জিম্বাবোয়ের মোটোক্রস আইকন শিশুদের পড়ার খরচ যোগায় নিজের উপার্জনে

নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠা বজায় রেখে সম্প্রদায়ের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা তাও কিশোর বয়সে, এটা হয়তো ছোট্ট টান্‌য়ার পক্ষেই সম্ভব। চোদ্দ বছরের জিম্বাবোয়ের মোটোক্রস চালক তানয়ারাড্‌জ্‌ওয়া টান্‌য়া মুজিন্দা নিশ্চিত করেছে যে মেয়েরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই কোনো ক্ষেত্রেই। নিজের দেশের উন্নতির কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছে ছোট্ট টান্‌য়া, রাজধানী হারারের দক্ষিণ-পূর্বে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এপওয়ার্থের, চায়নামানো কাউন্সিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার সঞ্চয় অনুদানের মাধ্যমে। জিম্বাবোয়ের মোটোক্রস সেনসেশন তানয়ারাড্‌জ্‌ওয়া টান্‌য়া মুজিন্দা ৪০টি মেয়ে এবং ৫টি ছেলের স্কুলের ফি প্রদান করেছে এবং জিম্বাবোয়ে জুড়ে আরও বাচ্চার স্কুল ফি দিতে চায় সে। তার স্বপ্ন ২০২০ সালের মধ্যে দেশের দশটি প্রদেশের ৫০০ বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো এবং যথেষ্ট তৎপরতার সাথে সে তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। এই কিশোরীর দায়িত্ববোধ এবং নিজের জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা কারোর শেখানো নয়, অল্পবয়স থেকেই জিম্বাবোয়ের উন্নতির পথে পা বাড়িয়েছে সে।  

                             শুধু তাই নয় নিজেকে নিয়েও স্বপ্ন দেখে টান্‌য়া। এই আফ্রিকান কিশোরীর লক্ষ্য আন্তর্জাতিক মোটোক্রস অ্যাথলিট হওয়া। টান্‌য়া মুজিন্দা পরিবারের বড় মেয়ে। তার পরিবার হ'ল প্রথম প্রজন্ম যাঁরা স্থায়ীভাবে গ্রাম থেকে জিম্বাবওয়ের হারারে শহরে চলে এসেছেন। তানিয়া শহরাঞ্চলে বড় হয়েছে ঠিকই, তার ঐতিহ্য সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই অবগত ছিল টান্‌য়া। তার পরিবারের মধ্যেই সে-ই প্রথম মেয়ে যে বিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা দেয়, অল্প বয়স থেকেই তার খেলাধুলার প্রতি টান ছিল বেশ। তার এই প্রতিভা দেখে তার বাবা তাকে একটি গো-কার্ট কিনে দেন। টান্‌য়ার বাবারও এই মোটরস্পোর্টের প্রতি বিশেষ ভালোলাগা ছিল তাই কষ্ট সত্ত্বেও মেয়েকে গো-কার্ট কিনে দেন তিনি। আর তারপর থেকেই টান্‌য়ার নতুন জীবনের পর্ব শুরু হয়। ডনিব্রুক  মোটরস্পোর্ট পার্কে শুরু হয় তার প্র্যাক্টিস। এর কিছুদিন পরে এই পার্কে গো-কার্টের ট্র্যাকের পাশে যুক্ত হয় তিনটে মোটোক্রস ট্র্যাক। ছোট্ট তানিয়ার সাথে পরিচয় ঘটে মোটোক্রস-এর। তারপর থেকেই চার চাকা ছেড়ে তার মন মজে দু-চাকায়মাত্র ৬ বছর বয়সে জিম্বাবওয়ের ইতিহাসে প্রথম মহিলা মোটোক্রস চ্যাম্পিয়ন হয় সে। তার বাবা মোটক্রসের কিংবদন্তি স্টেফি বাউ-র কাছে তানিয়াকে নিয়ে যান যাতে তার চলার পথে একজন উপযুক্ত মেন্টর সে পায়। সময়ের সাথে সাথে আরো অনেক শিরোপা যুক্ত হয় তার খ্যাতির মুকুটে। জিম্বাবোয়ের  জুনিয়র স্পোর্টসওম্যান অফ দ্য ইয়ার এবং জুনিয়র স্পোর্টসপারসন অফ দ্য ইয়ার ২০১৫-র শিরোপাও পায় সে।  

                       টান্‌য়া বলে যে জিম্বাবোয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তার এই অনুদানের পিছনের মূল উদ্দেশ্যটি হল তার সম্প্রদায়কে কিছু ফিরিয়ে দেওয়া, সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। একজন কন্যা সন্তান হিসাবে তাদের সম্প্রদায়ে পড়াশুনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখা হয় অনেককেই, নিজেদের অনুরাগ থাকা সত্ত্বেও। আর্থিক এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত কারণে তাকেও অনেক সময় দৌড় প্রশিক্ষণ বাতিল করতে হয়েছে, তাই তার কাছে এটা খুবই বেদনাদায়ক, যে যেটা পছন্দ করে এবং করতে চায় সেখানে লিঙ্গভেদ, ক্ষমতভেদ না থাকাই উচিত বলে মনে করে সে। তাছাড়া শিক্ষা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যারা স্বেচ্ছায় পড়াশুনা করতে চায় তাদের জন্য স্বেচ্ছায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই 'টিনেজ আইকন' মুজিন্দা জিম্বাবোয়ের মোটোক্রস ইতিহাসের প্রথম মহিলা যে চ্যাম্পিয়নশিপ রেস জয়ের খেতাব অর্জন করেছে। জুলাই ২০১৮তে, তানিয়াকে ১০ জন সেরা আফ্রিকান মহিলা ট্রেলব্লেজার অ্যাথলিটের মধ্যে একজন হিসাবে সম্মানিত করাও হয়। 

  

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...