যাতায়াতের সময় আমাদের কোথাও না কোথাও ব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটে বা গাড়ি করে যেতেই হয়।কলকাতার মতো জায়গাতেই আমাদের প্রতিদিনই ব্রিজ দিয়ে পারাপার করতে হয়। হতে পারে সে কালীঘাট ব্রিজ কিংবা করুণাময়ী ব্রিজ।বর্তমানে ব্রিজের নাম শুনলেই বুকটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে। হয়তো মাঝেরহাট কাণ্ডই দায়ী এর জন্য। মাঝেরহাট বা কালীঘাট ব্রিজের মতো ব্রিজ ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর নানাপ্রান্তে।জানা যায় এর মধ্যে প্রায় ২০ টি ব্রিজ এমন রয়েছে যা পার করতে গিয়ে রীতিমতো বুক দুরদুর করে মানুষের। কি এমন রয়েছে সেই ব্রিজগুলিতে? চলুন শেষ থেকে শুরু করা যাক................
২০) রয়্যাল জর্জ ব্রিজ, কলোরাডো
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝুলন্ত ব্রিজ হিসেবেই নয় এই ব্রিজের নিজস্ব একটি ইতিহাসের জন্যই এই ব্রিজটি পার হওয়ার সময় বুক কাঁপে সকলের। ১৯২৯ সালে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হলেও নির্মিত হওয়ার প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত এই ব্রিজটিতে ছিল না কোনো স্টেবিলাইজিং উইন্ড কেবল।এই স্টেবিলাইজিং উইন্ড কেবল না থাকার কারণে এই ব্রিজটিকে বেশ ভয়ানক বলে মনে করা হয়।এই ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতেও সাহস পাননা চালকেরা।
১৯) মাঙ্কি ব্রিজ, ভিয়েতনাম
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে ব্রিজটির সাথে বাঁদরের কোনো একটি সম্পর্ক রয়েছে। হ্যাঁ, ঠিকই ভেবেছেন। ব্রিজটি এতটাই সরু যে একটি বাঁদর একবারে সেই ব্রিজটি পার করতে পারবেন।মিকং ডেল্টা অঞ্চলের অধিবাসীরা এই ব্রিজটিকেই তাদের যাতায়াতের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।কিন্তু তাতে ভয়ের কি আছে? ভয়ের বিষয়টি হলো, সম্পূর্ণ ব্রিজটি শুধুমাত্র একটি বাঁশ দিয়ে তৈরী।একজন মানুষ প্রশিক্ষণ না পাওয়া পর্যন্ত একটি বাঁশের উপর দিয়ে খুব সহজে হাঁটতে পারে না।ব্রিজটির এই অদ্ভুত নির্মাণ পদ্ধতির কারণেই ভয়ঙ্কর ব্রিজের তালিকায় নিজের জায়গা করে নিতে পেরেছে।
১৮) হুসাইনি হ্যাংগিং ব্রিজ, পাকিস্তান
নামটিই বুকে কাঁপন ধরানোর জন্য যথেষ্ট। এরকম হ্যাংগিং ব্রিজ ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তেই। কিন্তু এই ব্রিজটির কি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এই ব্রিজের নাম ভয়ঙ্কর ব্রিজের তালিকায় নথিভুক্ত করতে সাহায্য করেছে? ব্রিজটির ছবি দেখে যা বোঝা যায় তা হলো, ব্রিজটি কোনো একটি পাটাতন দিয়ে তৈরী নয়। ব্রিজের এক একটি পাটাতনের মধ্যে বেশ কিছুটা ডিস্টেন্স রয়েছে।একে ঝুলন্ত তার উপর পাটাতনের মাঝে গ্যাপ, এই দুইই যথেষ্ট কিনা একে ভয়ঙ্কর ব্রিজ বলার জন্য? একবার পা ফস্কালে সোজা নিচ দিয়ে বয়ে চলা হুঞ্জা নদীতে গিয়ে পড়তে হবে।
১৭) সেভেন মাইল ব্রিজ, ফ্লোরিডা
