মরণাপন্ন বিজ্ঞানী পরিবর্তিত হলেন 'সাইবর্গে'

আজও ক্রিস বা রোহিতকে ভোলেনি সাধারণ মানুষ ভিনগ্রহের প্রাণীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে সিনেমাপ্রেমীদের মনে এক ভিন্ন ধরণের আনন্দ সৃষ্টি করেছিল এই সিনেমাগুলিসিনেমার স্ক্রিনে আমরা ভিনগ্রহের প্রাণীর দেখা পেলেও রোহিতের মতো শারীরিকভাবে অক্ষম কিন্তু অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ এই পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকরসম্প্রতি, 'কোই মিল গয়া' সিনেমারই বাস্তব রূপ দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরাতবে এক্ষেত্রে কোনো ভিনগ্রহের দেখা অবশ্য পাওয়া যায়নিসম্প্রতি জানা গেছে, অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটি অসুখে আক্রান্ত এক বিজ্ঞানী হয়ে উঠেছেন একজন সাইবর্গ কি ঘটনা রয়েছে এর পিছনে চলুন জানা যাক

 

জানা গেছে, ৬১ বছর বয়সী ডঃ পিটার স্কট মরগ্যানের শরীরে ধরা পড়ে মাসল ওয়েস্টিং ইলনেস অর্থাৎ এমন একটি রোগ যার ফলে ধীরে ধীরে শরীরের সমস্ত মাংসপেশি নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে২০১৭ সালে এই রোগটি ধরা পড়ার সাথে সাথেই তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এই পৃথিবীর বুকে তার আয়ু আর মাত্র এক বছরএকটি ইলেকট্রিক হুইলচেয়ারকে ভরসা করেই কাটছিলো তার জীবনহুইলচেয়ারের সাহায্যেই সোজা হয়ে বসতেন তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও মানসিক দিক দিয়ে যথেষ্ট সজাগ ছিলেন তিনিতার এই শারীরিক অসুবিধাকেই সে বাঁচার মূল উদ্দেশ্য বলে ধরে নেনএরপর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে কাজে লাগিয়ে তৈরী করা হয় এমন একটি অবতার যা চলবে এই মানুষটির চোখের ইশারায় আর কথা বলবে এই মানুষটির নিজস্ব গলার স্বরে নিজে বিজ্ঞানী হওয়ার সুবাদে এই বিষয়টিকে গড়ে তুলতে বিশেষ সুবিধা হয়েছিল তার জানা গেছে, যে টিমটি এই অবতার তৈরীর কাজে হাত লাগিয়েছে তারা এর আগে স্টিফেন হকিং-এর সাথেও কাজ করে এসেছে ফলে তাদের পারদর্শিতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই এই দলটি তৈরী করে চার্লি . হুইলচেয়ার যা কোনো সাধারণ হুইলচেয়ার নয় এর সাথে যুক্ত থাকে একটি ল্যাপটপ এবং একটি আই ট্র্যাকার

 

এই নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য বিজ্ঞানীবাবুর শরীরেও করা হয় নানা পরিবর্তনতার শরীরে কোথায় খাবারের নল থাকবে আর কোথায় ক্যাথিটার থাকবে তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় সম্প্রতি জানা গেছে, অগ্রগামী এই  বিজ্ঞানীর শরীরে করা হয় এমন এক জটিল অপারেশন যার ফলে তার শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন পার্ট আলাদা আলাদা করা হয়ট্রাকিয়ার থেকে আলাদা করা হয় ইসোফেগাসকে এই পদ্ধতিটির ব্যবহার করা হয় যাতে তার পরিবর্তিত রূপটি  কোনোভাবে লালা বা স্যালাইভার কারণে চোকড না হয়ে যায়এই ক্ষেত্রে তার শরীর থেকে আলাদা করা হয় তার বায়োলজিকাল ভয়েস বক্সএমত অবস্থায় দাঁড়িয়ে পিটার নিজে টুইট করেন পিটার , হিসেবে এটাই তার শেষ পোস্ট এরপর তিনি পরিবর্তিত হতে চলেছেন সম্পূর্ণ সাইবর্গেএর সাথে তিনি আরও জানান, তিনি মারা যাচ্ছেন না তিনি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছেন

 

একজন মানুষকে সাইবর্গে পরিবর্তিত করার জন্য যে স্টেপগুলি নেওয়া হয়েছে তা হলো-

 

) প্রথমেই ল্যারিনজেকটমির সাহায্যে আলাদা করা হয়  ডঃ পিটারের ইসোফেগাস এবং ট্রাকিয়াএরপর তার বায়োলজিকাল ভয়েস বক্সকেও আলাদা করা হয় এর ফলে তার কথা বলা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়

) তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যাবে এটা আগে থেকে জানা থাকার কারণে আগে থেকেই তার ভয়েস কম্পিটারে ব্যাঙ্কিং করে রাখা হয়েছিলএর ফলে শুধু নিজের মাতৃভাষায় নয় তিনি চাইলে কথা বলতে পারবেন অন্য ভাষাতেও

) এরপরেই তৈরী করা হয় একটি ফেস অবতার এই ফেস অবতারটির মাধ্যমে দেখানো যাবে তার নানা ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন ইন কেস তিনি যদি তার মাসলের উপর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেন

) বিশেষভাবে তৈরী একটি হুইলচেয়ারের মাধ্যমে তাকে সোজা করে বসিয়ে রাখার কিংবা শোয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়

) সবশেষে তার খাদ্য গ্রহণের জন্য তার শরীরে যুক্ত করা হয় একটি খাদ্যনল এবং শরীর থেকে টক্সিন নির্গমনের জন্য দেওয়া হয় একটি ক্যাথিটার এবং কলোস্টমি ব্যাগ এর ফলে নিজের হাতে খাওয়ায় বা বাথরুম যাওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়বে না

চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির অনেক নিদর্শন উঠে এসেছে আমাদের সামনে কিন্ত একজন মানুষকে সম্পূর্ণ সাইবর্গে পরিবর্তিত করার ঘটনাটি বেশ অভিনব, স্বীকার করছেন সকলেই

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...