বাংলার তাঁতের কাপড়ের কদর সেই অতীতের সময় থেকেই| পঞ্চদশ শতাব্দী থেকেই বাংলার শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ির উল্লেখ পাওয়া যায়| মুঘল, ব্রিটিশ আমল পেরিয়ে এই একবিংশ শতকেও তাঁত নিজ মহিমায় সমান উজ্জ্বল|শান্তিপুরী, ফুলিয়া, টাঙ্গাইল, জামদানি, বালুচরী, ধনেখালি, প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার তাঁতের শাড়িতে সেজে উঠেছেন দিদিমা-ঠাকুমা থেকে মা-কাকিমারা| এবং আজকের অতি আধুনিক মহিলারাও যখন তাঁতের শাড়ি পরেন, তখন সেই ঐতিহ্যকেই বহন করেন| কিন্তু যারা নিজেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই শাড়ির ঐতিহ্যকে বজায় রেখেছেন, সেই তাঁতিরাই বঞ্চিত থেকে যান| তারা তাদের কাজের সঠিক মূল্য পান না| আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া এই শাড়ি তাঁতিদের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনা| সেই ছবিই পাল্টানোর চেষ্টা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের অধীন কলকাতার তাঁতি সেবা কেন্দ্র(ওয়েভার্স সার্ভিস সেন্টার)| যেখানে রাজ্যের কয়েকশো তাঁতি ও ১৫ জন ডিজাইনারকে এক ছাতার তলায় এনে তৈরী করা হলো একটি মঞ্চ, ওয়েভার্স এন্ড ডিজাইনার্স|
এখানে তৈরী কাপড় বাজারে বিক্রি হলে ১৫% মুনাফা সরাসরি পাবেন তাঁতি নিজে, বাকি ১০% যাবে তাঁদের সমবায় সংগঠনের একাউন্টে| পণ্যে লেখা থাকবে তাঁতির নাম| মুনাফার আর একটা অংশও পাবেন ডিজাইনাররা| উইভার্স এন্ড ডিজাইনার্সের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের তৈরী পোশাকে থাকবে বারকোড| সেখানে দেওয়া থাকবে তাঁতিদের নাম| কোন অঞ্চলে বোনা হয়েছে, এবং ১০০ শতাংশই হাতে বোনা কিনা, তারও উল্লেখ থাকবে| পোষাক ডিজাইনার সন্তোষ গুপ্ত, সৌমিত্র মন্ডল, সানন্দা বিশ্বাস তাঁতিদের সঙ্গে কাজ করছেন| তাঁতি সেবা কেন্দ্রের তরফে বলা হয়েছে, তাঁতিদের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি ডিজাইনারদের সঙ্গে তাদের সরাসরি ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরী করার লক্ষ্যেই এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে এমন একটি মঞ্চ গড়া হয়েছে| এর পরে ডিজাইনার ও তাঁতিদের নিয়ে কোম্পানি আইনে পৃথক সংস্থাও তৈরী হবে|