১৯৩৫ এর হ্যারিকেন ঝড়ের কারণে যখন ফ্লোরিডার রেলরোড ধ্বংসের সম্মুখীন হয় সেই সময় তৈরী কর হয় এই ব্রিজ। প্রথমে এই ব্রিজটি নির্মিত হলেও দ্বিতীয়বার আবারও এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।প্রথম ব্রিজটি সমুদ্রতলের খুব কাছে নির্মাণ করা হয়েছিল ফলে সেখান দিয়ে নৌকা চলাচলের পথ আটকে যায়।এর পরেই বর্তমান সেভেন মাইল ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। এই ব্রিজটিকে আপাতদৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর মনে না হলেও হ্যারিকেনের সময় এই ব্রিজের উপর নিয়ে গাড়ি চালালে প্রাণ হাতে নিয়ে তবেই চালাতে হয়।
১৬) ডিসেপশন পাস ব্রিজ, ওয়াসিংটন স্টেট্
বলা হয়, এই ব্রিজটির উপর সর্বক্ষণ কুয়াশার চাদর বিস্তৃত থাকে। তাই এই ব্রিজটির উপর দিয়ে যানবাহন নিয়ে যেতে গেলে রীতিমতো বুক কাঁপে। মাটি থেকে ১৮০ ফুট উঁচু এই ব্রিজটি দিয়ে হেঁটে যেতে রীতিমতো সাহসের প্রয়োজন পড়ে।এই ব্রিজটির মাধ্যমে দুইপ্রান্তে থাকা দুটি দ্বীপের মধ্যে যোগসূত্র গড়ে উঠেছে। এই ব্রিজটি পার করা এতটাই ভয়ঙ্কর যে কিছু মানুষ ব্রিজটি ব্যবহারের থেকে নৌকা নিয়ে বেশি সময় ধরে রাস্তা পার করাকে প্রেফার করে।
১৫) লেক পঞ্চার্তরাইন কজওয়ে, লুসিয়ানা
এই ব্রিজটি পৃথিবীর বৃহত্তম ব্রিজগুলির মধ্যে একটি বলে বিবেচিত হয়।সমুদ্রতল থেকে মাত্র ১৬ ফুট এই ব্রিজটি ১৯৫০ সালের দিকে নির্মাণ হওয়ার পর থেকেই অন্যতম ভয়ঙ্কর ব্রিজ বলে পরিচিত হয়।
১৪) ক্যানোপি ওয়াক, ঘানা
এই ব্রিজটি এতটাই শুরু যে পাশাপাশি দুজন মানুষ হাঁটতে পারবেনা। এছাড়াও এই ব্রিজটি বিশ্বের ভয়ানক ব্রিজগুলির মধ্যে একটি বলে নিজের নাম লেখাতে পেরেছে কারণ এই ব্রিজ দিয়ে চলাকালীন পিছন ফিরে তাকানো বারণ। এই ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১০০০ ফুট। বৃক্ষরাজির মধ্যে দিয়ে চলার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারলেও পিছন ফিরে তাকালে বুক ধড়ফড় করবেই।
১৩) লংকাই স্কাই ব্রিজ, মালয়েশিয়া
আঁকাবাঁকা এই ব্রিজটির ছবি দেখলে কোনোভাবেই ব্রিজটি ভয়ানক নাম লেখাতে পারে। তবে মাটি থেকে ৪০০ ফুট উপরে থাকা এই ব্রিজটি তার উচ্চতার জন্যই বিখ্যাত। এই ব্রিজটি মেনটেনের জন্য দুইবার বন্ধ রাখা হয়। লংকাই এলাকা ভ্যাকেশন স্পট হওয়ার পর থেকে এই ব্রিজটির জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে।
১২) মাউন্ট তিতলিস, সুইজারল্যান্ড
বরফ ঘেরা পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সোজা এগিয়ে চলা ব্রিজটির মাঝখানে দাঁড়ালে বুক তো ধড়ফড় করবেই। কারণ মাঝে শুধু একটি ব্রিজ। চারপাশে শুধু বরফ আর বরফ তার মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি ব্রিজ। প্রতিবছর প্রচুর পর্বতারোহী এই ব্রিজটি পার করে থাকেন। উপরে আলপ্স পর্বতমালার আকর্ষণ তো নিচে ৩০০০ ফুট গভীর খাদের হাতছানি। তবুও এই ব্রিজটিকে বিশ্বের নিরাপদ ব্রিজগুলির মধ্যে একটি ধরা হয়।
১১) ভিটিম রিভার ব্রিজ, রাশিয়া
