ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলাতে থাকে চুলের প্রকৃতি। কখনো অতীব শুষ্ক তো কখনো অতীব তৈলাক্ত। চুলের বায়নাক্কা সামলাতে সামলাতেই সারাদিন পার। বারবার পার্লারে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করানো তো সম্ভব নয়। বাড়িতেই যতটা সম্ভব যত্ন নেওয়া। বাজারচলতি প্রোডাক্ট ব্যবহার করে চুলের ক্ষতি। তাই আজ আমরা চুলের ১০টি সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবো.............
১) শুষ্ক চুলের জন্য অ্যাপেল সিডার ভিনিগার- অ্যাপেল সিডার ভিনিগার স্ক্যাল্পের নরমাল পিএইচ লেভেলকে ঠিক রাখে।এছাড়াও এটি স্ক্যাল্পের স্পর্শকাতর অংশগুলিকে রক্ষা করে থাকে। স্ক্যাল্প থেকে অতিরিক্ত পরিমান ময়েশ্চার কমে যাওয়া থেকেও রক্ষা করে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার।শীতকালে চুলকে অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে যেমন রক্ষা করে তেমন চুলে ধুলোবালি বসার হাত থেকেও রক্ষা করে এটি। এছাড়া খুশকির সমস্যা থাকলে তার নিরাময়ও হয়। এর জন্য চুলের ঘনত্ব বুঝে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার নিন। এর সাথে জল মিশিয়ে নিন পরিমান মতো। শ্যাম্পু করার পর সেই জল দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। কয়েক মিনিটের জন্য এই মিশ্রণ মাথায় থাকতে দিন। তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে আবার মাথা ধুয়ে ফেলুন।
Read Also : মুক্তি পেলো মহানায়কের জীবনী নিয়ে তৈরী ডকু ফিচারের মিউজিক
২) চুলের টাইপ বুঝে ব্যবহার করুন ডিম- চুলের জন্য ডিম কতটা উপকারী তা বারবার আলোচনার বিষয় হয়েছে। তবে চুলের টাইপের উপর নির্ভর করে ডিমের সাদা অংশ লাগাবেন না কুসুম লাগাবেন তা অনেকসময়ই বোঝা যায় না। চুল যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করা উচিৎ আর চুল যদি অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে ডিমের সাদা অংশকে এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। সেই ক্ষেত্রে ডিমের কুসুম সবচেয়ে ভালো কাজ দেয়। ডিমের কুসুম প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে। শ্যাম্পু করার পর এক চামচ অলিভ তেলের সাথে একটি ডিমের কুসুম ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে পুরো চুলে ভালো করে লাগিয়ে রেখে দিলেই কেল্লাফতে। তবে মনে রাখা ভালো, মাথায় ডিম লাগালে এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে মাথা ধুয়ে নেওয়া উচিৎ। মাসে একদিন করে এই ট্রিটমেন্ট ফলো করতে পারলে উপকার মিলবে হাতেনাতে।
৩) চুলে ময়েশ্চার আনুন ডেয়ারি প্রোডাক্ট দিয়ে- পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে এক এক জায়গার এক এক রকম জল চুলের দফারফা করার জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া রয়েছে চুলের নানা স্টাইলিং প্রোডাক্ট। এইসব কারণে দিনের পর দিন চুল নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে মুশকিল আসান করতে পারে ডেয়ারি প্রোডাক্ট। ল্যাকটিক অ্যাসিড যেমন স্ক্যাল্প থেকে ধুলোবালি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে সেরকম দুধ আবার চুলে স্বাভাবিক আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকে। এর জন্য যা করতে হবে তা হলো,পরিমান মতো টকদই নিয়ে ড্যাম্প চুলে লাগিয়ে নিন।এইভাবে ২০ মিনিট রেখে ভালো করে মাথা ধুয়ে নিন। এরপরে নিজের পছন্দ অনুযায়ী শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এই ট্রিটমেন্ট মাসে দুইবার করা গেলে উপকার পাওয়া যায়।
৪) মাথার শুষ্কতা কমান লেবু দিয়ে- শীতকালে চুল অতিরিক্ত ড্ৰাই হয়ে যায়। এইসময় খুশকির সমস্যা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও এইসময় স্ক্যাল্প খুবই শুষ্ক হয়ে যায় ফলে ফ্লেকি স্কিন দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দু চামচ ফ্রেশ লেবুর রস নিন। এর সাথে দু চামচ অলিভ অয়েল এবং ২ চামচ জল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি স্ক্যাল্পে ভালো করে মাসাজ করে নিন। এইভাবে ২০ মিনিট রেখে দিন। তরপর নরমাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এই ট্রিটমেন্ট শীতকাল ছাড়াও বছরের অন্য সময়েও ব্যবহার করতে পারবেন।
