত হয়ে যাওয়ায় তাঁরা দুজনেই এই কাজ করছেন। সারা বছর কাজ থাকলেও দূর্গাপুজোর সময় মূলত কাজ যথেষ্ট বেড়ে যায়। শোলা গাছের কান্ড তাঁরা সংগ্রহ করেন ইটাহার, মালদহের বিভিন্ন জায়গা থেকে। মূর্তি তৈরির অনেক আগে থেকেই অলঙ্কার তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রতিবছর নতুন ডিজাইন করার চেষ্টা করেন এই দম্পতি।
তাই এই মুহূর্তে তাঁদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। দেবীকে সালঙ্কারা করে তুলতে রাত-দিন এক করে তাঁরা কাজ করে চলেছেন। নতুন নতুন ডিজাইন তৈরিতেই তৃপ্তি আসে এই দম্পতির। ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করেই দাম নির্ধারণ হয়। সাধারণত ৫০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত দামে এগুলি বিক্রি হয়। তবে সৃষ্টির আনন্দকেই বেশি করে উপভোগ করেন এই দম্পতি অর্থ উপার্জনের চেয়ে, এমনটাই জানালেন।