উত্তর কলকাতার বেশ পরিচিত রাস্তা ভি.আই.পি রোড ধরে কলকাতা বিমানবন্দরের দিকে যেতে বেশ কিছুটা আগে চিনার পার্ক- বেশ জনবহুল ও পরিচিত জায়গা। এই চিনার পার্কের মুখের একটা চায়ের দোকানের প্রত্যেকদিনের ভিড় বেশ চোখে পড়ার মতো। এই ভিড় কিন্তু বিকেল থেকে সকাল পর্যন্ত নিরলস ভাবেই থাকে। আবার চা পিপাসুদের সেই চা খেয়ে পরিতৃপ্তির অভিব্যক্তি বেশ লক্ষ্যণীয়। আসল কথা হলো বাঙালির চা এর প্রতি দুর্বলতা নতুন নয়! তবে সেই চা-এ যদি খানিক নতুনত্ব আসে তা মন্দ কি! এমনটাই হয়েছে এই দোকানে। দুধ চা, লিকার চা, লেবু চা আরো কত চা-ই তো খেয়েছেন, কিন্তু চা তাও আবার তন্দুরি! এমন খেয়েছেন! না খেলে এখানেই আসুন। ইচ্ছে পূর্ণ হয়ে যাবে।
তবে এই তন্দুরি চা এর জন্ম পুনেতে। পুনের বাসিন্দা বিজ্ঞানের স্নাতক অমল দিলীপ রাজদেও’র মস্তিষ্ক প্রসূত। পুনেতে 'চায় লা' বলে তন্দুরি টি শপ-ও আছে তাঁর। মুম্বাই-পুনে’তে তন্দুরি চা-এর বেশ রমরমা।
এবার আসি কলকাতার ‘তন্দুর চা ‘ স্পেশালিস্ট আকিব মন্ডলের দোকানে। গনগনে লাল হাঁড়িতে গরম চা দিয়ে টগবগ করে ফুটিয়ে নাড়িয়ে-চাড়িয়ে সামনে সাজানো ভাঁড়ে কেশর আর চকোলেট গুঁড়ো সহযোগে পরিবেশিত হচ্ছে এই বাহারি চা। বানানোর পদ্ধতি বেশ মজার, তবে আরো মজার আকিবের ব্যবসায়িক কায়দা। এই চা এর জন্ম তার জানা নেই তা বলাই বাহুল্য, তবে নতুন এক তথ্য সে খাড়া করেছে , তা হলো এই চা নাকি টার্কি মানে খোদ তুরস্কের চা। আর তাতেও কিছু খদ্দের মজেছেন। যদিও ক্রেতাকুল তথ্যে নয় স্বাদে বিশ্বাসী।
কলকাতার এই তন্দুর টি শপে চা বানানোর পদ্ধতি-টা মোটামুটি এরকম – প্রথমে দুধ, খোয়া, মাখন, কিছু 'সিক্রেট স্পাইস' দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে চা-এর দুধ তৈরি হয়। তারপর সেই দুধে চা বানিয়ে রাখা হয়। সেই চা-কে তন্দুর করার জন্য মাটির হাঁড়ির মতো কাপ উনুনে ঢুকিয়ে পুড়িয়ে নেওয়া হয় টকটকে লাল করে। তারপর পিতলের প্রদীপের মতো বিশেষ পাত্রের মাঝখানে সেঁকা ভাঁড় রেখে চায়ের পাত্র থেকে চা ঢালা হয় তাতে। সেই চা গনগনে গরম পাত্রে তারপর টগবগ করে ফুটে ওঠে। সেটাকে নাড়াচাড়া করে ঢেলে দেওয়া হয় অন্য এক ভাঁড়ে। এরপর ওপরে কেশর আর অল্প চকোলেটের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলেই রেডি বহু প্রতীক্ষিত তন্দুর চা।
ব্যাস ..চা এ এবার সটান চুমুক দেওয়ার পালা । স্বাদে অনবদ্য, সাধারণ চায়ের থেকে খানিক আলাদা, কেশর আর চকোলেট থাকায় অন্যরকম ফ্লেভার আছে , তবে মিষ্টিটা খানিক বেশি । দাম ৩০ টাকা প্রতি কাপ । তবে মাটির সোঁদা গন্ধ পাবেন। প্রতিদিন বিকেল থেকে সারারাত খোলা থাকে এই দোকান। তবে সাধারণ দুধ চা-ও পাওয়া যায় । দোকান ছোট হলেও, ভিতরে ছোট্ট ঘরে বসার ব্যবস্থা আছে । চা এর সাথে টা চাইলেও নিরাশ হবেন না কারণ রেডি টু ফ্রাই কাবাব, পকৌড়া এসব পাওয়া যায় । স্বাস্থ্যের দিক থেকে পুষ্টিকর এবং রোজ এই চা খাওয়া খুব স্বাস্থ্যকর। তাও শীতকালে জম্পেশ তন্দুরি চা হাইলি রেকোমেন্ডেড বলাই চলে। আর স্বাস্থ্যের কথা বাদ দিয়ে এই এক্সপেরিমেন্টাল চা এ চুমুক দিলে আপনি নিরাশ হবেন না তা নিশ্চিত।