অন্যতম ভয়ঙ্কর ব্রিজগুলির নাম বলতে হলে এই ব্রিজটির নাম আসবেই আসবে কারণ আজ পয্ন্ত খুব কম সংখ্যক মানুষ এই ব্রিজটি ক্রস করতে পেরেছেন। এই ব্রিজটির পাশে নেই কোনো গার্ডরেল এবং বছরের প্রায় সবসময় এই ব্রিজটি বরফে চাপা থাকে। এছাড়াও এই ব্রিজের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটি হলো এই ব্রিজের মাঝের কিছু কিছু পাটাতন নেই। তাই বরফে চাপা অবস্থায় আপনি ব্রিজের কোন জায়গায় পা দিচ্ছেন তা বোঝার উপায় নেই।
১০) পুয়েন্টি দি ওজুয়েলা, মেক্সিকো
একসময় বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত হওয়া এই ব্রিজ আজ শুধুমাত্র হেঁটে পথ চলার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর উপর ভারী গাড়ি চলা প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। ভয়ঙ্কর ব্রিজের তালিকায় নাম লেখানোর সাথে সাথে এই ব্রিজটি একটি ছোটোখাটো টুরিস্ট স্পটে পরিণত হয়েছে।
৯) কিউপজ ব্রিজ, কোস্টা রিকা
এই ব্রিজটিকে লোকাল মানুষজন নাম দিয়েছে 'ব্রিজ অফ ডেথ' অর্থাৎ মৃত্যুর ব্রিজ। কারণ সেখানকার অধিবাসীরা বিশ্বাস করে সেই ব্রিজটি স্বয়ং মৃত্যুর স্বরূপ। মনে করা হয়, ব্রিজটির পাটাতন এমনভাবে গ্যাপ দিয়ে লাগানো তাতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
৮) সানশাইন স্কাইওয়ে ব্রিজ, ফ্লোরিডা
১৯৮৭ সালে নির্মিত এই ব্রিজটি পুরোনো একটি ব্রিজের বদলে গঠিত হয়। এই ব্রিজেই ১৯৮০ সালে একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায়। জানা যায়, একটি বিশালাকৃতি ট্যাংকারের সাথে পিলারের সংঘর্ষের ফলে সেদিন মারা গেছিলেন ৩৫ জন মানুষ। এরপর ব্রিজটি আবার নতুন করে বানানো হয়।কিন্তু তারপরেও ফাঁড়া কাটেনা এই ব্রিজটির দিয়ে। ব্রিজটি তৈরী হওয়ার পরে প্রায় ২০০ জন এই ব্রিজটিতে উঠে আত্মহত্যা করে। সেই থেকেই এই ব্রিজটি বিশ্বের ভয়ঙ্কর ব্রিজগুলির তালিকায় নিজের নাম নথিভুক্ত করেছে।
৭) এশিমা ওহাশি ব্রিজ, জাপান
গাড়িতে বসেই রোলার কোস্টার রাইডের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাইলে সবচেয়ে প্রথমে মনে আসে এই জাপানি ব্রিজটির নাম। ব্রিজটির ছবি দেখেই ভয়ে বুক কেঁপে ওঠাটাই স্বাভাবিক। একেবারে খাঁড়া হয়ে ১৪৪ ফুট সোজা উপরে উঠে গেছে এই ব্রিজটি। ব্রিজটির গ্র্যাডিয়েন্ট হলো ৬.১%। আর কিছু বলার প্রয়োজন রয়েছে কি ব্রিজটির ভয়াবহতা নিয়ে?
৬) দি ব্রিজ অফ ইমর্টাল,চিন
দুটি পাহাড়কে সংযুক্ত করা এই ব্রিজটি দেখতে তেমন ভয়ঙ্কর মোটেই নয়। বরং পাহাড়প্রেমীদের কাছে বেশ রোমহর্ষক একটি জায়গা এটি। এই ব্রিজটির উপর দাঁড়ালে যেমন পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দর্শন করতে পারবেন তেমনই ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে অতল খাদও দেখতে পাবেন। দুর্বল হৃদয়ের মানুষ এই ব্রিজটিকে ভয়ংকর ব্রিজের তকমা দিলেও অনেক মানুষই এই ব্রিজটিকে ভয়ানক বলতে নারাজ। তবে অতো উঁচু থেকে নিচের দিকে তাকালে বুক কি একবারও কাঁপবে না?
