এক দিকে খবরের কাগজ পাড়া, অন্য দিকে বো ব্যারক। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন থেকে পেরিয়ে বড় রাস্তায় পড়লেই রাস্তা হাঁটার হাতছানি। শীতকালে এ এক আশ্চর্য ভালবাসা। খামোখা খেয়ালে রাস্তা হাঁটতে যারা ভালবাসে তারা মাঝে মাঝেই এভাবে বেরিয়ে পড়ে শহর দেখতে। হাতে কাজ না থাকলে তো কথাই নেই। পিঠে রুকস্যাক না থাকুক তিনশো বছরের পুরনো শহরের অলি-গলিও বড় রঙ্গিন।
খবরের কাগজ, ম্যাগাজিনের গন্ধ, রেঁস্তোরার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখ চলে যাবেই এক চায়ের দোকানে। ভিড় জমজমাট। চায়ের ধোঁয়ায় ঝাপসা দোকান আর দোকানির মুখও। তবে এ আর এমন কি কিন্তু তার সব বিশেষত্ব দোকানের একেবারে সামনে রাখা দৈত্যের মতো তামার পাত্রটিতে।
কী আছে তার ভিতর?
টগবগিয়ে ফুটছে চা। দুধ-চায়ের গন্ধ নেশায় নড়তে দেয় না মানুষকে। এ পাত্রের নাম সামোভার। ৯৯ বছর ধরে এই শহরের সঙ্গী।
অফিস পাড়ার বেন্টিক স্ট্রিটের বিখ্যাত চায়ের দোকান ‘ট্যাঙ্কি টি’। অনেকের কাছে এই দোকান আবার ‘বুড়োর চায়ের দোকান’ নামেও চেনা। কেউ বলেন ‘ধোনির চা’ । আশ্চর্য হলেও এই দোকানের মালিকের নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি।
রাস্তার ওপর ছোট্ট দোকান। টেবিল, বেঞ্চ কিচ্ছু নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খেতে হয়। সেটাই চল হয়ে গিয়েছে। চায়ের ভাঁড় হাতে নিয়ে দিব্যি গল্প করা যায়।
স্পেশ্যাল টি, হাফ টি আর অর্ডিনারী-তিন ধরনের চা পাওয়া যায়। তামার সামোভারে সারাদিন ধরে তৈরী হয় চা। কলকাতা শহরে এ অতি প্রাচীন দৃশ্য। ১৯২০ সালে এই সামোভার কিনেছিলেন জুহুরি সিং। উত্তরপ্রদেশ থেকে শহরে এসে সংস্থানের জন্য শুরু করেন এই দোকান। অফিস পাড়ার ব্যস্ততার সঙ্গে পাল্লা দিতেই কিনেছিলেন সামোভার। বেশি চায়ের জন্য চাই বড় পাত্র- তাই সামোভার। দেখা যায় এই সামোভার-ই হয়ে ওঠে দোকানের ‘সিগনেচার’।
রাশিয়ায় আঠারো শতকে সামোভারের চল শুরু হয়। পরে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। দক্ষিণ ভারত, বিশেষত কাশ্মীরে বহুলভাবে দেখা যায়।
চা না কফি’র ভাব-ঝগড়ার দিনেও অফিস পাড়ার এই ট্যাঙ্কি চায়ের দোকানে দিনে গড়ে প্রায় হাজার কাপ চা তৈরি হয়। সারাদিন ভিড় লেগে থাকে, কিন্তু ঘড়ির কাঁটা বিকেল ছুঁলেই দোকানির ব্যস্ততা বেড়ে যায়। অফিস পাড়া আর চাঁদনি চকে নিত্য যাওয়া আসা অথচ ‘ধোনির দোকানের নাম শোনেনি- এ শহরে বোধহয় এমন মানুষ নেই।
তথ্য ঋণঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
দ্য বেটার ইন্ডিয়া