পাখি-জীবনের মানুষ

 

জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন,

 যে জীবন শালিকের, দোয়েলের

মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা।”

কবির আফসোস ছিল। দোয়েল-শালিক জীবনের সন্ধান মানুষ কখনও পায় না।

 তবে কেউ কেউ বোধহয় পেয়েও যান পাখি-জীবনের খোঁজ।

যেমন জোসেফ সিকার। সারা পৃথিবীর কাছে যাঁর পরিচয় বার্ডম্যান’

হাজার হাজার পাখির ডাকে রোজ ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যায় রোয়াপিত্তাহের মানুষদের। চেন্নাইয়ের এই এলাকাতেই জোসেফের বাড়ি। দিনের আলো ফুটলেই যেন গোটা আকাশটা নেমে আসে তাঁর ছাদে। ঝাঁকে ঝাঁকে হলুদ, সবুজ, রঙিন ঝিলিক। ভয়ডরহীন টি-টি। ঠোঁটে- ঠোঁটে কিচিরমিচির। ডানা ঝাপ্টা-ঝাপটি। হালকা পলকা পালক শরীরের লাফালাফি- খুনসুটিতে বদলে যায় জোসেফের পাড়ার মন-মেজাজ।

 প্রত্যেকদিন নিজের বাড়ির ছাদে পাখিদের খাওয়ান জোসেফ। গত ১৪ বছর ধরে একদিনও বাদ পড়েনি। ঝড়, বৃষ্টি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় কোনও বাধাই বাধা নয়। রোজ ভোর ৪টের সময় ঘুম ভাঙ্গে তাঁর। তারপরই সোজা ছাদে।

৬৩ বছরের যোসেফ পেশায় ক্যামেরা টেকনিসিয়ান। আয় সামান্য। রোজগারের অর্ধেকটাই চলে যায় পাখিদের খাওয়াতে। জোসেফের বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৮,০০০ পাখি আসে। রোজ ৩০ কেজি চাল লাগে তাদের খাবারের জন্য।

   পাখিদের খাওয়ানোর ভাবনাটা শুরু হয় ২০০৫-এ সুনামির পর।

কাঠবেড়ালি আর শালিকদের জন্য রোজ বাটিতে সামান্য চাল আর জল রাখতেন জোসেফ। সুনামির পর হঠাৎ একদিন দেখেন শালিক, কাঠবেরালির সঙ্গে এক জোড়া নতুন পাখির আগমন। আগে কখনও দেখা যায়নি। গলায় কালো রিং টিয়া। তারপর থেকে রোজই দেখা যেতে লাগল তাদের। দেখে মনে হত প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আছে পাখি গুলো।

জোসেফের মনে হয়, চালের দানার পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দেওয়া দরকার। পরদিন থেকে সকাল সন্ধে বাটির বদলে ছাদের ওপর কাঠের ট্রে তে খাবার দিতে লাগলেন। দিন কয়েক পর দেখা গেল ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া নামছে ছাদের ওপর। এসে দানা মুখে নিয়েই আবার উড়ে যাচ্ছে।

২০১৫ তে আবার ঘটল এরকম ঘটনা। ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত চেন্নাই। জোসেফের ছাদে আরও বেড়ে গেল পাখির সংখ্যা। আগে ছাদে ৩০০০ পাখি আসত রোজ। বন্যার পর দেখা গেল সংখ্যাটা প্রায় ৫০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

অন্যান্য স্বাভাবিক দিনে যেখানে ২ বার ছাদে উঠলেই হয়ে যেত। বন্যার সময় তাঁকে দিনে অন্তত ৫ বার ছাদে যেতে হত। পাখিদের খাবার দেওয়ার জন্য। পাখিদের আসার সংখ্যা এতটাই বেড়ে যায়।

পাখিরা মোটেই ফল খেতে ভালবাসে না। বেশ কয়েকবার জোসেফ তাদের ফল দিয়ে দেখেছে। কিন্তু তারা দানা জাতীয় খাবারেই বেশি স্বছন্দ। 

চেন্নাইয়ের রোয়াপিত্তাহ অঞ্চলে টিয়া সেভাবে দেখা যেত না। কিন্তু জোসেফ সিকারের এই উদ্যোগের পর  রোয়াপিত্তাহ এখন কালোবেড় টিয়াদের জন্য আদর্শ স্থান হয়ে গিয়েছে। প্রচুর টিয়া দেখা যাচ্ছে নিয়মিত।

 পাখিগুলো দানা খেয়ে উড়ে যায়। মুক্ত আকাশে তাদের খুশি-খুশি ডানা। সেই দিকে তাকিয়ে থাকেন জোসেফ। তাদের খুশিই তাঁর প্রতিদিনের প্রাপ্তি। 

 

 

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...