একটি যুগ যখন সাক্ষ্য বহন করে

আজকে যাঁর কথা শোনাবো আপনাদের, তিনি এক দীর্ঘ যুগের সাক্ষী।

চট্টোপাধ্যায় পরিবারের তিন তলা বাড়ি উত্তর কলকাতার শ্যাম মিত্র লেনের একটি গলিতে, যেখানে আপনাকে স্বাগত জানাবে ৯৩ বছরের এক টানটান ব্যক্তিত্ব... সুশীল কুমার চ্যাটার্জী ওরফে নকুবাবু।

noku-3

আমাদের বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকম শখ রয়েছে, অনেকেই আমরা পুরনো জিনিস যত্ন করে সংগ্রহ করে রাখতে পছন্দ করি। কিন্তু এই পছন্দের মাধ্যমে আমাদের শখ যখন আমাদের নিজের অস্তিত্বকেই ভুলিয়ে দেয়, অর্থাৎ আমরা যখন নিজেদের শখের নেশায় মত্ত হয়ে উঠি, তখনই বোধহয় জন্ম হয় এক নতুন মানুষের। যে নিজের জীবনের থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়ে আগলে রাখতে চায় নিজের শখকে। এইরকমই একজন ব্যক্তিত্ব হলেন নকুবাবু

noku-2

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করে তিনি শব্দ নিয়ে পড়াশোনায় মেতে ওঠেন।

তাঁর নিজের তৈরী এনালগ ক্রসওভার লাউডস্পিকার-এর ৪টি এখনো শোভা পাচ্ছে তাঁর কালেকশনে।

তিনি নিজে এক সময় নাকি যাত্রাদলে অভিনয়-ও করেছেন। ১০ বছর বয়সে নদীর পাড় থেকে কুড়োনো নুড়ি দিয়েই নকুবাবুর সংগ্রহশালার যাত্রা শুরু হয়েছিল। তবে সিংভূমের ধলভূমগড়ে তাঁর পূর্বপুরুষের বাড়ি থেকেই এই জিনিস সংগ্রহ করার নেশা পেয়ে বসেছিল তাঁর মধ্যে। আস্তে আস্তে এই নেশা তাঁকে চারদিকে দৌড় করিয়েছে...এমনকি, তিনি বাতিল করে দেওয়া জিনিসপত্র থেকেও তাঁর সংগ্রহের রসদ পেয়েছেন।

noku-4

নকুবাবুর সংগ্রহশালার নাম তিনি রেখেছেন 'অতীতের আশ্রয়'- যেখানে বিভিন্ন রকম লণ্ঠন, প্রজেক্টর, ক্যামেরা, ঘড়ির সমাহার রয়েছে।আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন এগুলির বিভিন্ন রকম রূপ, রং, আয়তনের বাহার দেখে। কি নেই তাঁর কালেকশনে? কোনো জিনিস ঝোলানো রয়েছে, কোনোটা আবার দাঁড় করানো রয়েছে তো কোনোটা গুছিয়ে রাখা রয়েছে এই ঘরটিতে। ১৭৭৭ সালের ঝিনুকের তৈরী বোতাম, ১৮৫০ সালের একটি বাইনোকুলার, ১৮৫০ সালের কৃষ্ণ পাথরের তৈরী কৃষ্ণের মূর্তি রয়েছে নকুবাবুর সংগ্রহে যা তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন একজন বুলগেরিয়ান মহিলা...ভাবতে পারেন? ৩০০০ রেকর্ড প্লেয়ার, ৫০টি ল্যাম্প, ৬টি প্রজেক্টর, বিভিন্ন রকম ক্যামেরা সহ আরও প্রচুর জিনিস রয়েছে তার সংগ্রহে। রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্লার্কদের ব্যবহৃত চামড়ায় মোড়া লেজার বই। এগুলির মধ্যে তাঁর প্রিয় জিনিস হল ১৯১০ সালের একটি ডাক্তারি মাইক্রোস্কোপ, একটি বাইনোকুলার, সান ডায়াল এবং একটি পুরোনো ভিডিও ক্যামেরা... যার ওজন আজকের একটি ইউপিএস-এর সমান। রয়েছে ১৯৬০ সালের গ্রামোফোন।

noku-1

আর একটা আশ্চর্যের ব্যাপার যা আপনাদের বলতেই হয়, তা হল, এই যে এত জিনিস নকুবাবুর কাছে রয়েছে, তার সবই কিন্তু চলমান অবস্থায় আছে....যদি কোনো জিনিস খারাপ হয়ে যায়, তিনি তার মেরামত করে নেন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার তরুণ মজুমদার তাঁর টেলিফিল্ম 'দুর্গেশনন্দিনীতে' নকুবাবুকে কাস্ট করেছেন।

noku-6

গত তিন দশকে তাঁর কাছে প্রায় ৪০০০ দর্শনার্থী এসেছেন এবং তাঁকে উৎসাহিত করেছেন....তাই তিনি একটি 'ভিজিটরস বুক' মেইনটেইন করেন। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন সকলের অতি প্রিয় কাছের মানুষ।

noku-5

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...