৫) মন্টিনিগ্রো রেইনফরেস্ট, কোস্টা রিকা
সম্পূর্ণ রেইনফরেস্ট বা পর্ণমোচী অরণ্যকে চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করতে হলে এই ব্রিজটির নাম সবার আগে সামনে আসবে। তাহলে এই ব্রিজটির ভয়াবহতা কোথায়? এই ব্রিজটির মাঝে মাঝে কিছু জায়গার পাটাতন হয় সরে গেছে নাহলে সেখানে তার উপস্থিতিই নেই। সেইসব জায়গায় যদি ভুল করেও কেউ পা দিয়ে ফেলে তাহলে সোজা জায়গা হবে জঙ্গলের মধ্যে। তবে আগে থেকে সাবধান হয়ে চললে ভয়ের কিছু নেই।
৪) ইউ বিন ব্রিজ, মায়ানমার
এই ব্রিজটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় ব্রিজটিতে কাজ চলছে কিন্তু আসলে তা নয়। ব্রিজটি তৈরিই হয়েছে এইভাবে। সোজা জলের মধ্যে থেকে পিলার উঠে গেছে এবং তার মাথায় দেখা যাচ্ছে কিছু শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু সম্পূর্ণটাই বানানো। ব্রিজটির এরকম রূপের জন্যই আজ সে বিশ্বের ভয়ানক ব্রিজের তালিকায় প্রবেশ করতে পেরেছে।
৩) স্টোরসেইসানডেট ব্রিজ, নরওয়ে
নরওয়েতে অবস্থিত এই ব্রিজটিতে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় বুক দূরদূর করেনি এমন চালক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ব্রিজটির অদ্ভুত আকৃতির জন্যই এই ব্রিজটি এই লিস্টে রয়েছে। ব্রিজটির ছবি দেখে তেমন ভয়াবহ মনে না হলেও যাঁরা গেছেন এই ব্রিজটির উপর দিয়ে তারা নিজেরাই জানিয়েছেন অভিজ্ঞতার কথা। তাঁরা জানিয়েছেন, যদি ব্রিজটির ভয়াবহতা নিয়ে মনে কারোর সন্দেহের উদ্রেক হয় তাহলে যেন সে নিজে গিয়ে তা সচক্ষে প্রত্যক্ষ করে আসে।
২) ক্যারিক-এ-রিড রোপ ব্রিজ, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড
এই ব্রিজটি ছবিতে দেখতে খুবই সুন্দর। অনেকেই ছবি দেখে এই ব্রিজটি পারাপারের কথা ভাবতে পারেন কিন্তু পাশের দ্বীপে যাওয়ার জন্য আজ পর্যন্ত যেসব মানুষ এই ব্রিজটির ব্যবহার করেছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ এই ব্রিজটি দিয়ে আর ফিরতে চাননি। এর থেকে বেশি সময় লাগলেও তারা নৌকার মাধ্যমেই জলপথে ফিরে আসতে চেয়েছেন। তার উপর এই ভয়াবহ ব্রিজটি পার করার পর অপরপ্রান্তে গিয়ে আপনাকে এই ব্রিজটি পার করার জন্য মূল্যও চোকাতে হবে।
১) সিডু রিভার ব্রিজ,চিন
টলোমলো এই স্টিল কনস্ট্রাকশনটি বিশ্বের ভয়ঙ্কর সেতুগুলির মধ্যে অন্যতম। এই ব্রিজটি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ব্রিজ বলেও সকলের কাছে পরিচিত। এই ব্রিজটি দুইখানা শিরোপা নিয়ে বসে থাকলেও এই ব্রিজটি কিন্তু বেশিদিন আগে তৈরী হয়নি। ২০০৯ সালে ১০০ মিলিয়ন ইউএসডি ডলার খরচ করে নির্মিত হয়েছিল। এই ব্রিজটির উপর থেকে নিজের ভ্যালির অপরূপ দৃশ্য যেমন দেখা যায় তেমন এই ব্রিজটি অন্যতম স্টার্ডিয়েস্ট ব্রিজ হিসেবেও পরিচিত।