ভারতীয় সংস্কৃতি এবং পুরাণ কথায় তাঁর মতো ‘ভিলেন’ আর একটিও নেই। নবরাত্রী দশেরা উৎসবে ‘কু’ এর বিরুদ্ধে ‘সু’ এর দ্বন্দ্বে প্রতিবার অন্ধকারের প্রতীক হিসেবে দহন করা হয় তাঁকে। পরস্ত্রী হরণকারী, ঈর্ষাকাতর, খল, পরাক্রমী রাবণ পুরাণ মহাকাব্যে অশুভ শক্তির প্রতীক।
কিন্তু এর উল্টোমতও আছে। বিশ্রবা মুনির ঔরসে কৈকসী ওরফে নিকষা গর্ভজাত লঙ্কা অধিপতি রাবণ পরম শৈব। প্রবল পরাক্রম আর অগাধ প্রজ্ঞায় তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব ত্রিভুবনে অমিল। হিন্দু ধর্মের চার বেদ ও ছয় শাস্ত্র তাঁর কণ্ঠস্থ।
শোনা যায় লঙ্কেশ্বর নাকি আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। স্ত্রীর অনুরোধে সাতটি গ্রন্থও রচনা করেন।
তাঁর বীরত্ব এবং পাণ্ডিত্যের জন্য শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে দেবজ্ঞানে পূজিত হন রাবণ। ‘দশেরা’র সময় এই সমস্ত মন্দিরগুলিতে উপচে পড়া ভিড়। একই দেশে একই পুরাণ চরিত্রকে ঘিরে এহেন বিপরীত ভাবনার নিদর্শন খুব একটা নেই।
আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিটি রাবণ মন্দিরেই শিব অর্চনা হয়ে থাকে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে পুরাণ সূত্রে জানা যায়,
শিবের পরমভক্ত রাবণ কঠোর তপস্যা করেছিলেন শিবকে সন্তুষ্ট করার জন্য। তাঁর সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব যখন তাঁকে বর দিতে চান তখন রাবণ ‘তাঁকেই’ চান। শিব তখন তাঁকে একটি শিবলিঙ্গ প্রদানকরেন। বলেন রাবণ যেন কখনই শিবমূর্তি কাছ ছাড়া না করেন। যেখানে শিবলিঙ্গটি রাখবেন সেখানেই সেটি প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে।
ভারতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাবণ মন্দিরটি উত্তরপ্রদেশের বিসরাখে। বিসরাখ গ্রামকে রাবণ জন্মভূমি বলে মনে করা হয়। ৫.৫ ফুট লম্বা রাবণ মূর্তি আছে।
রাবণের পিতা বিশ্বশ্রবা-র নাম অনুসারে এই গ্রামের নাম ‘বিসরাখে’। রাবণের প্রতিমূর্তি দহন এই গ্রামে হয় না।
কানপুরে আছে দশানন মন্দির। দশেরার দিন রাবণের জন্ম হয়েছিল। মৃত্যুও একই দিনে। এই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসে পুজো দিতে। রাবণের সঙ্গে শিবও পূজিত হন এই মন্দিরে।
মধ্যপ্রদেশের রাবণগ্রামের রাবণমূর্তিটি ১০ ফুট উচ্চতার, কিন্তু এটি মাটিতে শায়িত অবস্থায় থাকে। বিদিশার এই স্থান মান্দসৌর নামেও পরিচিত। মান্দসৌর রাবণের স্ত্রী মন্দাদরীরর জন্মভূমি। এই ভূমিতেই বিবাহ হয়েছিল তাঁদের। তাই বিদিশায় লঙ্কেশ্বর জামাই। দশেরার ‘রাবণদহন’ এখানে হয় না।
রাজস্থানের যোধপুরেও আছে রাবণ মন্দির। সেখানকার মাদগৌল সম্প্রদায়ের বাহ্মণরা মনে করেন তাঁদের পূর্বপুরুষ রাবণ। জ্যোতির্বিদ্যার পিতা বলা হয় রাবণকে। অন্ধ্রপ্রদেশের রাবণ মন্দির কাকিনাড়ায় অবস্থায়। একই মন্দিরে শিবের সঙ্গে পূজিত হন রাবণ। দশ মাথা বিশিষ্ট রাবণের বিশাল মূর্তিকে পুজো করা হয়।