সোহিনী-অনির্বাণ ডেট করছেন, এটা এখন টলিপাড়ার বাসি খবর। কিন্তু সেই জুটি যে পর্দায় এমন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে তা বোধহয় দর্শকদের জানা ছিল না। ‘ভূমিকন্যা’ সিরিয়ালে তাঁদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সোহিনী- অনির্বাণ বিস্ফোরণ ঘটালেন ‘মানভঞ্জনে’।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ছোটগল্প ‘মানভঞ্জন’। সেই গল্পকেই পর্দায় নিয়ে এলেন পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরি। ‘হইচই’ এর ওয়েব সিরিজে। এই প্রথম হইচইয়ের কোনও ওয়েব সিরিজে দেখা গেল সোহিনীকে।
রবীন্দ্রনাথের গল্পে বারবার উঠে এসেছে নারীর জেদ, দ্বন্দ্ব, মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই । মানভঞ্জন গল্পটিও সেরকমই। ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সোহিনী সরকার এবং অমৃতা চট্টোপাধ্যায়।
প্রেম কিংবা অপ্রেম সব ফ্রেমেই দর্শকদের নজর দুজনের ওপর আটকে থেকেছে। সঙ্গে রয়েছে সাহসী সংলাপ। কিছু কিছু সংলাপ তো সপাট থাপ্পড়ের মতো। রেশ রেখে যায় বহুক্ষণ।
রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প নিয়ে কাজ করা সহজ নয়। এই ওয়েব সিরিজে পরিচালক সেই ‘হার্ডল’ সাফল্যের সঙ্গে পার করেছেন তা বলা যেতেই পারে।
অন্দরবাসিনী গিরিবালা। বাড়ির ছাদ, বারান্দা আর চিকের আড়ালে দাসদাসী নিয়ে তার জগত। গিরিবালার রূপ নজরে আসে না স্বামী গোপীনাথের। তার মন জুড়ে লবঙ্গ নামের এক নটী। সে থিয়েটারে অভিনয় করে। শহুরে মানুষের বিনোদনের খোরাক সে। লবঙ্গের টানে দর্শক আসে। হল ভরে। মুগ্ধ পুরুষ পতঙ্গের মত ঝাঁপ দেয় লবঙ্গের আগুনে। বিবাহিত পুরুষের প্রেম ছিনিয়ে নিতে জানে সে। প্রতিরাতের আলো, উচ্ছ্বাস, হাততালির আড়ালে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো লবঙ্গ মনের মধ্যে পুষে রাখে সংসারের সাধ। লালন করে নিজের ঘরের আর্তি। আর তাই গোপীনাথের প্রলোভনে এককথায় মঞ্চ ছেড়ে, শহর ছেড়ে নৌকাবিহারে চলে যেতে পারে সে।
এক সময় গোপীনাথ বাড়ি ছেড়ে চলে যায় লবঙ্গকে বিয়ে করার জন্য। গিরিবালা ফিরে যায় তার বাপের বাড়ি।
এখান থেকে একটা অন্য লড়াই শুরু হয়। সে লড়াই গিরিবালার নিজের পরিচয় তৈরির লড়াই। পুরুষতন্ত্রের আঘাত সইতে সইতে একদিন সে তার চারপাশের দেওয়ালগুলোকে ভেঙ্গে ফেলে। স্বামীর অবহেলার জবাব দিতে হাতিয়ার করে মঞ্চকে। হল ভর্তি দর্শক, এনকোর ধ্বনি, আলোর নীচে রঙিন উচ্ছ্বাস সব ধরা দেয় গিরিবালার পদতলে।
গিরিবালা চরিত্রের ট্র্যাজেডি, অসহায়তা, সংসারে অবহেলা পাওয়া নারীর যন্ত্রণা যথাযথ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সোহিনী। কঠিন ছিল লবঙ্গ চরিত্র। একদিকে ‘নায়িকার ট্যানটার্ম’, মেজাজ, অহমিকা, অন্যদিকে মঞ্চের আলোর অন্তরালে নটী জীবনের হতাশা এই দুই দিককেই সফল ভাবে উপস্থাপিত করতে পেরেছেন অমৃতা চট্টোপাধ্যায়।
'লম্পট গোপীনাথ' হিসেবে অনির্বাণ ভট্টাচার্য ঊনবিংশ শতকের ‘বাবু’ শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন। সোহিনীর সঙ্গে প্রেমের দৃশ্যে যতটা সাবলীল ঠিক ততটাই অত্যাচারী স্বামী বা উন্মাদ দর্শক হিসেবেও।
ছবির ক্যামেরা, দৃশ্যায়ন, মিউজিক- কোথাও তাল কাটে না দেখতে দেখতে। আলাদা করে বলতেই হবে কস্টিউমের কথা। ‘পিরিয়ড টেক্সট’ নিয়ে কাজ করতে গেলে 'পোষাক' একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সেই সময়টাকে ধরার জন্য। রবিঠাকুরের ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’ মানভঞ্জনে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বেশ ভাল। কোরিওগ্রাফিত আরও একটু প্রচেষ্টা থাকলে ভালই হত।
‘মানভঞ্জন’-এর স্ট্রিমিং চলছে হইচই’তে।