পুরু ঠোঁটে ব্লাড রেড লিপস্টিক, থুতনিতে তিল,ডাস্কি স্কিন, গ্ল্যামারাস লুক। সোনালি জরির কাঞ্জিভরম, ভারি গয়না আর টকটকে লাল সিন্দুররেখায় তিনি মানেই এক জমকালো উপস্থিতি।
৭০-৮০’র দশকে রুপালি জগতে তিনি মোহময়ী তারকা। এভারগ্রীন লেজেন্ড। ভানুরেখা গণেশন ওরফে রেখা।
জন্ম ১৯৫৪-এর ১০ অক্টোবর। চেন্নাই শহরে।
বিখ্যাত তামিল অভিনেতা জেমিনি গণেশন এর কন্যা। মা পুষ্পাবলী। সুপারস্টার বাবার মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও বাবার দিক থেকে কোন সাহায্যই পাননি। এমনকি সন্তান হিসেবে মেনে নিতেও অস্বীকার করে ছিলেন। পুষ্প একা হাতে মানুষ করেন রেখা এবং তাঁর বোনকে।
কন্টককীর্ণ ছোটবেলা। দারিদ্র, অর্থাভাব। কিছুটা বাধ্য হয়েই মাত্র বারো বছর বয়সে রুপালি দুনিয়ায় রেখার পা রাখা। প্রথম ছবি ‘রঙ্গুলা রতনম’(১৯৬৬)। ১৯৬৯-এ তামিল ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় দেখা যায় কিশোরী ভানুরেখাকে।
কিন্তু সেসব ছবির ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা গভীর ছাপ ফেলে মনে। পরিনত বয়সে পৌঁছেও যা থেকে বেরতে পারেননি। বেশ কিছু সাক্ষাৎকারে, জীবনীতে উঠেও এসেছে সে প্রসঙ্গ।
রেখার বয়স তখন মাত্র পনেরো। দক্ষিণী সিনেমার জগৎ ছেড়ে পাড়ি দিলেন বলিউড। প্রথম হিন্দি ছবি ‘আনজানা সফর’। বিপরীতে ছিলেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সেন্সরের কারণে আটকে গিয়েছিল ছবিটি। ছবির শুটিং- এ হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল রেখাকে।
জটিলতা কাটিয়ে ছবিটি যখন মুক্তি পেল তখন অন্য এক ছবির দৌলতে লাইমলাইটে তিনি। ছবির নাম ‘শাওন ভাদো’। বিপরীতে নবীন নিশ্চল।
বক্স অফিসে ছবি সাফল্য পেলেও অন্য এক প্রত্যাখান যেন সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল তাঁর। গায়ের রং, শরীরের গঠন নিয়ে নিয়মিত বাঁকা মন্তব্য উড়ে আসত পরিচালকদের কাছ থেকে। এমনকি সেই সময়ের বলিউড নায়করা তির্যক মন্তব্য করতে দ্বিধা করেননি।
সেই সময় নায়িকা মানেই রং হতে হবে ফর্সা। গমরঙা রেখা প্রথা ভাঙা দক্ষিণী সুন্দরী। তাঁকে মেনে নিতে প্রবল আপত্তি ছিল বলি পাড়ার। হিন্দি উচ্চারণ নিয়ে সমস্যা তো ছিলই। লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়ে সে কারণে।
থেমে যাননি রেখা। পাখির নজর করেছিলেন অভিনয় জীবনকে।অভিনীত ছবির সংখ্যা প্রায় ১৮০ টি। হিট ছবির তালিকাটাও এমনই লম্বা।
তবে সাফল্য ধরা দেয়নি সহজে। পদে পদে বাধা এসেছে। নানা ঘটনার জেরে রেখাকে নিয়ে বারবার তোলপাড় বলিউডে। হাজার এক বিতর্ক। একাধিক সম্পর্ক এসেছে। গসিপ ম্যাগাজিনের পাতায় তাঁর নাম। সমালোচনার ঝড়, প্রতিকূলতার মুখে অবিচল থেকে গিয়েছেন এই ‘মির্যাকল উওম্যান’। বাস্তবের ধূলিঝড়ে নিভে যেতে দেননি শিল্পীসত্বাকে।
আজও তাঁর এক ঝলক ঝড় তোলে দর্শকদের হৃদয়ে। ভারতীয় সিনেমা হাজার বছর অপেক্ষায় থাকতে পারে উমরাও জানে’র একবার পলক তুলে চাওয়ার জন্য।