বনের পাখি মনের আনন্দে ছাড়া পেয়ে সকলকে কাঁদিয়ে গেলেন

"চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে,

নিও না নিও না সরায়ে"...

সকলকে কাছে টেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নিজেই সরিয়ে নিলেন নিজেকে ধীর গতিতে। অসময়ে কাঁদিয়ে গেলেন তামাম চলচ্চিত্রপ্রেমী তথা বন্ধুবর্গকে।

সরল ও নিষ্পাপ গলা এবং নিষ্পাপ চাহনির যে আবেশ এই গানের মধ্যে দিয়ে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আশির দশকে, তা যেন আজও অম্লান। নিজের সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম ছবি থেকেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছিল 'সাহেব'। বিশেষ করে বাড়ির মা-বোনেদের একেবারে কাছের, পাশের ছেলেটি হয়ে উঠেছিল সাহেব। সেখানকার দামাল ছেলে যেন 'কেদারে'র ঠিক বিপরিত। পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আর। জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন এই দুই ছবিতে।

                  তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলি বার বারই বাংলার তথাকথিত হিরোইজম ভেঙে স্বাভাবিক সারল্যের মিশেলে হয়ে উঠেছিল নিজের বাড়ির ছেলের মত। যার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলা নয়, নিজের মত করে ভাবা যায় বেশি। এই স্বাভাবিক সারল্যকেই নিজের সিগনেচার করে ফেলেছিলেন তাপস পাল। হয়ে উঠেছিলেন অভিনেতা থেকে স্টার। তরুণ মজুমদারের হাত ধরে যাঁর অভিনয় জীবনে পদার্পন, পরিবর্তীকালে তেমনি কাজ করেছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর 'উত্তরা', 'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান'-এও। মুম্বইয়ে ছবি করেছেন মাধুরী দীক্ষিতের বিপরিতে। মহুয়া রায়চৌধুরীর সঙ্গে ছবি শুরু করলেও পরে বাংলা ছবিতে তৈরী হয় নতুন তাপস-দেবশ্রী জুটি। পরিবর্তীকালে আবার সফল জুটি বেঁধে বেশ কিছু ছবি উপহার দেন শতাব্দী রায়ের সঙ্গে। পরবর্তীকালে ইন্দ্রানী হালদার থেকে রচনা ব্যানার্জীর মত অভিনেত্রীদের সঙ্গেও প্রচুর ছবি হিট দিয়েছেন তাপস। 'দাদার কীর্তি', 'সাহেব', 'ভালোবাসা ভালোবাসা' ছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য বক্স অফিস হিট ছবিগুলি হল গুরুদক্ষিণা, অবোধ, সুরের আকাশে, অর্পণ, সুরের সাথী, নয়নমণি, চোখের আলোয়, তবু মনে রেখো, জীবন সঙ্গী, অনুরাগ, পারাবত প্রিয়া প্রভৃতি।

               রুপোলি জগৎ থেকে সরে এসে ২০০১ সালে তিনি নতুন জগতে পা রাখেন। কিন্তু অভিনয়ের গুণে অভিনেতা হিসেবেই তিনি সমাদৃত। তবে অসুস্থতায় ভুগছিলেন বেশ কিছুদিন থেকেই। জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে তিনি যেন বলতে চাইলেন-

"হারে রেরে রেরে আমায় ছেড়ে দেরে দেরে

যেমন ছাড়া বনের পাখি মনের আনন্দে রে"...

 

  • ট্যাগ

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...