সেজে উঠছে টালা ট্যাঙ্ক

কলকাতার বুকে জল সরবরাহের অন্যতম ঠিকানা টালা ট্যাঙ্ক। এই টালা ট্যাঙ্কের উন্নতির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মকে ইতিমধ্যেই এই ট্যাঙ্কের বাইরের ও ভিতরের সাজানোর কাজ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, মোট ১.৩ লক্ষ কোটি পেন্ট লাগবে সম্পূর্ণ টালা ট্যাঙ্কটি সাজিয়ে তোলার জন্য। টালা ট্যাঙ্কটি মাইল্ড স্টিল দ্বারা গঠিত হয়েছিল ব্রিটিশরাজের সময়ে।ট্যাঙ্কটি কলকাতায় জল সরবরাহের অন্যতম লাইফলাইন। এই ট্যাঙ্কে প্রতিনিয়ত যে পরিস্রুত জল জমা করা থাকে তার পরিমান হলো ৩.৬ কোটি লিটার। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ এটির সংস্কার করা হচ্ছেনা। দিনের পর দিন পানীয় জল সরবরাহ করতে গেলে সম্পূর্ণভাবে পরিশ্রুত হওয়া খুব জরুরি। তাই ট্যাঙ্কের ভেতরের অংশ পুরোটা রং করে ট্যাঙ্কটির সংস্কার সাধনের পরিকল্পনা নেওয়ার পাশাপাশি তার জলের পরিশ্রুতির ব্যাপারেও খেয়াল রাখা হয়েছে। ট্যাঙ্কের ভিতরের অংশের রংটি ফুড গ্রেড রং দিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ট্যাঙ্কের অভ্যন্তরটি সম্পূর্ণ রং করতে মোট ৪৫,০০০ লিটার ফুড গ্রেড রং প্রয়োজন।

কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের এক অধিকর্তার কথায়, ট্যাঙ্কের যেই চেম্বার জলের সংস্পর্শে থাকছে তাকে ফুড গ্রেড রং দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। ট্যাঙ্কের অভ্যন্তরে মোট ৪টি এরকম চেম্বার রয়েছে। পলতা থেকে সোজাসুজি এই পরিস্রুত জল এসে জমা হয় টালা ট্যাঙ্কে। ট্যাঙ্কে জমা হওয়ার পর সেই জল উত্তর ও মধ্য কলকতার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রেরণ করা হয়। ট্যাঙ্কের মধ্যে জমা জলকে দূষণমুক্ত রাখতে এই ফুড গ্রেড রঙের কথা ভাবা হচ্ছে। কেএমসির ওয়াটার সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তার কথায়, এই রঙের দাম সাধারণ রঙের তুলনায় অনেকটা বেশি হলেও জনসাধারণের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে বেশি দামেই ফুড গ্রেড রং কেনার কথা ভাবা হচ্ছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মকে এই রং তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই রং বেহালার কাছাকাছি একটি ল্যাবে টেস্টের পর যদি সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে সেই সংস্থাকে বাকি রং তৈরির অর্ডার দেবেন তারা।

কেএমসির ওয়াটার সাপ্লাই ডিপার্মেন্টের এক কর্মকর্তার কথায়, এই ট্যাঙ্কের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বেশ কিছুটা সময় লাগবে। এই ট্যাঙ্কের বাইরের অংশ রং করার থেকে ভিতরের অংশ রং করার কাজ অনেকটাই বেশি কঠিন এবং এই ট্যাঙ্কের পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ার মধ্যে এটিই অত্যাবশ্যক। এই ট্যাঙ্কের রেস্টোরেশনের কাজ শুরু করার আগে তামিলনাড়ুর সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে এক্সপার্টদের আনা হচ্ছে কলকাতায়। তারাই কলকাতায় এসে এই ট্যাঙ্কের বর্তমান অবস্থার কথা জানাবেন। সূত্রের খবর, চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই প্রথম চেম্বার রং করার কাজ শেষ করা হবে। এই সময় অত্যধিক আর্দ্রতা এবং তাপের কারণে চেম্বারের ভিতরে ইঞ্জিনিয়ার এবং মিস্ত্রিরা যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়ে তার জন্য বিশেষ যন্ত্র আনার কথাও হচ্ছে।

এই ট্যাঙ্কের রং করার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় মেহগনি কাঠের তৈরী যে ব্লকগুলো রয়েছে তার পরিবর্তন করার কথাও  ভাবা হচ্ছে। ট্যাঙ্কের বিভিন্ন জায়গায় পিলার আর সুপার স্ট্রাকচারের মাঝে রয়েছে এই মেহগনি কাঠের আস্তরণ। এই কাঠের আস্তরণের কাজ ছিল প্রচন্ড ঝড় বা হাওয়ার হাত থেকে এই ট্যাঙ্ককে রক্ষা করা। শতাব্দী প্রাচীন এই টালা ট্যাঙ্কের পুনঃনির্মান পর্ব খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হবে এটাই এখন আশা সকলের।   

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...