নিসর্গের কবি সিল্ভিয়া জীবন খুঁজেছিলেন আত্মহননে
অবসাদ আর বিষণ্ণতা তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে ডানা মেলেছে।
তাঁর কলম মানবিক আবেগের স্বীকারোক্তি। তাঁর কলম যন্ত্রণার মলম। তিনি গত শতকের মধ্য গগনে এক শুকতারা। নিজের আলোর ছটায় আজও সমান প্রাসঙ্গিক।
মাত্র তিরিশ বছরেই দাড়ি টেনেছেন কবি জীবনে। আঘাতে, প্রেমে, দুঃখে, শূন্যতায়।
সিলভিয়া প্লাথ...
‘জীবনের শারীরিক এবং মানসিক অনুভূতিকে, সমস্ত রূপ-রস-গন্ধ আর বৈচিত্র্যকে যাপন করতে চাই। অথচ কি তীব্র সীমাবদ্ধতা!’
একজন কবি এইভাবেই তো দেখতে চাইবেন জীবনকে! এই আকুতিই কবির অন্তরাত্মা কে মৃত্যুর হাতে তুলে দিয়েছে।
জন্ম ১৯৩২ এর ২৭ অক্টোবর। মাত্র আট বছর বয়সেই পিতৃহীন। বিশ্বাস হারিয়েছেন ঈশ্বরে। সেই থেকেই শুরু দুঃখের সঙ্গে যাপন।
জীবন তাঁর কাছে ‘স্বচ্ছ কাঁচের বোতলে বন্দী জাহাজের মতো । সুন্দর, ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, বস্তাপচা। নজরকাড়া, সাদা এক দুরন্ত পুরাণকথা ‘।
প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় মাত্র আট বছর বয়সে। বোস্টন হেরল্ড পত্রিকার শিশু শাখায়।
মেধাবৃত্তিতেই শিক্ষালাভ। কলেজে পড়ার সময় মন ঠোকা দেয় অন্য এক কবির মনে। টেড হিউস।
প্রথম প্রেম। সেই অনুভূতি আঁকড়েই সামনের পথ হাঁটতে চেয়েছেন।একে অপরের হাতও ধরেছেন। কিন্তু সেই জোড় সময়ের সঙ্গে হয়েছে আলঘা।
১৯৫৬ তে তারা আবদ্ধ হন বিবাহ বন্ধনে।আবেগী সিলিভিয়া ভেবেছিলেন স্নেহের ছায়া পেলেন।তবে পরকীয়ার ঝড়ে সেই ছায়া আর বেশী দিন মাথার উপর থাকেনি।
টেড অন্য সম্পর্কে ঝুঁকে পড়ে। সিল্ভিয়া শুরু করেন আলাদা থাকা। সেই শুরু মৃত্যুর সঙ্গে দাবা।
ছোটবেলার বিষণ্ণতা অন্ধকার হয়ে গ্রাস করে আবার। আশ্রয় দেয় কবিতা। ভালবাসায় প্রতারণা থেকে মুক্তি দিতে পারে শব্দের আঁকিবুঁকি। লিখলেন, ‘সারা পৃথিবী আমার পায়ের নিচে। ফেটে চৌচির। যেন পাকা রসালো তরমুজের লালিমা।’
ঘুমের ওষুধ খেলেন।তবুও মৃত্যু কথা রাখল না।অচেতন থাকলেন প্রায় তিন দিন।তারপর নারী বাদী কবির নতুন ঠিকানা হল মানসিক হাসপাতালে।ছয় মাস কাটালেন সেখানে।
আবার কলম ধরলেন।আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘দ্য বেল জার’। তাঁর বিখ্যাত বইগুলোর একটি। ঘরে দুই বছর আর নয় মাসের দুইটি সন্তান। ঠিকমত খাওয়ানোর কিছু নেই। অতীতের হতাশায় জর্জরিত। আবার চেষ্টা চালান আত্মহত্যার । কখনও গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট কিংবা কখনও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে।
১৯৬৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। ভোর সাড়ে চার টা। গৃহকর্ত্রী ও বাচ্চাদের দেখাশোনার কাজে নিযুক্ত নার্স এসে দেখলেন ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। পরে আরেকজন গৃহকর্মীর সাহায্যে দরজা ভেঙে ঢোকা হল।
রান্নাঘরের বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস মুখে নিয়ে মৃত কবি। শিশুদের সিলভিয়া অন্য রুমে নিরাপদে রেখেছিলেন।
মৃত্যু নিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘Dying is an art, like everything else. I do it exceptionally well.’