মহাবিশ্বের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে নানা গ্রহ নক্ষত্র। আর সেই গ্রহ নক্ষত্রের অভ্যন্তরে কি কি রয়েছে তা জানার জন্য মহাকাশবিজ্ঞানীদের আগ্রহের শেষ নেই। আর সেই আগ্রহের বশেই খোঁজ চলছে মহাকাশে। খোঁজ চালাতে চালাতে মাঝে মাঝেই পাওয়া যাচ্ছে নানা অদ্ভুত জিনিসের খোঁজ। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেইসব জিনিস মাঝে মাঝে আমাদের বেশ চমকে দেয়। এর আগে চাঁদে জল থাকা বা মঙ্গল গ্রহে খনিজের সন্ধান বিজ্ঞানমহলে ঝড় তোলে।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের চমকে দিয়ে বৃহস্পতি গ্রহে খোঁজ পাওয়া গেছে খাবার নুনের। বৃহস্পতিতে নুনের অস্তিত্ব দেখে বিজ্ঞানীদের অনেকেরই ধারণা সেখানে সামুদ্রিক জলের কোনো না কোনো ব্যবস্থা তো আছেই। বৃহস্পতি গ্রহের অনেকগুলি চাঁদের মধ্যে ইউরোপায় সম্প্রতি মিলেছে নুনের খোঁজ। আর তার সাথেই এটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে পৃথিবীর মতো বৃহস্পতির এই গ্রহটিও ভাসছে সমুদ্রের জলে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আগেই জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতির এই গ্রহটি অনেকটা তালশাঁসের মতো। শক্ত খোলসের মধ্যেই রয়েছে বিশাল বিশাল সাগর ও মহাসাগর। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই সাগর এবং মহাসাগরগুলি আসলে কিছুপ্রকার তরলে পূর্ণ। কিন্তু কি সেই তরল যা জানা সম্ভব হয়নি। অবশেষে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এই তরলগুলি আসলে মিথেন বা ইথেনের মতো তরল। সম্প্রতি বৃহস্পতির উপগ্রহে নুন বা সোডিয়াম ক্লোরাইডের খোঁজ মেলায় অবশেষে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন যে বৃহস্পতির উপগ্রহে থাকা সাগর মহাসাগর আসলে জলেই পূর্ণ। জানা গেছে, এই সাগর বা মহাসাগরগুলিও আমাদের পৃথিবীর মতোই লবনাক্ত জলেই পূর্ণ। কারণ আমাদের পৃথিবীর বুকে থাকা সাগর মহাসাগরেও লবণের পরিমান যথেষ্ট পরিমানে বেশি।
দৃশ্যমান আলোক বর্ণালীর বিশ্লেষণের ফলেই ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা এবং পাসাডেনায় নাসার জেট প্রপালসান ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা একত্রে খোঁজখবর করার সময়েই আবিষ্কার করেন ইউরোপার পিঠে যে জায়গাটিকে 'তারা রেজিও' বলা হয় সেই জায়গাটিতে অবস্থান করছে বিশেষ ধরণের হলুদ ছোপ। প্রথমে অনিশ্চয়তা থাকলেও পরে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন সেই হলুদ ছোপ আসলে সোডিয়াম ক্লোরাইডের অবস্থানের ফলেই সৃষ্ট। সম্প্রতি এই গবেষণার কথা প্রকাশিত হয়েছে 'সায়েন্স অ্যাডভান্স' পত্রিকায়।
মহাকাশযান ভয়জার এর আগেই নুনের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছুটা আভাস দিয়েছিলো। সেই থেকেই নুনের আশায় খোঁজ চালাতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই নুনের অস্তিত্বই প্রমান করে ইউরোপায় জলের অস্তিত্বের কথা। জানা গেছে, সাগর মহাসাগরগুলিতে জল জমে বরফে পরিণত হয়েছে। আর সেই বরফ এমনকিছু বেশি দিনের নয়। মাত্র কয়েকশো কোটি বছরের পুরোনো। সেই বরফের স্তর ধীরে ধীরে আবার নিজের আকারও বদলাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই বদলে যাওয়া বরফ জানান দিচ্ছে উপগ্রহটি আজও সজীব রয়েছে। যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় জিওলজিক্যালি অ্যাক্টিভ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এর আগে শুধুমাত্র স্পেস টেলিস্কোপ দিয়েই খোঁজখবর চালানো হয়েছিল। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তিযুক্ত স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করে বৃহস্পতির উপগ্রহে নুনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া আরও সহজ হয়েছে।