ছবিতে থাকুক স্মৃতিরা

দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারিণী রানী পদ্মাবতীর জলের মধ্যে ভেসে ওঠা প্রতিবিম্ব এক ঝলক দেখেই নাকি তাঁর প্রেমে পড়েছিলেন। রানীর ছবি সংগ্রহ করার সুযোগ থাকলে যে কি হত! ইতিহাসের পাতায় এই ধ্বংসাত্মক প্রেমের কথা সে ক্ষেত্রে হয়তো অন্যভাবে লেখা থাকত। ছবি মানেই নস্ট্যালজিয়া। রংবেরঙের গল্প কথা। অনেক মন খারাপের সমাধান সূত্র। ব্যোমকেশ,ফেলুদা, কিরীটির কত জটিল রহস্যের সমাধান করে দিয়েছে ছবি। ফটোগ্রাফ। 'ফটোগ্রাফ' সিনেমায় রফি ও মিলোনীর নীরব প্রেমের সূত্রপাত ঘটে 'গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া'র সামনে তোলা একটি ছবি থেকে। শ্রেণীগত বিভাজন, অসম সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মেলবন্ধনে এক প্রেম কাহিনীর গতানুগতিক সমাপতন ঘটলেও কোথাও ছবি হয়ে ওঠে শাশ্বত। ছবি এভাবেই আমাদের সঙ্গ দেয়। ঘরে থাকা মানা সিরিজের তৃতীয় পর্বে আজ আমরাও হাঁটবো ছবির সরণি বেয়ে। আজ সঙ্গ দেবে সেই সব ছবিরা যারা আমাদের ভ্রমণ পথের সঙ্গী। যাদের গায়ে লেগে থাকে অমলিন স্মৃতির গন্ধ। অর্থাৎ ট্রাভেল ফটোগ্রাফি। ছবি তোলা ভ্রমণ প্রিয় মানুষের কাছে নেশার মত। অনেকে বেড়াতে যেতে ভালোবাসেন শুধুমাত্র ছবি তোলার জন্য। কারোর আবার এই নেশাই পেশা। যেমন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার। বন্যপ্রাণীদের ছবি তোলাও ট্রাভেল ফটোগ্রাফির একটি বিশেষ অংশ। গহীন অরণ্যে বসবাসকারী জীবজন্তু, পক্ষীকূলের ছবি তোলার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে রীতিমতো ক্যামেরা তাক করে নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকেন ছবি সংগ্রহকারীরা। তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় বিধি নিষেধ মেনে। নানা ঐতিহাসিক ইমারতের উচ্চতাকে ফ্রেমবন্দি করতে ভালোবাসেন অনেকেই। কেউ আবার প্রকৃতির সুচারু শিল্পকলাকে ছবির মাধ্যমে গেঁথে রাখেন নিজেদের মনে।প্রকৃতি, ইমারত,বন্যপ্রাণীকে ছাপিয়ে অনেকেরই বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্য হয় মানুষের জীবনযাত্রা পর্যালোচনা করা। তাঁদের জীবনের গল্প হয়ে ওঠে ছবিদের উপজীব্য। এ বিষয়ে 'ওয়ান প্ল্যানেট' নামের বইটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বইটির একদিকের পৃথিবীর নানা প্রান্তে বসবাসকারী মহিলার হাসিমুখের ছবি,অন্যদিকে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্যের তুলনা। 'আ্যলং দ্যা এইজ অফ ডেলাইট'বইটিতে চিত্রগ্রাহক প্রকৃতি জুড়ে আলোর মায়াময় আঁকিবুকির কথা আলোচনা করেছেন। বুদ্ধদেব গুহর ভ্রমণ সংক্রান্ত বইগুলিও এরকম অজস্র অভিজ্ঞতা ও ছবির সম্ভার। বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সাধারণ ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের কাছেও ছবি তোলা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথাগত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও চিত্রগ্রহণের বিষয়ে প্যাশনেট মানুষের অভাব নেই। প্যাশন ও সহজাত দক্ষতাকে সঙ্গী করে তাঁরা বেরিয়ে পড়েন ছবি সংগ্রহ করতে। সাধ্যমত পরিসরে তাদের ছবির সংগ্রহ রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয়। আমাদের পরিচিত মানুষজনের তালিকায় এমন দু ‘একজনের খোঁজ পাওয়া যায় বৈকি। কিছু মানুষ আছেন যাঁরা এসবের আওতায় আসেন না। নেহাত স্মৃতি জমানোর জন্যই বেড়াতে গিয়ে ছবি তোলেন। ছাপোষা মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর এই সংগ্রহ করা ছবিগুলোর মধ্যে থাকে এক অদ্ভূত স্নিগ্ধতা। স্মৃতিদের লুটোপুটি খেলা। খুব বিশেষ ব্যাকরণ মেনে ছবিগুলো তোলা না হলেও কোন অলস দুপুরে সেই ছবিরাই তাদের নিয়ে যায় স্মৃতির পথে। এক লহমায় পৌঁছে দেয় ফেলে আসা দিনগুলিতে। তবে আজকাল ছবি প্রিন্ট করানোর চল সেভাবে নেই বললেই চলে। তাই মুঠোফোন বা কম্পিউটার স্ক্রিন জুড়ে স্মৃতির আঁকিবুকি কাটতে ভ্রমণ পথে পাওয়া ছবি রত্নখচিত মণি-মাণিক্যেরই সমান।

travel-body (1)

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...