আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনা করতে পারেননা। দারিদ্রতা বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের স্বপ্নের পথে। যদিও সরকার অনেক চেষ্টা করছে যাতে কেউ স্কুল না ছাড়ে, কিন্তু এক একজনের বাড়ির পরিস্থিতি এমন হয়ে যায়, যে তারা বাধ্য হয় স্কুল ছাড়তে। এমনই অবস্থা হয়েছিল, সুন্দরবনের জয়নগরের গড়দেওয়ানির ঠাকুরচকের গাজী জালালউদ্দিনের। মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়বার পর, তাঁর বাবা বলেছিলেন, পড়াশোনা হল বড়লোকদের জিনিস, গরিবদের পড়াশোনা করা মানায় না। রোজগার করতে হবে। ভগ্নহৃদয় নিয়ে জালাল গ্রাম থেকে কলকাতায় এসে দিনের পর দিন ফুটপাথে থেকেছেন, একবেলা খাবার খেয়ে থেকেছেন। তারপর ট্যাক্সি চালানো শুরু করলে, আস্তে আস্তে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করলেন। তিনি প্রথম থেকেই গরিব স্কুল পড়ুয়াদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, যাতে কেউ অনটনের জন্য পড়া ছেড়ে না দেয়, তাই নিজের রোজগার শুরু হতেই গরিব পড়ুয়াদের বই-খাতা কিনে দিতেন।
তারপর নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন, গ্রামে স্কুল তৈরী করবেন সিদ্ধান্ত নিলেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ট্যাক্সি চালানোর পাশাপাশি নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করলেন। কখনও নিজের যাত্রীদের কাছ থেকে, কখনও নিজের ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে অফিস যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করা শুরু করলেন। এইভাবেই গড়ে তুললেন নিজের গ্রামে তিন তিনটি স্কুল। একটি অনাথ শিশুদের জন্য, একটি ফ্রি প্রাইমারি ও একটি আবাসিক স্কুল গড়ে তুললেন সুন্দরবনে। এর জন্য তাঁর নিজের পৈতৃক ভিটের জায়গাও ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে এই পুরো কর্মকান্ডের জন্য স্বীকৃতি হিসেবে ডাক পেয়েছেন একটি বিশেষ টেলিভিশন শো'তে। যেখান থেকে তিনি ২৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছেন। কিন্তু তাও এখনও নিজের জায়গা ভুলে যাননি জালাল। এখনও তিনি নিজের স্কুলের জন্য টাকা সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন।
নিজের এক ছেলে এমএ পাশ করেছে এবং ছোট ছেলে স্নাতক। পুরো পরিবারই স্কুল গড়ার কাজে সাহায্য করে জালালকে। আগামী বছর জালালের স্কুল থেকে কয়েকজন পড়ুয়া মাধ্যমিক দেবে। যদিও সরকারিভাবে কোনো সাহায্য পাননি, তাতেও কোনো আক্ষেপ নেই জালাল-এর। এভাবেই তিনি অন্যের স্বপ্ন সাকার করে নিজের স্বপ্ন সফল হবার বাসনা পূরণ করেন।