প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগের নীতি বদল হল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গীধগ্রামের গীধেশ্বর মন্দিরে। দীর্ঘ সাড়ে তিনশো বছর পরে এই মন্দিরে পুজো দিতে পারবে সেখানকার 'দাস' সম্প্রদায়ের মানুষরা।
কাটোয়ার তৎকালীন জমিদারের হাতে সেই অঞ্চলের গীধেশ্বরের আরাধনা শুরু হয়েছিল। তবে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে প্রচলিত এই পূজোর এক অদ্ভুত নিয়ম ছিল। গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারা এই মন্দিরে পুজো দিলেও সেখানকার দাস সম্প্রদায়ের মানুষদের সেই মন্দিরে পুজো দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল। বছরের পর বছর ধরে এই নিয়মই পালন করত সেখানকার অধিবাসীরা।
কিন্তু চলতি বছরের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রির দিন এই পুরনো নিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান সেখানকার দাস সম্প্রদায়ের মানুষরা। সেই অঞ্চলের মোট ১৩০টি বাড়ির বাসিন্দারা এই নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। মন্দিরে ঢোকার অপরাধে দাস সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে এক ঘরে করে রাখার প্রক্রিয়া শুরু করেন সেখানকার স্থানীয় মাতব্বররা। এ বিষয়ে গ্রামের একাংশ দাবি করেছিল, এই নিয়ম প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। সেকারণে এই নিয়ম বদল করা উচিত নয়। পুরনো নিয়মই জারি থাকবে এই মন্দিরে। কিন্তু কিছু মানুষ প্রাচীন রীতির অবসান ঘটানোর পক্ষে সায় দিয়েছিলেন। তাদের দাবী ছিল, মন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার সকল মানুষেরই থাকা উচিত।
তবে এই নিয়ে বচসা বাড়তে থাকে সেই এলাকায়। সেকারণে, সেখানকার প্রশাসন এ বিষয়টির মীমাংসায় উদ্যোগী হয়। মঙ্গলবার এই বিষয়ে সমাধানের জন্য কাটোয়ার মহকুমাশাসন বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, পুলিশ, ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা, গীধেশ্বর মন্দির কমিটি এবং দাস সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। এরপর আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় যে, ওই গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দারাও এই মন্দিরের সমান অধিকারে পুজো দিতে পারবেন। বুধবার থেকে এই নিয়ম চালু হয়েছে মন্দিরে।