৫) চুলে বাউন্স আনার জন্য বিয়ার- বিয়ারকে বলা হয় বিউটি বেভারেজ। বিয়ারে থাকে প্রচুর পরিমানে ইস্ট যা ক্লান্ত হয়ে যাওয়া চুলের স্ট্র্যান্ডকে আবার প্রাণ ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে। এর জন্য বিয়ার নিয়ে তাতে যতক্ষণ ফেনা উঠবে ততক্ষন তাকে এমনি রেখে দিন। ফেনা ওঠা বন্ধ হয়ে গেলে এর মধ্যে এক চামচ হালকা তেল এবং একটি গোটা ডিম মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার পর চুল যখন ড্যাম্প থাকবে ঐসময় একটি স্প্রে বোতলে এই মিশ্রণ নিয়ে চুলের মাঝে মাঝে স্প্রে করে নিন। ১৫ মিনিট মতো রেখে মাথা ধুয়ে ফেলুন। চুল শুকোনোর পর দেখা যাবে চুলে আলাদা করে বাউন্স এসেছে।
৬) সান ড্যামেজ থেকে চুলকে বাঁচান মধু দিয়ে- সূর্যের তাপ, স্টাইলিং কিট, কলের জল নানাভাবে চুলকে এফেক্ট করে থাকে। এইসব ক্ষেত্রে চুলের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে মধু। মধু চুলে নারিশমেন্ট প্রদান করে থাকে। এছাড়াও মধুর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ধর্মের জন্য ইচি স্ক্যাল্পের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এরজন্য হাফ কাপ মধু নিয়ে তা ড্যাম্প চুলে ভালো করে মালিশ করে নিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিতে হবে। এরপর ঈষদুষ্ণ গরম জল দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে। মাসে একবার করে মাথায় মধু লাগাতে পারলে চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং চুল খুব বেশি শুষ্ক হয়ে যায় না।
৭) তৈলাক্তভাব দূর করুন কর্নস্টার্চ দিয়ে- চুলের তৈলাক্তভাব দূর করতে সবচেয়ে কম খরচার সমাধান হলো এই কর্নস্টার্চ। ভুট্টায় থাকে প্রচুর পরিমানে আয়রন যা মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। এরজন্য কোনো প্যাক বা কিছু বানাতে হবে না। একটি পরিষ্কার নুনের কৌটোর মধ্যে খানিকটা কর্নস্টার্চ নিয়ে তা মাথায় ছিটিয়ে ছিটিয়ে দিন। তারপর হালকা হাতে মাসাজ করে নিন। অতিরিক্ত কনস্টার্চ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে চুল ভালো করে আঁচড়ে নিন। দেখবেন মূহুর্তের মধ্যে তৈলাক্তভাবে দূর হয়ে যাবে।
৮) চুলের জট ছাড়ান কুল ন্যাসপাতি বা আভাকাডো দিয়ে- অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট এবং এসেন্সিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড, বায়োটিন, ভিটামিন এ এবং ই থাকার কারণে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। চুলকে রেশমি কোমল করতে এবং অগোছালো চুলকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এই ফলটি বেশ উপকার করে থাকে। এর জন্য একটি গোটা আভাকাডো বেটে নিন এবং স্ক্যাল্প থেকে শুরু করে পুরো চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর শক্তি বাড়ানোর জন্য এর সাথে ডিমের কুসুম বা পছন্দের কোনো তেল ব্যবহার করতে পারেন। প্রতি দুই সপ্তাহে এই মিশ্রণ মাখলে উপকার পাওয়া যায়।
৯) জমা ধুলোবালির অবশিষ্টাংশ কমান বেকিং সোডা দিয়ে- রাস্তাঘাটে সারাদিন ঘোরার ফলে আমাদের স্ক্যাল্পে ধুলোবালি বসে যেতে শুরু করে। আর এই ধুলোবালি কমানোর জন্য যদি বারবার শ্যাম্পু করা হয় তাহলে আবার চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এর মাঝে পড়ে চুলের দফারফা।এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন বেকিং সোডার। সোডিয়াম বাইকার্বোনেট মূলত অ্যাসিডে বিভক্ত হয়ে যায় যা স্ক্যাল্প থেকে অতিরিক্ত তেল শোষণ করে নেয় এবং চুলের ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে। এর জন্য বেকিং সোডার সাথে অল্প জল মিশিয়ে সেই মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট রেখে ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন।
১০) চুলের শক্তি বাড়ান নারকেল তেল দিয়ে- চুলের সবচেয়ে ভালো খেয়াল রাখে নারকেল তেল। কারণ নারকেল তেল চুলে খুব তাড়াতাড়ি শোষিত হয়ে যায়। এর ফলে সূর্যের তাপ বা নানা কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট থেকে চুলের প্রোটিনের যে ক্ষয় হয় তা মেরামত হয়ে যায়। এরজন্য একটি বাটিতে পরিমান মতো নারকেল তেল নিয়ে তাকে হালকা গরম করে নিন। এই তেল স্ক্যাল্প থেকে শুরু করে পুরো চুলে ভালো করে লাগিয়ে স্ক্যাল্পে মালিশ করে নিন। এরপর যেরকম শ্যাম্পু করেন সেইভাবে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করে নিন।