শাল শিমুল আর পিয়াল বন ঘেরা ঝাড়গ্রাম জেলা। জঙ্গলের গন্ধ আর ছমছমে রহস্য যেন মিলেমিশে ঘুরে বেড়ায় এই শহরের হাওয়ায় হাওয়ায়। সঙ্গে ইতিহাস। রাজ-রাজড়া-যুদ্ধ আর মিথ।
ঝাড়গ্রাম জেলার অন্যতম আকর্ষণ ঝাড়গ্রাম রাজপ্রাসাদ। ঝাড় গ্রাম থেকে রাজবাড়ির দূরত্ব ৩ কি মি। ষোড়শ শতাব্দীতে রাজা মান সিং তখন বাংলা এবং বিহারের দেওয়ান ছিলেন। ১৫৯২ সালে মান সিং নিজে রাজপুতানা থেকে বাংলায় আসেন। উদ্দেশ্য মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে। তিনি নিজের বিশ্বস্ত সেনাপ্রধান সর্বেশ্বর সিং চৌহানকে ‘জঙ্গল-মহল’ বিজয়ের ভার দেন। তখন দিল্লির সিংহাসনে সম্রাট আকবরের রাজত্ব।
সৈন্য বাহিনী এবং অশ্ব বাহিনী নিয়ে তিনি মাল রাজাদের ভূমি আক্রমণ করেন। ঝাড়গ্রামে তখন মালরাজাদের রাজত্ব। মৌর্য এবং গুপ্ত রাজাদের আমল থেকেই তারা পরাক্রমী যোদ্ধা। তাদের হারিয়ে সর্বেশ্বর চৌহান ‘মল্লদেব’ উপাধি নিয়ে ‘ঝাড়িখন্ড’- এর সিংহাসনে বসেন। যুদ্ধে তাঁর বীরত্বের পুরস্কার জন্য এই জঙ্গলভুমি তাঁকে শুরু হল মল্লদের যুগ। নতুন রাজপাট গড়ে তোলেন। নতুন রাজধানী ঝাড়গ্রাম। ঝাড়গ্রাম কথার অর্থ জঙ্গল দিয়ে ঘেরা গ্রাম। গোটা জনপদ পরিখা দিয়ে ঘেরা ছিল। স্থানীয় ভাষায় যাকে ‘উগাল’ বলা হত। মল্লদেব রাজাদের নামের সঙ্গে ‘উগাল সান্দা’ উপাধি যোগ হয়।
১৫১৯ সাল থেকে ৪০০ বছর ধরে মল্লদেব রাজ পরিবারের ১৮ জন রাজা রাজত্ব করেন। তাঁদের মধ্যে শেষ রাজা নরসিংহ মল্লদেব। ৭০ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছিল রাজপ্রাসাদ। ইন্দো- স্যারাসনিক শিল্পরীতিতে নির্মিত।
পরবর্তী সময়ে পুরনো রাজ প্রাসাদটি জীর্ণ হয়ে পড়ে। ১৯৩১ সালে একটি নতুন রাজপ্রাসাদ নির্মিত হয়।
বহু বিখ্যাত বাংলা ছবির শুটিং হয়েছিল এখানে। সন্ন্যাসী রাজা সূর্যনারায়ণের বারোদিয়া এস্টেট, টিনটিরেটোর যীশুর নিয়োগী বাড়ি এই রাজপ্রাসাটিই। এই রাজপ্রাসাদে একটি আউট হাউস আছে যেখানে টুরিস্টদের রাত্রিবাস করতে পারে। মূল রাজপ্রাসাদে রাজ পরিবারের সদস্যরা থাকেন। তবে রাজবাড়ি ঘুরে দেখার সুযোগ আছে।